English Version
আপডেট : ৪ জুলাই, ২০১৮ ১৭:০১

যে পাঁচ কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে ব্রাজিল

অনলাইন ডেস্ক
যে পাঁচ কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে ব্রাজিল

সবার প্রত্যাশার পারদ তখনই উঁচুতে উঠতে আরম্ভ করে যখন তাদের কোনো প্রত্যাশিত দল জিততে থাকে। আর এইরকমই একটি প্রত্যাশিত দল ব্রাজিল। শেষ ষোলোর ম্যাচে মেক্সিকোকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা ব্রাজিলকেই শিরোপার প্রধান দাবিদার ভাবছেন বোদ্ধারা।

গত ম্যাচে মেক্সিকো সহসা না হলেও একটু কষ্ট করেই হারিয়েছে ব্রাজিল। এভাবে খেলতে থাকলে সেলেসাওদের ‘হেক্সা মিশন’ সফল হবে তাতে সন্দেহ আছে খুব কম ব্যক্তির।

শেষ ষোলোর ম্যাচে মেক্সিকোর মুখোমুখি হওয়ার আগে অনেকেই ভেবেছিলেন গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে দেওয়া মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটি জেতা কঠিন হবে ব্রাজিলের জন্য। তবে ব্রাজিল ঠিকই তাদের চ্যাম্পিয়নসুলভ পারফর্ম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচটি জিতে নেয়।

আর মাত্র তিন ম্যাচে জয় পেলেই বিশ্বকাপের ট্রফি ঘরে তুলবে সেলেসাওরা। তার আগে ৫টি কারণ তুলে ধরা হলো যেসব কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে ব্রাজিল।

প্রথম কারণঃ দুর্ভেদ্য রক্ষণ

কথায় আছে, আক্রমণ আপনাকে ম্যাচ জেতায় কিন্তু রক্ষণ ট্রফি জেতায়। এটা প্রকৃত অর্থেই সত্য। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে স্পেন ৭ ম্যাচে মাত্র ২ গোল হজম করেছিলো। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি মাত্র ৪ গোল হজম করে ট্রফি জিতে নিয়েছিলো।

২০০৬ সালে কঠিন রক্ষণের জন্য বিখ্যাত ইতালি মাত্র ২ গোল খেয়েছিল। চলতি আসরে ব্রাজিলের জালে মাত্র একবার বল প্রবেশ করেছে, সেটা গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ড ম্যাচে।

ব্রাজিল দলে থিয়াগো সিলভা-মিরান্দা দুর্দান্ত এক সেন্টার-ব্যাক জুটি গড়ে তুলেছেন। অন্যদিকে ফাগনার ও দানিলোর মাঝে সেরা রাইট-ব্যাক বাছাই করাই এখন কোচ তিতের জন্য দুষ্কর। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে না পারলেও যে কয়েক ম্যাচে খেলেছেন দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন মার্সেলো।

মার্সেলোর বৈশিষ্ট্য রক্ষণ ছেঁড়ে প্রায়ই আক্রমণে উঠে আসা। তখন তার জায়গা সুরক্ষিত রাখেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো। আবার মেক্সিকোর বিপক্ষে ইনজুরি আক্রান্ত মার্সেলোর বদলে নামা ফিলিপে লুইসও নিজের কার্যকারিতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এতেই বোঝা যায় ব্রাজিলের রক্ষণ কতোটা কঠিন ও সুরক্ষিত।

দ্বিতীয় কারণঃ শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ

মূল একাদশ ছাড়াও অনেক ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড় আছে বর্তমান ব্রাজিল দলে। তারা সারা মাঠ ছড়িয়ে খেলতে সক্ষম, চাই সেটা রক্ষণে ছবি: সংগৃহীত

কিংবা আক্রমণে হোক না কেন।

ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলকিপার এদারসন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষক। ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটির এই গোলরক্ষকের অসাধারণ সেভিং দক্ষতা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা হাসিল করায় পেপ গার্দিওলার দলের জন্য অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তারপরও তাকে জাতীয় দলের বেঞ্চ গরম করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলা রবার্তো ফিরমিনোর মতো তারকাকে বসে থাকতে হচ্ছে মূল স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসের জন্য। ফিরমিনো এমন একজন খেলোয়াড় যিনি যেকোন মুহূর্তে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন, তা বদলি হিসেবে নেমে হলেও।

এই তালিকায় আরও আছেন ফার্নান্দিনহো, মার্কুইনহোস, ডগলাস কস্তা, ফ্রেড ও টাইসন— লম্বা তালিকা সন্দেহ নেই। রিজার্ভ বেঞ্চের এই তালিকাই ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

তৃতীয় কারণঃ অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেল

ব্রাজিল দলের সব খেলোয়াড়ই ফুটবলের জন্য আদর্শ বয়স অতিবাহিত করছেন। আগের বিশ্বকাপে নেইমারের বয়স ছিল মাত্র ২২। এবার তার বয়স ২৬। অন্যদিকে থিয়াগো সিলভা ও মিরান্দার অভিজ্ঞতার ঝুলি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।তাদের দুজনের বয়সই ৩৩। ডিফেন্ডারদের জন্য সেরা ফর্ম দেখানোর আদর্শ বয়স ধরা হয় ৩০-৩৪ বছর।

মার্সেলোর বয়স ৩০, তার মানে এটাই তার সেরা ফর্মে থাকার শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। একই কথা বলা যায় ফাগনারের ক্ষেত্রেও। তার বয়স ২৯। আক্রমণে কুতিনহোর বয়স ২৬, যা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের জন্য একদম সঠিক বয়স। আরেক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার উয়িলিয়ানের বয়স ২৯।

এ তালিকায় সবচেয়ে অনভিজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বয়স মাত্র ২১ বছর। কিন্তু এটা তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না কারণ, দলটি এখন সেরা তারকাসমৃদ্ধ। পরের ম্যাচে হয়তো তার বদলে একাদশে রাখা হতে পারে ফিরমিনোকে (২৬), যিনি লিভারপুলের কোচ ইউর্গেন ক্লপের অধীনে দারুণভাবে গড়ে উঠেছেন।

চতুর্থ কারণঃ দায়িত্ব নেওয়ার মতো খেলোয়াড়ের অভাব নেই

গত বিশ্বকাপে ঠিক এই কারণেই বিশ্বকাপে সফলতা পায়নি ব্রাজিল। নেইমারনির্ভর দলটি ঠিক যখনই নেইমারবিহীন হয়ে গেল হেরে বিদায় নিলো তাও জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের ব্যবধানে। এবার সেই সমস্যা নেই। এই দলে সব সেরা তারকার উপস্থিতিই শুধু নয়, দায়িত্ববান খেলয়াড়েরও অভাব নেই।

সত্যি বলতে কি, ব্রাজিল এখনও তাদের সেরাটা দেখাতে পারেনি, তবু তারা এখনও রাশিয়ায় অপরাজিত আছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে অন্তত একজন করে হলেও দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিচ্ছেন। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন কুতিনহোর গোলে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।

কোস্টারিকার বিপক্ষে আবারও কুতিনহোর দায়িত্বপূর্ণ গোলে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিতের শিষ্যরা। সার্বিয়ার বিপক্ষে আবার থিয়াগো সিলভা ও পাওলিনহো গোল করে দলকে শেষ ষোলোর বন্দরে পৌঁছে দেন। আবার শেষ ষোলোর ম্যাচে উয়িলিয়ানের দারুণ পারফরম্যান্সে গোলের দেখা পান দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। আবার পরে নেইমারের সহায়তায় গোল করেন ফিরমিনো।

পঞ্চম কারণঃ উচ্চপর্যায়ের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড

ব্রাজিলের খেলার সবচেয়ে অবমূল্যায়িত অংশ সম্ভবত মধ্যমাঠের কাণ্ডারিরা। এই শতাব্দীর সব বড় দলই তাদের মিডফিল্ড বিশেষ করে সেন্টার মিডফিল্ডের শক্তিমত্তার উপর নির্ভরশীল যা পুরো দলকে একসূত্রে গাঁথার কাজটি সমাধা করেন।

২০০২ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করেন এদমিলসন। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ইতালির জেদি ও পাগলাটে গেনেরো গাত্তসো একই ভূমিকা পালন করেন। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে স্পেন দলের হয়ে এই ভূমিকায় দেখা দেন সার্জিও বুসকেটস ও জাভি আলোনসো (যদিও তিনি একইসাথে প্লে-মেকার ছিলেন) দারুণ এক জুটি গড়ে তুলেন।

একই ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির মিডফিল্ডে সামি খেদিরা ও বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগারের ক্ষেত্রেও। এবারের ব্রাজিল দলে আছেন এমন একজন। তিনি আর কেউ নন, কাসেমিরো। ইনি এমন একজন খেলোয়াড় যার তদারকি তথা রক্ষকবচের ভূমিকার কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগের টানা তিন শিরোপা ঘরে তুলে রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা বেল-বেনজেমাদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় তার পারফরম্যান্স।

ব্রাজিলের হয়ে পজিশনিং আর কাভারিংয়ে আরও বেশি শৃঙ্খলার পরিচয় দিচ্ছেন কাসেমিরো। তার কারণেই ব্রাজিলের ডিফেন্স এতো গোছানো। দুই হলুদ কার্ডের খাড়ায় কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারেবন না তিনি, যা তিতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তার উপস্থিতিতে ব্রাজিল দলের জয়ের সুযোগ সবসময়ই বেশি থাকে।

তবে ব্রাজিল দলে এতো বেশি বিকল্প আছে যে খুব বেশি ভাবতে হবে না তিতেকে। নেইমার-জেসুসরা ব্যর্থ হলে জ্বলে উঠতে পারেন কুতিনহো-ফিরমিনোরা। তারাও ব্যর্থ হলে আছেন উইলিয়ান-পাওলিনহো। সব বিচারেই বর্তমান ব্রাজিল দলটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। সৌজন্যেঃ বাংলানিউজ