English Version
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১২:৪৫

একজন পুরুষ যৌনকর্মীর গল্প

অনলাইন ডেস্ক
একজন পুরুষ যৌনকর্মীর গল্প

 

 

যৌনকর্মী বলতে এখনও আমাদের দেশে শুধু মেয়েদেরকেই বোঝানো হয়। কিন্তু পুরুষরাও কিন্তু এই পেশার সাথে জড়িত সেটা বেশীরভাগ মানুষই জানেন না। কারন বাংলাদেশের পুরুষদের মাঝে এই পেশার প্রচলন কম। যাও হয় তা ভীষণ গোপনীয়তার মধ্যে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি পার্শবর্তী দেশ ভারতেও পুরুষরা এই পেশায় জড়িত। যাদের খদ্দের সাধারণত ধনী মাঝবয়সী রমনীরা। তেমনি এক ভারতীয় পুরুষ যৌনকর্মী নিজের পরিচয় গোপন রেখে কলকাতার একটি ব্লগে লিখেছেন তার পেশাগত ইতিহাস। পাঠকদের জন্য সেই লেখাটি তুলে দেয়া হলো।

আমি পেশায় সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কলকাতা, তথা বাংলা, তথা ভারতের নামজাদা প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি। ততোধিক নামী ইনস্টিটিউট থেকে ম্যানেজমেন্টের ডিপ্লোমা পাওয়া, বিদেশ-ঘোরা প্রফেশনাল। বর্তমানে কলকাতায় সেটল্‌ড। চাকরিজীবী, সংসারী। অর্থাভাব নেই, বলা বাহুল্য। কিন্তু আমার আর একটি পেশা আছে। আরও একটি জীবন আছে। সেই জীবনই পরতে পরতে মেলে ধরব আপনাদের সামনে।

বুঝতেই পারছেন, সামাজিক প্রতিষ্ঠা আমার রয়েছে। সংসারে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুমহল— আমার সব আছে। তাই নিজের নাম গোপন করতে বাধ্য হলাম। মুখও দেখাতে পারলাম না। ক্ষমা করবেন। তবে যে কথা স্ত্রীকে কোনও দিন বলতে পারিনি, যে কথা সন্তান কখনও জানবে না, যে সত্য না-জেনেই বাবা এবং মা চোখ বুজবেন, সেই সত্য লিপিবদ্ধ করে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছি আজকাল। এই ব্লগ হবে আমার ক্ষমা চাওয়া, ওদের সকলের কাছে।

আমি ইঞ্জিনিয়ার। আমি জিগোলো। পুরুষ যৌনকর্মী। ‘জিগোলো’ বললে ঠিক যেমন ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, আমি তা নই। আমাকে দেখলে বুঝবেন না যে, আমি যৌনকর্মী। অভুক্ত, অশান্ত, অসন্তুষ্ট নারীর শরীরের খিদে মেটানোই আমার কাজ। গোড়ায় একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিই। মোটা বেতন সত্ত্বেও আমি এই কাজ করি কেন? স্রেফ নেশায়। অভ্যাসের বশে। ছাড়তে পারছি না কিছুতেই। এটা এখন আমার জীবনের অংশ।

শুরুটা হয়েছিল স্কুলজীবনে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্র তখন আমি। এক বন্ধু প্রথম সন্ধানটা দেয়। সেটা ছিল বয়ঃসন্ধির দুর্নিবার আকর্ষণ। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মহিলার শরীরের প্রতি টান ছিল সেই বয়সেই। তবে বুকের ভিতরে ভয় ছিল পুরোদস্তুর। প্রথম শরীরী অভিযান...

ওই বন্ধুই এক সন্ধেয় (তখন ৮টা-সাড়ে ৮টা হবে) নিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত এলাকায়। বড়লোকের বাড়ি, কুকুর-চাকর মিলে সে এক ব্যাপার! পা রেখেই বুঝেছিলাম, এমন দামি মার্বেলে এই পদযুগল কখনও পড়েনি। চারিদিকে বৈভব আর চরম ব্যস্ততা। সোফায় বসতেই ডুবে গেলাম পুরোপুরি। একটা বাঘা কুকুর (পরে জেনেছিলাম ওটা গ্রেড ডেন) এসে পা শুঁকে গেল ফোঁস-ফোঁস করে। একজন চাকর এসে হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে গিয়েছিলেন, সঙ্গে কুকিজ (বিস্কুট নয়)।

চা শেষ হওয়ার প্রায় কুড়ি মিনিট পরে ভিতর থেকে ডাক এল। সঙ্গী বন্ধুটিকে বললাম, ‘‘যাব না। ছাড়। আমি পারব না।’’ সে কথাই শুনল না। প্রায় হ্যাঁচকা মেরে টেনে নিয়ে গেল। একদিকে ভয় আর অন্যদিকে আকর্ষণ, দুইয়ের টানাপড়েনে আমি এগিয়ে গেলাম দোতলার দিকে। আমার সেই বন্ধুর পিছু পিছু।

খোলা দরজা দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ল মধ্যবয়সি স্থূলাকৃতি ভদ্রমহিলাকে। অবাঙালি। তবে আমার বন্ধুটিকে বললেন, ‘‘এসো। এর কথাই বলেছিলে?’’ মাংস কেনার আগে খদ্দেরের দৃষ্টি আমাকে জরিপ করল আপাদমস্তক। হাঁটু কাঁপছে বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি, ফিরতে পারব না। ত্রস্ত মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘‘সামনে সাজিয়ে রাখা শরীর। ফিরে যাবই বা কেন?’’

বন্ধুমহল কেমন ছিল, তা বুঝতেই পারছেন। এই অবসরে জানিয়ে রাখি, মাধ্যমিকের পরেই ঠোঁট, জিভ, গলা বেয়ে হুইস্কি নেমেছিল। আমাকে শিকারীর সামনে ছেড়ে বন্ধুটি চলে গেল। দরজা বন্ধ হল খুট করে। পর্দা ফেলাই ছিল। বাইরে গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরম এখানে বোঝা দায়। কিন্তু সেই মেকি ঠান্ডার মধ্যেও আমার অল্প অল্প ঘাম টের পেয়েছিলাম।

খাট-বিছানা রয়েছে ঘরে। গোলাপি র‌ঙের চাদর তাতে। ফুলকাটা বালিশের ঢাকনা। সেই সময়ে রট-আয়রন কলকাতায় এতটা আসেনি। অভিজাত ঘরেই থাকত। এক কোণে তেমনই দুটো চেয়ার আর একটা গোল টেবিল। তাতে দামি হুইস্কির বোতল, দুটো কাচের গ্লাস, সোডা, জল, বরফ। উনি গিয়ে বসলেন, আমাকেও ডেকে নিলেন ইশারায়। উল্টো দিকে বসলাম। আঁচল খসেছে সবে। স্থূল শরীরের বিভাজিকা উঁকি দিচ্ছে। পেটের কাছটায় শাড়ি নেই, একদিকে আঁচল এলিয়ে পড়লে যা হয়।

এক পেগ নিজে নিলেন, আর এক পেগ দিলেন আমাকে। তার পরে? শুরু হল কথা। নাম জানলাম, আদি বা়ড়ি রাজস্থানে, তা-ও জানলাম। শুরু করলেন ছোটবেলার কথা। দেখতে পেলাম, একটা ছোট্ট দুরন্ত মেয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ঘরময়, মা তার পিছন পিছন ছুটে ক্লান্ত। লুকোচুরি না খেলে সেই মেয়ে খাবে না কিছুতেই। যা-ও বা খেল, ঘুমোতে গিয়ে ফের বিপাক। এই মেয়ে দুপুরে ঘুমোবে না, খেলবে। মায়ের কাছে গান শোনে, ঘুম আসে চোখজুড়ে একসময়ে।

বিকেলে ঘুম ভাঙে। সেই মেয়েটা ফের খেলতে যায়, সন্ধেয় পড়াশোনা করে, বাবার কোলে চড়ে বনবন করে চড়কিপাক খায়। বয়স বা়ড়ল একদিন। কলকাতার ব্যবসায়ী পরিবারের মধ্যবয়স্ক একটা লোক এসে বিয়ে করে নিয়ে গেল জয়সলমিরের সদ্য তরুণীকে। সংসারের স্বপ্ন দু’চোখে ভরে সেই মেয়ে এল কলকাতায়। হাওড়া ব্রিজ, বড়বাজার পেরিয়ে এই তল্লাটে।

কী বিশাল বাড়ি! কত লোক। শ্বশুর-শাশুড়ির আদরযত্নের অভাব ছিল না। পরিবারের সকলে যেন নতুন বৌ-কে ঘিরে একটা উৎসবই লাগিয়ে দিল। সেই ভালবাসায় ভাঁটা পড়েনি একদিনও। কিন্তু যাঁকে খুঁটি করে এই সুখসাগরে আসা, তিনি কোথায়? আলাদা ঘরে শোন, নিজের মতো থাকেন। নতুন বৌ কাছে গেলে এক ঝটকায় সরে যান। তরুণী ততদিনে সন্তানের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে।

ঝটকা লাগল এক আত্মীয়ার কথা শুনে। সম্পর্কে স্বামীর পিসি। বয়স খুব বেশি নয়। তখন তিরিশের একটু বেশি হয়তো। গোপাল পুজো দেওয়া হয়েছিল (সন্তানের কামনায় কি না, কে জানে?)। সেখানেই আর এক আত্মীয়ের সঙ্গে সেই পিসি আলোচনা করছিলেন, ‘‘উস লড়কি কা কেয়া হোগা? উও তো ইয়েভি নহি জানতি কে কিসসে শাদি হুয়া হ্যায়। বাচ্চে কেয়া, কুছ ভি নেহি মিলেগা পতি সে।’’ পরে জেনেছিলেন, স্বামীর শরীরে যৌনতার লেশমাত্র নেই। তিনি যৌনঅক্ষম। সেই শুরু অপেক্ষার। এই পড়ন্ত বেলায় এসে সংসারের গিন্নিবান্নি হয়েছেন। স্বামীর থেকে সব পেয়েছেন, শুধু শরীর ছা়ড়া। এই শরীরের নেশায় দামাল হয়ে ঘুরেছেন যত্রতত্র।

ততক্ষণে মদের ঘোরে কোথায় আঁচল?  ব্লাউজের ফাঁকে স্ফীত স্তন। কোমরের বাঁধনও ঢিলে হয়েছে। পারিনি ঝাঁপিয়ে পড়তে। জানি না কেন, চোখ দুটো বড্ড জ্বালা করছিল। ওঁর চোখ তখন কাঁদতে কাঁদতে লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে। এই শরীরে সন্তান আসেনি, এই কান মা ডাক শোনেনি, এই স্তনযুগল সদ্যোজাতের প্রাণসুধা ঢালেনি। এই শরীর যে বড় ফাঁকা!

একসময়ে সকাল হয়। উঠে দাঁড়ান তিনি। আমাকে কাছে ডাকেন। হাতে হাজার টাকা গুঁজে দেন। তার পরে আরও পাঁচশো। জড়িয়ে ধরলেন একবার। দাঁড়ানোর পরে শা়ড়ি কোমর থেকে নেমে গিয়েছে অনেকটা। কানের কাছে শুনলাম, ‘‘ভাইয়া দুজ মে আনা জরুর। ম্যায় ইন্তেজার করুঙ্গি’’ (আবার এসো, আমি অপেক্ষা করব)।