ব্যবস্থাপনায় চলছে জাতীয় হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় হ্যাকাথন শুরু হয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা দিয়ে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় রাজধানীর মিরপুরের পুলিশ কনভেনশন হলে এর উদ্বোধনের পর বিকাল ৩টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ পায়নি অংশগ্রহণকারীরা। শতাধিক প্রশিক্ষণার্থীদের টেবিলে ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগও। অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে প্রশিক্ষণার্থীদের আইডি কার্ড নিয়েও।
আয়োজক হিসেবে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। জাতীয় হ্যাকাথনের আয়োজনে সব রকম চাহিদায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে বিভাগটি। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সমস্যা কোথায়? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কোনো গাফিলতি না থাকলেও হ্যাকাথন অনুষ্ঠান বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা কোম্পানি এমসিসি’র ওপরই এই অব্যবস্থাপনার দায় বর্তায়। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম জাতীয় হ্যাকাথনেরও বাস্তাবায়নকারী ছিল।
ইন্টারনেট না দিতে পারা, বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যাসহ হ্যাকাথনের এসব অব্যবস্থাপনা নিয়ে এমসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশ্রাফ আবির জানান, ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথা ছিল কিউবির। তারা এই আয়োজনের অংশীদার। সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন জানিয়ে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে তিনি জানান, কিউবিকে বিষয়টি বলা হয়েছে। তারা সমস্যাটি নিয়ে জরুরিভিত্তিতে কাজ করছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার বিষয়েও সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে আশ্রাফ আবির জানান।
হ্যাকাথনে অংশগ্রহণকারী ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল জানান, ‘সকাল থেকেই ইন্টারনেট নেই। কিউবির ইন্টারনেটের ওয়াইফাই সংযোগের থাকলে কেউই লগইন করতে পারছি না। তবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা বলেন, দুপুর নাগাদ কিউবির লোকজন এসে ইন্টারনেট ঠিক করে দেবে।’
আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘সকাল থেকে ইন্টারনেট না থাকায় এখনও কাজ শুরুই করতে পারিনি। ৩৬ ঘণ্টার প্রতিযোগিতার কয়েক ঘণ্টা শেষ হয়ে গেছে।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কিছুই করতে পারছি না। গ্রুপের সবার ল্যাপটপের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার এখন বসে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।’
ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসিফ হ্যাকাথনে প্রবেশ করার সময় আইডি কার্ড পাননি। শুধু আসিফ নয়, আসিফের মত প্রায় ৩৫ জন প্রতিযোগী আইডি কার্ড পায়নি।
আসিফ বলেন, ‘প্রবেশ করার সময় আইডি কার্ড দেয়া হয়নি। বলা হয়েছিল পরে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও দেয়া হয়নি। কিন্তু বার বার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে খাবার সংগ্রহের জন্য আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক। আসলে অনিয়ম খুব। তলে ভলান্টিয়ারও আছে অনেক।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর তিনটার দিকে এই অংশগ্রহণকারীদের আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়ালিউল আলম ইভান বলেন, ‘ইন্টারনেট নেই, বিদ্যুৎ নেই, ল্যাপটপও বন্ধ হয়ে গেছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছিনা। এটা নাকি প্রতিযোগিতা! এভাবে কাজ করা যায়?’
এই হ্যাকাথনে ৩৭০টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অংশ নিয়েছে দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। টানা ৩৬ ঘণ্টার এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া দলগুলো জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে নির্বাচিত দশটি বিষয়ের সমস্যা সমাধানে লড়ছেন। সমস্যাগুলো হচ্ছে- কৃষি উৎপাদন, নবজাতক ও শিশু, সড়ক দুর্ঘটনা, শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষক, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, জ্বালানি সক্ষমতা, শহরের পরিবেশ, টেকসই পর্যটন, সামুদ্রিক সম্পদ ও দুর্নীতি।
হ্যাকাথনে ১০টি বিজয়ী দল পাবেন অর্থ, সম্মাননাসহ বেশকিছু পুরস্কার। আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপসহ সকল বিজয়ীদের দেওয়া হবে ১০ লাখ টাকা, বাংলালিংকের পক্ষ থেকে প্রত্যেক চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৫০ হাজার করে মোট পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রথম রানারআপদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে ট্যাব।
এছাড়াও ফেইসবুক ৮০ হাজার ডলারের ফেইসবুক স্টার্ট সুবিধা এবং কিউবি পাঁচ মাসের ইন্টারনেট সুবিধাসহ দশ চ্যাম্পিয়ন দলকে দেবে মডেম।