English Version
আপডেট : ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:৫৯

এবাদতের দাপুটে বোলিংয়ে চাপে নিউজিল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক
এবাদতের দাপুটে বোলিংয়ে চাপে নিউজিল্যান্ড

চা–বিরতির পরবর্তী সময়টায় সবকিছু যেন একটু গুলিয়ে ফেলছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। রস টেলরের ক্যাচ মিস হলো, মেহেদী হাসান মিরাজ আর এবাদত হোসেন রান আউট মিস করলেন। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা প্রায় চলে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। কিন্তু এবাদতই নিজের দুই ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে আবার ম্যাচে ফিরিয়েছেন।

এর ফলে ইনিংসে নিজের চতুর্থ ও নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম উইকেট তুলে নিয়েছেন এবাদত। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারও তুলে নিয়েছেন উইকেট নিয়ে স্যালুট দেওয়া এবাদত।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৬৩ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। তাদের লিড হয়েছে ৬ রানের। বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়ে ৩৭ রানে অপরাজিত রয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার রস টেলর। তাকে সঙ্গ দিতে নেমেছেন তরুণ বাঁহাতি রাচিন রবীন্দ্র।

১৩০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিল নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ৮ ওভারে স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলে ২৫ রান। তবে নবম ওভারেই ১৪ রান করা লাথামকে বোল্ড করে দেন তাসকিন আহমেদ। আউট হওয়ার আগে কিউই অধিনায়ক করেন ১৪ রান। এরপর আক্রমণে এসে দারুণ বোলিং করতে থাকেন এবাদত। ইয়ং-কনওয়ের বেশ ভালো পরীক্ষা নেন তিনি। দুইবার ইয়ংয়ের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল স্লিপ অঞ্চল দিয়ে সীমানায় চলে যায়। একবার তার থাই প্যাডে লেগে বল জমা পড়ে লিটন দাসের গ্লাভসে। সেটিতে রিভিউ নিয়ে হতাশ হয় বাংলাদেশ।

তবে ইনিংসের ২৫তম ওভারে আর হতাশ হতে হয়নি। এবাদতের করা সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে কনওয়ের বিরুদ্ধে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ। তবে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লে'তে দেখা যায় বল প্যাডে আঘাত হানার আগে লেগেছে ব্যাটের ভেতরের কানায়। কিন্তু প্যাডে আঘাত হানার পর গালি অঞ্চলের দিকে উড়ে যাওয়া বল সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে তালুবন্দী করেন সাদমান। ফলে লেগ বিফোর না হলেও, ক্যাচ আউট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে দলীয় ৬৩ রানে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেট জুটি। কনওয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। 

এক ওভার পর আরেক ওপেনার উইল ইয়ংকে বোকা বানিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু তার ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগা বলটি গ্লাভসে নিতে পারেননি উইকেটরক্ষক লিটন। ফলে ৩১ রানে জীবন পেয়ে যান প্রথম ইনিংসে ৫২ রানের ইনিংস খেলা ইয়ং। দ্বিতীয় সেশনের বাকি সময়টা নির্বিঘ্নেই পার করেন ইয়ং ও রস টেলর। তৃতীয় সেশনেও বোলিংয়ে দাপট দেখায় বাংলাদেশ। কিন্তু ফিল্ডিং ও রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেখায় অপরিপক্কতা। ইয়ংয়ের থাই প্যাডে লাগা বলে কট বিহাইন্ড এবং টেলরের মাঝ ব্যাটে লাগা বলে লেগ বিফোরের রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। দুইটির একটিতেও মেলেনি সফলতা।

শুধু রিভিউ বিভ্রাটই নয়, ফিল্ডিংয়েও হ-য-ব-র-ল অবস্থা করে টাইগাররা। ইনিংসের ৪২তম ওভারে মিরাজের বলে তুলে মেরেছিলেন টেলর। ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচের সুযোগ ছিল সাদমান ইসলামের সামনে। কিন্তু বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে সেটি ছেড়ে দেন সাদমান, ১৭ রানে বেঁচে যান টেলর। এরপর ৫০তম ওভারে আসে রান আউটের সুবর্ণ সুযোগ। পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিয়ে দ্রুত রানের জন্য ছুটেছিলেন ইয়ং-টেলর। কিন্তু মাঝ পিচ পর্যন্ত গিয়ে দুজনই ফিরে যান যার যার ক্রিজে। ততক্ষণে বল সাদমানের হাত ঘুরে বোলার এবাদতের হাতে চলে যায়। কিন্তু এবাদত সেটি স্ট্যাম্পে লাগাতে ব্যর্থ হন। ফলে ৩১ রানে আবার সুযোগ পান কিউই অভিজ্ঞ ব্যাটার।

ইনিংসের ৫২তম ওভারে বাংলাদেশের ১৩০ রানের লিড ছাড়িয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। এর পরপরই তাদের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এবাদত ঝড়। প্রথম ইনিংসে ৫২ রান করা ইয়ং দ্বিতীয় ইনিংসে এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৫৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়ে এবাদত। ইয়ংয়ের ১৭২ বলের ইনিংস থামে ৬৯ রানে। ঠিক পরের বলেই নতুন ব্যাটার হেনরি নিকলসের বিপক্ষে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন করেন এবাদত। তবে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তাতে কী! ওভারের চতুর্থ বলে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে নিকলসের স্ট্যাম্প ছত্রখান করে দেন এবাদত, সঙ্গে সঙ্গে দেন ইনিংসে নিজের তৃতীয় স্যালুট।

এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে আনন্দের নহর বইয়ে দিয়েই থামেননি এবাদত। নিজের পরের ওভারে টম ব্লান্ডেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি ব্লান্ডেল। নিকলসের মতো তিনিও খুলতে পারেননি রানের খাতা। এবাদতের এই দুই ওভারের আগুনে ২ উইকেটে ১৩৬ রান থেকে ৫ উইকেটে ১৩৬ রানের দলে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড।

এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমেই সাউথির শিকার হন থিতু হয়ে ব্যাট করতে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ। ৮৮ বলে ৪৭ রান করে বিদায় নেন তিনি। এরপর আর বেশিক্ষণ টিকেনি বাংলাদেশের ইনিংস। পরপর ইয়াসির আলি, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের বিদায়ে ৪৫৮ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা।

শেষদিকে ব্যাট হাতে ইয়াসির ২৬, তাসকিন ৫ ও শরিফুল ৭ রান করেন। ১৩০ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমেছে কিউইরা। কিউইদের হয়ে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট। তিনটি উইকেট পান নেইল ওয়াগনার। জোড়া উইকেট শিকার করেন টিম সাউথি।