ইন্টারনেটের মূল্য কমাতে বিটিআরসির উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ

দেশে ব্যান্ডউইথের দাম দফায় দফায় কমলেও প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য কোনভাবেই কমাতে পারছে না সরকার। দেশে ২০০৪ সালে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। তখন প্রতি মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭২ হাজার টাকা। এর ১১ বছর পরে এসে দাম হয়েছে ৬২৫ টাকা। কিন্তু দাম কমানোর বিপরীত চিত্রে কমেনি মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার ব্যয়। সম্প্রতি মোবাইল ফোন অপারেটর, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের খরচ কমিয়ে আনার নোটিশ দিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরিসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে সকল ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে লেখা হয়েছে, সরকার বিভিন্ন ইন্টারনেট পণ্যের কাঁচামালের দাম কমিয়ে দিয়েছে আর এই সুবিধা গ্রাহক পর্যায়ের ব্যবহারকারিদের পাওয়া উচিত। ইন্টারনেট গ্রাহক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার বিপরীতে ইন্টারনেটের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেটের মূল্য এখনও বেশি বলেই প্রতীয়মান হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারনেটের মূল্য কমাতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও রেগুলেটর ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমানোর কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়েও ফিডব্যাক চেয়েছে। তবে অপারেটররা বলছে, তারা গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচ কমিয়ে স্পিড উন্নত করেছে। ৩০ মার্চ লেখা সেই চিঠির কপি সকল মোবাইল ফোন অপারেটর, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদেরকে দেওয়া হয়েছে। এরপর এপ্রিল মাসের শেষদিকে আরও একবার এ বিষয়ে অপারেটরগুলোকে তাগাদাও দিয়েছে বিটিআরসি। চিঠিতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয় অপারেটরগুলোকে। কিন্তু টেলিকম বিশ্লেষকরা বলছেন বাজারে ইন্টারনেট খরচের এধরনের কোন নিয়ন্ত্রক নেই।
দেশের মোবাইল অপারেটর সেবাদাতাদের অনেকেই মনে করেন, ইন্টারনেট ব্যয় কমে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বাজারে বহুমুখী প্রতিযোগিতায় এখনও ইন্টারনেট সেবাদাতারা প্রত্যাশিত মুনাফা থেকে অনেক দূরে। আর সে কারণেই ইন্টারনেট ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকারকেই আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে এ খাতে ভর্তূকি দেওয়ার কথাও চিন্তা করা যেতে পারে।
বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে কোন ইন্টারনেট মূল্যের খরচের মডেল তালিকা নেই অথবা এমন কোন টুল নেই যা দিয়ে তারা সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। তবে কয়েক বছর আগে, বিটিআরসি ভয়েস কল সেগমেন্টের উপর ব্যয় মডেলিং পরিচালনা করেন যেখানে মূল্যের সর্বচ্চ এবং সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। রেগুলেটরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিটিআরসি ইন্টারনেট মূল্যের ব্যাপারে কখনই কোন উদ্যোগ নেয়নি।
এদিকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ইন্টারনেটের মূল্য বেশি রাখার পক্ষে এক পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে, সরকার ব্যান্ডউইথে মোট অপারেটিং খরচের শুধুমাত্র ৬ শতাংশ কমিয়েছে। আর এ থেকে তাদের ব্যয়ের ৩৫ শতাংশ যায় দুই ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরের কাছে। ৩০ শতাংশ যায় কর্মচারীদের বেতনে। ২২ শতাংশ যায় বিভিন্ন স্তরের রাজস্বে এবং ৭ শতাংশ অফিস স্পেস এবং অন্যান্য খরচে।
আইএসপিএবি-এর প্রেসিডেন্ট এমএ হাকিম এক চিঠিতে রেগুলেটরকে জানান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) চার্জ কমানো ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট খরচের কোন প্রভাব পড়বেনা। চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এর সর্বোত্তম সুবিধা পেতে সরকারের ভ্যাট ও অন্যান্য কর প্রত্যাহার এবং তা থেকে আয়ের একটি অংশ গ্রহণ বন্ধ করা উচিত। তিনি আরও জানান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) চার্জ ২০০৯ সালে ঠিক করা হয়েছিল যা কখনই আর সংশোধন করা হয়নি।
টেলিকম রেগুলেটরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে পর্যন্ত দেশে মোট সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ৬ কোটি ৩৩ লাখ ১৬ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার। আইএসপি ও পিএসটিএন অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক ৩৩ লাখ ৭০ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক ১ লাখ ১৮ হাজার।