English Version
আপডেট : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৪:৩২

বাড়ছে ফেসবুক আইডি হ্যাকিং: কিভাবে শতভাগ নিরাপদ থাকবেন?

এস. কে. সুমন
বাড়ছে ফেসবুক আইডি হ্যাকিং: কিভাবে শতভাগ নিরাপদ থাকবেন?

 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোনালিসার (ছদ্মনাম) ফেসবুক আইডি গত শনিবার হ্যাক করা হয়। এরপর তার আইডি ব্যাবহার করে তার ফ্রেন্ডলিস্টের বিভিন্নজনকে টাকা চেয়ে কিংবা আজেবাজে মন্তব্য সম্বলিত ইনবক্স করা হয়। শেষ পর্যন্ত আইডি উদ্ধার করতে পারলেও এতে তিনি খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।

অপর ঘটনাটি রাজধানীর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিবের (ছদ্মনাম)। তার আইডি হ্যাক করে হ্যাকাররা বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং পেইজে গিয়ে আজেবাজে এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক মন্তব্য করে। আইডি উদ্ধার করার পর তিনি এখন জিডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রযুক্তির এই যুগে এরকম ঘটনায় এখন অনেকেই পড়ছেন। যা অত্যন্ত বিপদজনক। ফেসবুক সম্প্রতি তাদের একাউন্ট নিরাপত্তা আরও কঠোর করেছে। আসুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে শতভাগ সুরক্ষিত রাখবেন আপনার ফেসবুক আইডি।

সিকিউরিটি: ফেসবুকের হোমপেইজের সর্বডানের নিন্মমুখী তীরচিহ্ন সম্বলিত ‘সেটিং’ আইকনে ক্লিক করে সেটিং অপশনে যান। আপনার সামনে একটি উইন্ডো আসবে। এখন বামদিকের ট্যাব থেকে ‘সিকিউরিটি’ ট্যাবে ক্লিক করুন। এখানে আপনার একাউন্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক ফিচার রয়েছে। যেমন:

১. নতুন কোন ব্রাউজার থেকে লগিন হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য ‘লগিন এলার্ট”। এই অপশনটি চালু করে দিলে কোন নতুন ব্রাউজার থেকে আপনার আইডি লগিন হওয়া মাত্র আপনার কাছে এসএমএস, ইমেইল এবং ফেসবুকে নোটিফিকেশন চলে আসবে। তখন আপনি তা বন্ধ করতে পারবেন।

২. নতুন কোন ব্রাউজার থেকে আইডিতে প্রবেশ করার অনুমতি সংক্রান্ত কোড হলো ‘লগিন এপ্রোভাল’ ফিচার। এই ফিচার অন করলে আইডিতে প্রবেশ করার আগে আপনার মোবাইলে একটি কোড আসবে। যেটা প্রবেশ না করালে কখনোই আইডি লগিন করা সম্ভব হবে না। তাই এটা চালু করুন। মোবাইল যদি হারিয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনার জন্য দশটি মাস্টার কোড সরবরাহ করে ফেসবুক। এই ফিচারেই যা আপনি পাবেন।

৩. আইডিতে প্রবেশের অনুমতির জন্য ‘কোড জেনারেটর’ ব্যাবহার করে কোড পেতে পারেন।

৪. না বুঝে, যাচাই না করে হুজুগে মেতে কোন এ্যাপ ব্যাবহার করবেন না। এতে আপনার পাসওয়ার্ড চুরি হতে পারে। এই এ্যাপগুলোর নিরাপত্তার জন্য ‘এ্যাপ পাসওয়ার্ড’ ব্যাবহার করতে পারেন।

৫. ‘ট্রাস্টেড কন্ট্রাক্টস’ অপশনটি ব্যাবহার করে আপনি আপনার একান্ত বিশ্বস্ত কোন ব্যাক্তিকে আপনার আইডির সাথে এ্যাড করতে পারেন। যাতে আইডি হ্যাক হলে তার সহযোগিতায় সেটি ফিরে পেতে পারেন।

৬. আপনি বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন পিসি বা অন্যান্য ডিভাইস দিয়ে আপনার আইডিতে প্রবেশ করতে পারেন। তবে এটা হয়তো জানেন না যে ফেসবুক আপনার এই ব্রাউজিং হিস্ট্রি সংরক্ষণ করে। এবং এই হিস্ট্রির কারনে উক্ত ব্রাউজারগুলি থেকে আইডি হ্যাক করা সহজ হয়ে যায়। ‘ব্রাউজার এন্ড এ্যাপস’ অপশনে গিয়ে সবগুলো ব্রাউজার এবং অপ্রয়োজনীয় এ্যাপসগুলি মুছে দিতে পারেন। এটা খুব জরুরী।

প্রাইভেসী চেক: আপনার আইডি কতটুকু সুরক্ষিত তা জানার জন্য ফেসবুকেই প্রাইভেসী চেক-এ্র ব্যাবস্থা আছে। এর জন্য হোমপেইজের ডানদিকে প্রাইভেসি আইকনে ক্লিক করে “প্রাইভেসী চেকআপ” অপশনে ক্লিক করুন।

প্রতারণার ফাঁদ: অনলাইনে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য অগণিত ফাঁদ পেতে রেখেছে দূর্বৃত্তরা। ভাল করে যাচাই না করে কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে এ্যাড করবেন না। সুন্দরী মেয়েদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে অসংখ্য আইডি আছে যেগুলির ৯৯ শতাংশই ভূয়া। এবং এই আইডিগুলির ৮০ শতাংশ পরিচালনা করে বিকৃত মনের পুরুষরাই। কেউ সাহায্য চাইলে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তারপর টাকা দিন। ব্যাক্তিগতভাবে চিনলেও তার সাথে ফোনে বা সামনাসামনি কথা বলে নিন। কারন তার আইডিও হ্যাক হতে পারে।

অচেনা লিংক:  ইনবক্সে পাঠানো অচেনা কোন চটকদার খবর সম্বলিত লিংকে ভুলেও ক্লিক করবেন না। কারণ অচেনা লিংকগুলির ৯৯ শতাংশ হলো ফিশিং লিংক যা আপনার আইডি দখল করে নেবে। এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বন্ধুদের নগ্ন ছবি পাঠানো শুরু করবে!!

লগ আউট: নিজের ব্যাবহৃত ডিভাইসে লগ আউট করা অতটা জরুরী না হলেও অন্য যেকোন ডিভাইস বা সাইবার ক্যাফে বা অফিসের পিসি থেকে ফেসবুক ব্যাবহার করার পর অবশ্যই লগআউট করবেন। মনে না থাকলে বা কারেন্ট চলে গেলে দ্রুত আপনার ব্যাবহৃত ডিভাইস থেকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ‘ডিলিট অল লগিন’ অপশনে ক্লিক করলেই সব ডিভাইস থেকে আপনার আইডি লগ আউট হয়ে যাবে।

পাসওয়ার্ড সেইভ : নিজের ব্যাবহৃত ডিভাইস ছাড়া অন্য কোন ডিভাইস বা পিসিতে আপনার পাসওয়ার্ড সেইভ করবেন না। যদি ভুলক্রমে করে ফেলেন তবে সেই ব্রাউজারের হিস্ট্রিতে গিয়ে ব্রাউজিং হিস্ট্রি, পাসওয়ার্ড, ক্যাচ ইত্যাদি মুছে ফেলুন। তবেই আপনার আইডি সুরক্ষিত।

এবং পাসওয়ার্ড: শুধু ফেসবুক নয়, অনলাইনের যেকোন সাইটে আইডি খোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাসওয়ার্ড। অনেকে ‘মনে থাকে না’ এই অজুহাতে ছোট এবং সহজ পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করে থাকেন। ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট পাওয়া যায় যা কোডিংএর মাধ্যমে আইডির পাসওয়ার্ড বের করার চেষ্ঠা করে। ছোট ও সহজ পাসওয়ার্ড দিলে কাজটি সহজ হয়ে যায়। তাই আট থেকে বারো সংখ্যার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডে * # @ % & @ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যারেক্টার ব্যাবহার করা উচিৎ। সেই সাথে ছোট হাতের এবং বড় হাতের অক্ষর আর লেখ্য অক্ষরের সাথে গাণিতিক অক্ষর মিশিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করবেন।পাসওয়ার্ডে কখনোই মোবাইল নম্বর সরাসরি ব্যাবহার করবেন না। তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে আপনার ফেসবুক একাউন্ট।