English Version
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৩:৩৮

মহাকর্ষ তরঙ্গ গবেষণা দলে বাংলাদেশের দীপঙ্কর তালুকদার

অনলাইন ডেস্ক
মহাকর্ষ তরঙ্গ গবেষণা দলে বাংলাদেশের দীপঙ্কর তালুকদার

 

বিশ্বব্যাপী হইচই ফেলে দেয়া মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের 'লাইগো' (লেজার ইন্টাফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি) যন্ত্র যে সাফল্য দেখিয়েছে, তার অংশীদার বাংলাদেশের বরগুনার সন্তান পদার্থবিজ্ঞানী ড. দীপঙ্কর তালুকদারও। গবেষণা দলটিতে যাদের কাজ ছিল ওই যন্ত্রে ধরা পড়া নানা সংকেতের মধ্য থেকে কৃষ্ণবিবরের সংকেত শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করা, তিনি তাদের একজন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জিত তার পিএইচডি গবেষণার বিষয়ও ছিল কৃষ্ণবিবর থেকে উৎসারিত সংকেত বিশ্লেষণ। স্নাতকোত্তর পর্যায়েও তিনি একই বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাকে আখ্যা দিয়েছেন মানবজাতির বর্তমান 'প্রজন্মের বিজয়' হিসেবে। তিনি মনে করেন, তাদের পরিশ্রমের কারণে মানবজাতি মহাবিশ্বকে নতুনভাবে দেখতে পাবে।

মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তকারী এই সাড়া জাগানো গবেষণায় ভারতীয় ও পাকিস্তানি বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ নিয়ে যখন দেশ দুটির সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় চলছিল, তখনও দীপঙ্করের নাম বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে পৌঁছেনি। শুক্রবার তার পারিবারিক বন্ধু এবং বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক বাতেন মোহাম্মদ প্রথম এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এর পরই বিষয়টি সবার নজরে আসে।

দীপঙ্কর বরগুনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্য বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরের বছর কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজে যান ও গণিত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তখন সেখানে গণিত পড়াতেন স্টিফেন হকিং। পরে দীপঙ্কর যুক্তরাষ্ট্র যান এবং সেখানকার ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৮ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১১ সালে তিনি ক্যামব্রিজ থেকে আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত, তার স্ত্রীও বাংলাদেশি, নাম শম্পা বিশ্বাস। দীপঙ্কর তালুকদার ২০০৮ সালে 'লাইগো কোলাবোরেশন' টিমে যোগ দেন। বর্তমানে তার কর্মস্থল যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন রাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অরিগনে। তিনি সেখানে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করছেন লাইগো কলাবোরেশনের সঙ্গে। লুইজিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এ গবেষণা সম্পন্ন করেছে, অরিগন বিশ্ববিদ্যালয় তার একটি। প্রতিদিন সাতসকালে উঠে তিনি গবেষণাগারে চলে যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত গবেষণাগারে প্রাপ্ত সংকতে সংগ্রহ, শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়াও কখনও কখনও ইউরোপে ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত গবেষণাগার থেকেও তথ্য ও সংকেত সংগ্রহ করতে হয় বলে বহুবিচিত্র স্থানীয় সময়ের সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে তাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা গবেষণাগারে থাকতে হয়। মহাকর্ষ-তরঙ্গ শনাক্তকারী গবেষণা চূড়ান্ত ও প্রামাণিক রূপ পাওয়ার ফলে এখন তারা গবেষণার নতুন স্তরে প্রবেশ করবেন। এই সাফল্যকে তিনি আখ্যা দেন 'মালার জ্বালা' হিসেবে। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে তাদের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে গেল।

ড. দীপঙ্কর তালুকদারের জন্ম বরগুনা সদরের পোস্ট অফিস রোডের তালুকদার বাড়িতে। তার বাবা পরেশনাথ তালুকদার ১৯৭৩ সালে বরগুনা পৌরসভার প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। মায়ের নাম পারুল তালুকদার। তারা দু'জনই পরলোকে। বাড়িটিতে থাকেন দীপঙ্করের বড় ভাই শঙ্কর তালুকদার। তিনি ভাইয়ের মেধা তারা শৈশবেই বুঝতে পেরেছিলেন। এ জন্য সংগ্রাম করে হলেও তিনি তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে দেননি। এখন ভাই দেশ ও বিশ্বের মুখ উজ্জ্বল করায় পরিবারের সংগ্রাম সার্থক হয়েছে।