ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙ্গে ৫৩ বছর পর ইতালির ইউরোপ জয়

‘ইটস কামিং হোম’-গানের তালে তালে ইংল্যান্ডের বোনা স্বপ্ন আরেকবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। এবার ইতালির কাছে হেরে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। এদিকে ১৯৭৬ সালের পর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের জন্য খেলা গড়ালো টাইব্রেকারে। ওয়েম্বলিতে সোমবার (১২ জুলাই) প্রথম রাত ১ টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও ১-১ গোলে সমতায় শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুললো ইতালি।
ঘরের মাঠ ওয়েম্বলিতে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসা ইতালির বিপক্ষে ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় গোল করে ইংলিশদের লিড এনে দেন লুক শ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের ৬৭তম মিনিটে লেওনার্দো বনুচ্চির গোলে সমতায় ফেরে আজ্জুরিরা। ম্যাচের বাকি সময় দুই দলই গোলের চেষ্টা করলেও আর লিড নিতে পারেনি কেউই। আর নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচের মীমাংসা হয় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে এসে বল জালে পাঠান ডমেনিকো বেরার্দি। এরপর ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন জালে বল পাঠিয়ে সমতায় ফেরান ইংলিশদের। এরপর আন্দ্রেয়া বেলোত্তির শট রুখে দিয়ে ইংলিশদের এগিয়ে নেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। পরের শটে গোল করে ইংলিশদের ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে নেন হ্যারি মাগুয়ের। ইতালির হয়ে তৃতীয় শট নিতে এসে গোল করেন লেওনার্দো বনুচ্চি। পরের শট নিতে এসে বল গোলপোস্টে মারেন মার্কাশ রাশফোর্ড। চতুর্থ শটে ইতালির হয়ে বার্নার্দেস্কি গোল করলে ইতালি এগিয়ে যায় ৩-২ ব্যবধানে।
ইংলিশদের চতুর্থ শট নিতে আসা জডান সানচোর শট রুখে দেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক ডনারুমা। ইতালির পঞ্চম শট নিতে আসা জর্জিনহোর শট রুখে ইংলিশদের শিরোপা স্বপ্ন ধরে রাখেন পিকফোর্ড। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ শট নিতে আসা বুকায়ো সাকাকে দুই হাত দিয়ে রুখে দেন ডনারুমা। আর তাতেই ৫৩ বছর পর ইউরোপ সেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করল ইতালি।
এর আগে ইউরোর ফাইনালের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম গোলটি করে ইংলিশদের ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে নেন লুক শ। সতীর্থের পাস ধরে কেইন কিছুটা এগিয়ে মাঝমাঠ থেকে দারুণ থ্রু বলে ডান দিকে খুঁজে নিলেন কিরান ট্রিপিয়ারকে। ডান দিক থেকে ক্রস করলেন বাঁ দিকে ফাঁকায় থাকা লুক শ’র দিকে। আর বাঁ দিকে বল পেয়ে জোরালো হাফ-ভলিতে পোস্ট ঘেঁষে বল জালে জড়ান লুক শ। ম্যাচের ঘড়িতে তখন মাত্রই ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড!
নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার আগেই গোল হজম করে হতভম্ব হয়ে পড়ে আজ্জুরিরা। তবে সময় নিয়ে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে ঠিকই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নেয় আজ্জুরিরা। বল দখলে রেখে আক্রমণের চেষ্টা করতে থাকে তারা। কিন্তু ইংলিশদের জমাট রক্ষণে ডি-বক্সের ভেতর পর্যন্ত ঢুকতেই পারছিল না তারা।
ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য শট নিতে পারে রেকর্ড ৩৩ ম্যাচের অপরাজিত পথচলায় ৮৬ গোল করা ইতালি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফেদেরিখো চিয়েসার নিচু শটটি পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। বিরতির আগে চিরো ইম্মোবিলের দারুণ এক শট ব্লক করে বিপদমুক্ত করেন জন স্টোনস। তাতেই প্রথমার্ধে ১-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইতালি।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আরও বেশি বল দখলে রেখে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাপ বাঁড়াতে থাকে ইংলিশদের রক্ষণে। ম্যাচের ৬২তম মিনিটে প্রথমবার প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেয় তারা। তিন ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে চিয়েসার নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। তবে এর মিনিট পাঁচেক পরে আজ্জুরিদের ম্যাচে ফেরান বনুচ্চি। কর্নারে মার্কো ভেরাত্তির হেড পিকফোর্ড কোনোমতে ঠেকালেও বল হাতে রাখতে পারেননি, পোস্টে লেগে ফেরা বল গোলমুখ থেকে ছোট্ট টোকায় জালে পাঠান বনুচ্চি।
গোল হজম করার পর খোলস ছেড়ে বের হয় ইংল্যান্ড। যদিও নির্ধারিত ৯০ মিনিটের বাকি সময়ে কোনো শটই নিতে পারেনি তারা। অতিরিক্ত সময়েও একইভাবে চলতে থাকে। আর শেষ পর্যন্ত কোনো গোলের দেখা না মিললে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানেই ৩-২ ব্যবধানে জিতে ৫৩ বছর পর ইউরোপ সেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করে ইতালি।