English Version
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ১২:২১
অক্সফামের প্রতিবেদন

৬২ ধনী নিয়ন্ত্রণ করছেন বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ

অনলাইন ডেস্ক
৬২ ধনী নিয়ন্ত্রণ করছেন বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ

পৃথিবীর মোট সম্পদের যতটুকু মোট মানুষের কাছে রয়েছে, ঠিক তার সমপরিমাণ সম্পদ অধিকারে আছে মাত্র ৬২ জন ধনীর হাতে। চলতি সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠককে সামনে রেখে গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফাম এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, ওই ৬২ ধনী ব্যক্তি বিশ্বের ৩৬০ কোটি গরিব মানুষের সমান সম্পদের অধিকারী। এদিকে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী ধারণ করছে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের সমান সম্পদ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস ও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব দাঁড় করিয়েছে অক্সফাম। 

অক্সফাম আরও বলেছে, বিশ্বের 'সুপাররিচ' বা ধনকুবেররা ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছেন, অার গরিবরা ডুবে যাচ্ছেন আরও বেশি দারিদ্র্যে । যেমন- পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ৬২ জন ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। বিপরীতে পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা বা প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি মানুষের ধনসম্পত্তির পরিমাণ একই সময়ের মধ্যে কমেছে ৪১ শতাংশ। এর আগে ২০১০ সালে পৃথিবীর সম্পদের অর্ধেক ছিল ৩৮৮ জনের হাতে, ২০১৪ সালে এই শীর্ষ ধনীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০ জনে।

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী অধিকর্তা উইনি বায়ানিমা বলছেন, 'এই বৈষম্যের ফলে যে সংকট তৈরি হচ্ছে- বিশ্বনেতারা তার জন্য উদ্বিগ্ন ঠিকই, কিন্তু এখনও তাদের কাছ থেকে এর মোকাবেলায় কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আমরা পাইনি।' পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষকে অভুক্ত রেখে সমাজের মুষ্টিমেয় একটি অংশ পৃথিবীর সব ধনসম্পদ শুষে নেবে- এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না বলেও অক্সফাম মন্তব্য করেছে। যেমন অর্থনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েল জুকমানের উদৃব্দতি দিয়ে তারা বলেছে, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের আর্থিক সম্পদের ৩০ শতাংশই পৃথিবীর বিভিন্ন অফশোর ট্যাক্স হ্যাভেনে গচ্ছিত রাখা আছে। এর ফলে আফ্রিকা প্রতি বছর ১৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ কর রাজস্ব হারাচ্ছে।

অথচ আফ্রিকা এই অর্থ পেলে ওই মহাদেশে প্রতি বছর ৪০ লাখ শিশুকে সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে তাদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতো। শুধু তাই নয়, ওই অর্থ দিয়ে আফ্রিকায় যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষকও নিয়োগ করা যেত, যাতে মহাদেশের প্রতিটি শিশুরই স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ করা যেত।

অক্সফাম আরও জানায়, ধনীদের কর এড়িয়ে যাওয়ার কারণেই পুরো অর্থনীতি দুর্নীতির কবলে পড়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের এহেন রূপ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অনেকেই। এর আগেও আইএমএফ এই বৈষম্য নিরসনে পদক্ষেপের ডাক দেয়। তবে অক্সফামের বর্তমান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওইসব পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়িত হয়নি।

অর্থনীতিবিদরা ২০১৬ সাল নাগাদ বিশ্বের ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ ৫০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি হয়ে যাবে বলে অনুমান করেছিলেন। আনুমানিক সময়ের এক বছর আগেই তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।