আগে পণ্য পরে টাকা: স্বাগত জানাল কিউকম

ই কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ না দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে টাকা না দেয়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন এই ধরনের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কিউকমের প্রধান রিপন মিয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তুমুল আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর পর নিউজবাংলাকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু এমন ই-কমার্স সাইট তৈরি হয়েছে যেগুলো গ্রাহকদেরকে অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তবে কোম্পানিগুলোকে আগে টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পণ্য সরবরাহ করে।
তবে টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহে বারবার সময়ক্ষেপণের অভিযোগ আছে। আবার তাদের ব্যবসার কৌশলটিও স্পষ্ট নয়। এ কারণে নানা সন্দেহ-সংশয় আছে জনগণের মধ্যে।
এর মধ্যেই কমার্স সাইট ইভ্যালিকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি তদন্ত চালিয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি এক টাকা আয় করতে সাড়ে তিন টাকার বেশি ব্যয় করে। আবার তাদের সম্পদের তুলনায় দেনা ছয় গুণ। ফলে তারা এই টাকা আদৌ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক তার গ্রাহকেদরকে জানিয়ে গিয়েছে কার্ড দিয়ে ১০টি ই কমার্স সাইটে টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। আরও দুটি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদেরকে সতর্ক করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য পৌঁছে দেয়ার আগে গ্রাহকদের কাছে থেকে টাকা পাবে না।ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওই পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে।
অর্ডার করা পণ্য ক্রেতা হাতে পাওয়ার পর ডেলিভারিম্যানের কাছে দেয়া স্বাক্ষরযুক্ত রিসিভ কপি জমা দিলেই পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে টাকা ছাড় হবে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটওয়ে সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে করা হবে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কিউকমের সিইও মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘ই-কমার্সের ব্যবসা মাত্র নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। এ সিদ্ধান্তে এ খাত কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে এ দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের অভিভাবক। তারা আমাদেরকে গাইডলাইন দেবে। তারা অনেক নীতিমালার কথা বলবে। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমান বিজনেস পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে।’
‘মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এখনো কিন্তু সিদ্ধান্ত দেয়নি। কীভাবে ব্যবসা করা যায় সেটা নিয়ে আমরা সবাই বসে আলোচনা করব। কোনো গ্রাহক যেন প্রতারিত না হয় –সবমিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চান কিউকম প্রধান। বলেন, ‘একটা আইডিয়া এসেছে। আবার আলোচনায় বসলে নতুন কোনো আইডিয়া আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যে কোনো সিচুয়েশনের কারণে হয়ত এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা কতটা সুদূরপ্রসারী সেটা দেখতে হবে। আমাদের উচ্চ পর্যায়ের ম্যানেজমন্টে আছে, তারা আবার আলোচনা করলে আরো ভালো সিদ্ধান্ত আসবে।
ই-কমার্সের একটা নীতিমালা জরুরি, সেটা মানছেন তিনি। বলেন, ‘বারবার এমন অস্থিরতা তৈরি হওয়া ভালো না। নীতিমালা হলে তখন গ্রাহক-ব্যবসায়ী সবাই টেনশনমুক্ত হতে পারবে।’
বেশ কিছু ব্যাংক কার্ডে লেনদেনে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার সমালোচনা করেন কিউকম প্রধান। এমন এক তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্ব ক্যাশলেস লেনদেন অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশনের দিকে যাচ্ছে। সবাই এখন কার্ড ব্যবহার করে। আগে টাকার বান্ডল নিয়ে চলাফেরা করত। এখন সবাই কার্ড লেনদেন ঝুঁকছে। এ নিয়মে চালু হলে কেউ কেনাকাটা করতে পারবে না।’
‘সবাইকে আবার আগের নিয়মে ফিরে যেতে হবে। আমরা আবার ব্যাকডেটেড বা অন্যালগ সিস্টেমে চলে যাচ্ছি।’