নারিনের ব্যাটে জয় দিয়ে যাত্রা শুরু নাইটদের

নিলামের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই দল নিয়ে বেশি দূর এগতে পারবে না কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিন্দুকদের মুখে ঝামা ঘষে ঘরের মাঠ ইডেনে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ৪ উইকেটে হারিয়ে একাদশ আইপিএলে যাত্রা শুরু করল কেকেআর।
জয়ের কারিগর সুনীল নারিন। আইপিএলে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল মিস্ট্রি স্পিনার হিসাবে। রবিবাসরীয় রাতে নারিনের ব্যাটে রানের সুনামি দেখার পর তাঁর ব্যাটিং দক্ষতা এখন ক্রিকেট গবেষকদের কাছে চর্চার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। ১৯ বলে ৫০ করে নারিন যখন আউট হন, তখন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় কেকেআর। আস্কিং রেট এক ধাক্কায় অনেকটাই নেমে এসেছে। তার সুযোগ নিয়ে নীতিশ রানার মতো তরুণ ক্রিকেটারও সাহসী ইনিংস উপহার দিয়েছেন। নারিনের ইনিংসে রয়েছে চারটি বাউন্ডারি ও পাঁচটি ওভার বাউন্ডারি। স্ট্রাইক রেট ২৬৩.১৫। মূলত তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংই বিরাট কোহলিদের জয়ের আশায় জল ঢেলে দেয়! ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, এবি ডি’ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং তাণ্ডবে আরসিবি ৭ উইকেটে ১৭৬ তোলার পর ইনিংস বিরতিতে ইডেনে একটাই চর্চা ছিল, তারকাহীন কেকেআর কি পারবে এই ম্যাচটা জিততে? ক্রিস লিন ৫ রানে আউট হওয়ার পর নাইট সমর্থকদের প্রত্যাশার ফানুস অনেকটাই চুপসে গিয়েছিল। কিন্তু আশার আলো জ্বলে নারিনের ব্যাটে। ১৭ বলে তিনি হাফ-সেঞ্চুরি করার পর দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সেলাম জানায়। দ্বিতীয় উইকেটে রবীন উথাপ্পার সঙ্গে ৪৯ রান যোগ করেন নারিন। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন উমেশ যাদব। তাঁর বলে ৫০ রানে আউট হন ক্যারিবিয়ান অল-রাউন্ডারটি। রবীন উথাপ্পা ১৩ রান করেন। জোড়া সাফল্য আরসিবির বোলারদের মনোবল কিছুটা বাড়ালেও চাপের মুখে চোয়াল শক্ত রেখে দারুণ ব্যাটিং করেন নীতিশ রানা। দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তিনি ৫৫ রান যোগ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে ৩৪ রানে আউট হন নীতিশ। আন্দ্রে রাসেলের মতো তারকা থাকা সত্ত্বেও কেন রিঙ্কু সিংয়ের মতো নবাগতকে পাঠিয়ে অহেতুক ঝুঁকি নিয়েছিল কেকেআর, তা বোধগম্য হয়নি।
অধিনায়ক হিসাবে প্রথম ম্যাচে লেটার মার্কস নিয়েই পাস করলেন দীনেশ কার্তিক। ঝোড়ো ব্যাটে বিরাটদের হতাশা আরও বাড়ান রাসেল। তিনি ১৫ রানে আউট হন। বিনয় কুমারের (১) সহজ ক্যাচ ফেলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এই উইকেট পেলেও আরসিবি হয়তো জিততে পারত না। তবে আক্ষেপ করছিলেন কোহলি। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সাত বল বাকি থাকতেই দলের জয় নিশ্চিত করেন বিনয় কুমার (৬)। কার্তিক ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। এই শহরে ক্রিকেটপ্রেমীদের বিরাট প্রতীক্ষা ছিল ভারত অধিনায়ক কোহলির ব্যাটিং দেখার জন্য। মূলত কোহলির জন্যই শুরু থেকে ইডেনের গ্যালারিতে ধ্বনি উঠছিল ‘আরসিবি..আরসিবি…।’ মাঠে আসার পথেও কানে এসেছে বিরাটপ্রেমীদের অফুরান উচ্ছ্বাস। ইডেনের হোম টিম যে কেকেআর সেটা অন্তত একাদশ আইপিএলে প্রথম ম্যাচে শুরুর দিকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল। ইডেনে আসার পথগুলি প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল দর্শকদের ভিড়ে। চিমনির ধোঁয়ার মতো রাস্তা পেরোচ্ছিলেন ক্রিকেট জনতা। এটা স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে, গত দশ বছরে আইপিএল ঘিরে নানা বিতর্ক সামনে এলেও জনপ্রিয়তায় বিন্দু মাত্র আঁচড় বসাতে পারেনি। সপরিবারে নাইটদের হয়ে গলা ফাটাতে মাঠে ছিলেন শাহরুখ খান। সঙ্গে মেয়ে সুহানা।
টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন দীনেশ কার্তিক। গত আইপিএলে ইডেনে ৪৯ রানে অল-আউট হওয়ার আতঙ্ক নিয়েই ব্যাট করতে নেমেছিল আরসিবি। প্রথম ওভারে বিনয় কুমার ১৪ রান দেওয়ার পরেই স্পিনার পীযূষ চাওলার হাতে বল তুলে দেন কার্তিক। তার সুফলও মিলেছে হাতেনাতে। চতুর্থ বলেই কুইন্টন ডি’কককে ৪ রানে আউট করেন পীযূষ। তবে বিরাট কোহলি মাঠে নামার পর ম্যাকালাম হাত খুলে খেলেন। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ৪৫ রান। বিনয় কুমারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে টি-২০ ফরম্যাটে ন’হাজার রান পূর্ণ করেন ব্রেন্ডন (৪৩)। যতক্ষণ তিনি ক্রিজে ছিলেন, দর্শকদের ভরপুর আনন্দ দিয়েছেন। তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে ম্লান লাগছিল কোহলিকেও।
কেকেআরের মিস্ট্রি স্পিনার সুনীল নারিন রান তোলার গতিতে লাগাম টানেন। প্রথম দু’ওভারে তিনি মাত্র ৫ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন একটি উইকেট । সেই তুলনায় কুলদীপ যাদব ভালো বল করতে পারেননি। দ্বাদশ ওভারে মিচেল জনসনের প্রথম বলে এবি’র বিরুদ্ধে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। রিভিউতে দেখা যায় বল এবি’র ব্যাটেই লাগেনি। আউটের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। সেটাই যেন বাড়তি অক্সিজেন জোগায় এবি’র মনে। পরের দু’টি বলে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে পালটা জবাব দেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যানটি।
তৃতীয় উইকেটে কোহলি এবং এবি যোগ করেন ৬৪ রান। ১৫তম ওভারে অখ্যাত নীতিশ রানার জোড়া সাফল্য নাইটদের ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। তাঁর দ্বিতীয় বলে আউট হন ডি’ভিলিয়ার্স (৪৩)। তৃতীয় বলে নীতিশ বোল্ড করেন কোহলিকে (৩১)। এবি’র ইনিংসে রয়েছে পাঁচটি ছক্কা ও একটি চার। একটি ওভার বাউন্ডারি ও একটি বাউন্ডারিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কোহলিকে। ১৮ বলে মনদীপ সিং ৩৭ রান যোগ করেন।