কল্যাণ-অকল্যাণের উভয়ে পেঁচা

নিঃসঙ্গ ও নিশাচর জীবনের প্রতীক পেঁচা। এখনো রাতে হুতুম পেঁচা ডাকলে তাকে গৃহস্তের অকল্যাণ হিসেবে ধরা হয় মফস্বল অঞ্চলে। তবে লক্ষ্মী পেঁচার জন্য আলাদা আয়োজন। লক্ষ্মী পেঁচা ধন-সম্পদের দেবী। লক্ষ্মী পেঁচা কোথাও বসলে যেন উড়ে না যায় সেজন্য গৃহস্থের চেষ্টার শেষ থাকে না। তাদের বিশ্বাস লক্ষ্মী পেঁচা বসলে ধনে-জনে পূর্ণ হবে।
জানা যায়, সাহিত্যে পেঁচার অবস্থান খাটো করে দেখার উপায় নেই। হুতোম পেঁচার নকশা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। এছাড়াও জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পেঁচার ব্যবহার অসংখ্যবার বিভিন্নভাবে এসেছে। পেঁচা মূলত বর্গভুক্ত নিশাচর শিকারি পাখি। পেঁচার মাথা বড়, মুখমন্ডর চ্যাপ্টা, পুচ্ছ গোলাকার ও ডানা চওড়া। এদের ডানার পালক নিঃশব্দে ওড়ার জন্য পরিবর্তিত। শিকার করা ও শিকার ধরে রাখার জন্য পেঁচা বাঁকানো ঠোঁটের সঙ্গে নখরও ব্যবহার করে।
রাতের স্বল্প আলোয় পেঁচার চোখ অধিক আলোর সংস্থান করতে পারায় এই শিকারি পাখিরা অন্ধকারে ভালোই দেখে। অক্ষিগোলক সামনে অগ্রসর থাকায় পেঁচারা দ্বিনেত্র দৃষ্টির অধিকারী। এদের চোখ এতটাই আলো শোষণ করে যে অনেক পেঁচা দিনের উজ্জ্বল আলোয় অস্বস্তি অনুভব করে। তবে কিছু দিবাচর পেঁচাও আছে। ছোট চোখওয়ালা লক্ষ্মী পেঁচারা ব্যতিক্রমী শ্রবণ শক্তিধর। শুধু শব্দ দ্বারা চালিত হয়। নিরেট অন্ধকারে এরা শিকার ধরতে পারে।
শব্দ ধরার জন্য এদের ও অন্য কতকগুলি পেঁচার মুখমন্ডলীয় বিশেষ গঠন রয়েছে। মাথার গড়ন রূপান্তরিত হওয়ার জন্যই পেঁচার দুই কানে সামান্য আগে পরে শব্দ পৌঁছায় এবং মাথা ঘোরালে তারা অনুচ্চ শব্দেরও উৎস শনাক্ত করতে পারে। যেমন ইঁদুরের শস্যদানা চিবানোর সঠিক আওয়াজ। সাধারণত পেঁচা নিঃসঙ্গচর। ডাক শুনেই এদের শনাক্ত করা যায় বলে অনেক পেঁচার নামকরণ তাদের ডাক অনুসারেই হয়েছে। সব পেঁচাই ডাকে, বিশেষত প্রজননকালে।
পেঁচা গাছের কোঠর, পাহাড় ও পাথরের গর্তে, পুরনো দালান বা কাক ও অন্যান্য পাখির পরিত্যক্ত বাসায় থাকে। কতক পেঁচা বাসা বানায়। পেঁচার হুট হুট শব্দের ডাক ও রহস্যময় নিশাচর স্বভাব নানা কুসংস্কারের ভিত্তি, আর এভাবেই পেঁচা মানুষের অলৌকিক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অধিকাংশ পেঁচা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী ও পাখি শিকার করে খায়। এরা মাটিতে থাকা ছোট ইঁদুরজাতীয় স্তন্যপায়ী বা কীটপতঙ্গ ধরার সময় উঁচু জায়গা থেকে নিচে ছোঁ মারে। গাছের ডালপালা থেকেও পোকামাকড় এবং অন্যান্য শিকার ধরতে অভ্যস্ত। পৃথিবীর সর্বত্র পেঁচা ছড়িয়ে আছে। কুমেরু ও কতক মহাসাগরীয় দ্বীপ ছাড়া সব মহাদেশেই পেঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশের ১৭ প্রজাতির পেঁচার মধ্যে ১৫টি স্থায়ী বাসিন্দা এবং দুটি পরিযায়ী। স্থায়ী বাসিন্দা পেঁচাদের মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীপেঁচা, খুড়–লে পেঁচা, হুতুম পেঁচা, ভুতুম পেঁচা, কুপোখ ও নিমপোখ।