বিকেলে মুখোমুখি ভারত-নিউজিল্যান্ড

ইংল্যন্ড বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-নিউজিল্যান্ড। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায় মাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
একমাত্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই জিতেছে ভারত। যদিও বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে তাদের। সবমিলিয়ে ৯ ম্যাচের ৭টিতে জয় পেয়ে এক নম্বর দল হিসেবে সেমিফাইনাল খেলছে ভারত।
কিন্তু নিউজিল্যান্ড প্রথম দিকে দুর্দান্ত শুরু করলেও শেষের দিকে টানা তিনটি ম্যাচ হারে চতুর্থ স্থান নিয়ে সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েছে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন, মাছরাঙা টেলিভিশন ও স্টার স্পোর্টস।
৭ বার বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেললে মাত্র একবারও ফাইনালে উঠতে পেরেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের মতো এবারো ফাইনাল খেলতে মরিয়া কেন উইলিয়ামসনের ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। অন্যদিকে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে অটুট বিরাট কোহলির দল।
কিন্তু রোমাঞ্চকর ম্যাচের আগে দু:চিন্তার ছাপ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে। মঙ্গলবার সারাদিনই ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির প্রভাব কমলেও আকাশ মেঘলা থাকবে।
এমন অবস্থায় ম্যাচটি মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। রাউন্ড রবিন লিগে ট্রেন্টব্রিজে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি বৃষ্টিতে বাতিল হয়েছিল। রবিন লিগে রিজার্ভ ডে না থাকলেও সেমিফাইনালে তা রাখা হয়েছে।
তাই বৃষ্টির কারনে ম্যাচটি মাঠে না গড়ালে বুধবার ফের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বিস্ময়কর হলেও সত্য ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও একই রকম পরিস্থিতি হয়েছিল।
সে বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড। দুই দলের অধিনায়ক হিসেবে বর্তমান দুই অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও শেন উইলিয়ামসন ছিলেন। মজার ব্যাপার বৃষ্টি বিঘ্নিত ওই ম্যাচটিতে ভারত জিতেছিল ৩ উইকেটে।
মঙ্গলবার বৃষ্টি হলেও কি একই পরিণতি হবে। ক্রিকেট বিধাতা কি লিখে রেখেছেন সময় হলেই জানা যাবে? আরও একটি পরিসংখ্যানে অনুপ্রেরণা পেতে পারে ভারত।
তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভারতের আধিপত্যের কথা জানান দিচ্ছে। চলতি বছর পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে কিউইদের ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া।
১০৭ ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ভারত ৫৫ টি ম্যাচে জিতেছে। বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের জয় ৪৫টিতে। এছাড়া একটি ম্যাচ টাই হয়েছে এবং পরিত্যক্ত হয়েছে ছয়টি ম্যাচ। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সাতটি ম্যাচে মাঠে নেমে অবশ্য চারটিতে জিতেছে নিউজিল্যান্ড।
ভারত জিতেছে তিনটি ম্যাচ। এ হিসাবে এবার সমতা ফেরাতে চাইবে কোহলির দল। নকআউট পর্বের ম্যাচগুলোতে বরাবরই চাপে থাকে কিউইরা। ভারত ৬বার সেমিফাইনাল খেরে তিনটি ফাইনাল খেলেছে। অন্যদিকে কিউইরা ৭ মাত্র একবার ফাইনাল খেলতে পেরেছে।
গুরুত্বপূর্ণ এমন ম্যাচের আগে দুই দলের দুই ভাবনা। কিউই ব্যাটসম্যানরা সেরা ছন্দে নেই বলে একাদশ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। উদ্বোধনীতে রানহীনতায় সবাইকে ছাড়িয়ে নিউজিল্যান্ড। কাজ হয়নি জুটি বদল করেও।
মার্টিন গাপটিলের কাছে এ ম্যাচে অন্তত সেরাটা চায় দল। শেষ দুই ম্যাচে মিডল অর্ডারও ব্যর্থ হওয়ায় টানা তিন হারের চাপে পড়েছে ব্ল্যাক-ক্যাপসরা। কেন উইলিয়ামসন একাই টেনে চলেছেন দলকে। এই ম্যাচ তাই হয়ে যেতে পারে দুই দলের ব্যাটিং লড়াই।
অন্যদিকে একাদশ নিয়ে মধুর সমস্যায় ভারত। ব্যাট হাতে রেকর্ড ভাঙার নেশায় মেতেছেন রোহিত শর্মা। ওপেনিংয়ে তার যোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছেন লোকেশ রাহুল।
আর ধারাবাহিকতার প্রতীক হয়ে আছেন বিরাট কোহলি। আট ম্যাচে ৪৪২ রান তুলেছেন ভারতীয় দলপতি। কিন্তু এখনো ম্যাজিক ফিগারের দেখা পাননি। এ ম্যাচকে সেটা অর্জনের মঞ্চ বানাতে পারেন কোহলি।
তবে বোলার নিয়ে যথেষ্ট ভাবতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা বুমরাহ দলের মূল স্ট্রাইকিং বোলার। প্রতিটি স্পেলে কার্যকর প্রমাণ করায় তার খেলা নিশ্চিত। মাঝপথে সুযোগ পেলেও উইকেট শিকারে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন মোহাম্মদ শামী।
উইকেটে পিছিয়ে থাকলেও ডেথ ওভারে শামীর চেয়ে ক্ষুরধার প্রমাণ করেছেন ভুবনেশ্বর কুমার। পেস অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ডে অটোমেটিক চয়েজ।
তাই শামী আর ভুবনেশ্বরের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে কোহলিকে। আবার স্পিনে কূলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট ভুগিয়েছেন।
তবে উইকেট শিকারে এগিয়ে আছেন চাহাল। কিন্তু রান আটকাতে কূলদীপের বিকল্প নেই। তাই কাকে খেলাবেন কোহলি? নিউজিল্যান্ডের স্পিন দুর্বলতা মাথায় রাখলে অবশ্য দুজনকেই নামানোর সম্ভাবন বেশি।
ব্যাটিং নিয়ে দু:চিন্তা থাকলেও বোলিং নিয়ে তেমন চিন্তা নেই কিউইদের। যদিও ট্রেন্ট বোল্ট ও লুকি ফার্গুসনের সঙ্গে তৃতীয় পেসার হিসেবে কে খেলবেন সেটা নিয়ে কিছুটা দ্বীধা থাকতে পারে।
অভিজ্ঞ টিম সাউদি নাকি গতিময় ম্যাট হেনরিকে খেলবে ফাইনালে উঠার ম্যাচটি। অন্যদিকে স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও ইশ সোধির মধ্য থেকে সুযোগ পাবেন একজনই। কারণ স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা কতটা স্বাচ্ছন্দ্য তা অজানা নয়।
তাই ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃষ্টি বাধা অতিক্রম করে রোমাঞ্চকর ম্যাচ হবে-এমন অপেক্ষায় দুই দলের সমর্থকরা। আর কয়েক ঘন্টা পরই জানা যাবে আগামী ১৪ জুলাই লর্ডসের টিকিট কে পাচ্ছেন?