বিপিএল শিরোপা : রংপুরের প্রথম, মাশরাফির চতুর্থ

দ্বিতীয় কোয়ালিয়ারের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট পাড়ায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল কার হাতে উঠছে বিপিএল সিজন-৫ এর ট্রপি? শক্তিতে রংপুর-ঢাকা ফিফটি-ফিফটি হওয়াতে এ নিয়ে ধাঁধায় ছিল ভক্তকূল। তবে কঠিন এই ধাঁধার উত্তর মিলল মঙ্গলবার। ঢাকাকে লজ্জাজনকভাবে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা স্পর্শের স্বাদ পেল মাশরাফি। জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়কের এটি চতুর্থ শিরোপা হলেও রংপুরের প্রথম।
বিপিএলের নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় ম্যাচটি। ম্যাচটিতে টস জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার সে সিদ্ধান্তটা যে মস্তবড় ভুল ছিল তা টের পাওয়া গেল রংপুর ইনিংসের ৬-৭ ওভার গড়ানোর পরই। কারণ এই সময় মিরপুরে রীতিমত ব্যাটিং ঝড় তুলেন রংপুরের দুই ব্যাটসম্যান ম্যাককালাম ও ক্রিস গেইল। দুইজনে মিলে গড়েন ২০১ রানের জুটি। নির্ধারিত ২০ ওভারে যা ভাঙতে পারেনি ঢাকার কোন বোলাররা।
ম্যাচটিতে ১৮ ছয় ও ৫ চারে ১৪৬* রান তুলেন গেইল। যা বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়া ব্রেন্ডন ম্যাককালাম খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। এই একটি রেকর্ড ছাড়াও আজকের ম্যাচে মোটে ৭টি রেকর্ড গড়েছেন গেইল (নিউজের শেষে ৭টি রেকর্ডের বিস্তারিত দেয়া হলো)। যাই হোক, সর্বোপরি গেইল-ম্যাককালামের রেকর্ডময় জুটিতে ২০৬ রান সংগ্রহ করে রংপুর।
২০৬ রানের জুটি গড়েন গেইল-ম্যাককালাম রংপুরের পাহাড়সময় টার্গেট পাড়ি দিতে নেমে রানের খাতায় একরান যোগ হতেই ওপেনার মেহেদী মারুফকে হারিয়ে বসে ঢাকা। এর পর দলীয় ২৯ রানের মাথায় ডেনলি (০), লুইস (১৫), পোলার্ডকে (৫) হারিয়ে একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়ে সাকিবরা।
এরপর অধিনায়ক সাকিব অনেক চেষ্টা করেন দলকে বিপদ সীমা থেকে বের করতে। কিন্তু না পারেননি। যেখানে ব্যর্থ বিগ বাজেটে কেনা ডেনলি-লুইস ও পোলার্ডের মতো বিশ্ব তারকারা। সেখানে চেষ্টা করেও ব্যর্থ সাকিব। দেশীয় অলরাউন্ডার নাজমুলের বল ব্যাট ঘুরিয়ে পেছনে মারতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে তার স্কোরবোর্ডে জমা হয় ২৬ রান। সাকিব আউট হওয়ার পর পরই মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক ও শহীদ আফ্রিদি।
তবে এতসব কষ্টের মাঝেও শান্তভাবে ব্যাটিং উপহার দেন ঢাকার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জহিরুল।ক্যারিবীয়ান তারকা নারিনকে নিয়ে দলের সম্মান রক্ষার্থে দলীয় স্কোরবোর্ডে কিছু রান যোগ করেন। তুলে নেন টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এর পর শেষ অবধি নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪৯ রানে থেমে যায় ঢাকার ইনিংস। অর্থাৎ ৫৭ রানে জয় তুলে নেয় রংপুর।
দলের বিপদের দিনে বল ও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন আফ্রিদি ম্যাচটিতে রংপুরের হয়ে সোহাগ গাজী-উদানা-নাজমুল দুটি করে উইকেট লাভ করেন। এছাড়া মাশাফি-রুবেল হোসেন ও রোবি বোপারা একটি করে উইকেটের দেখা পান।
অন্যদিকে রংপুরের একমাত্র উইকেটটি অর্জন করেন সাকিব আল হাসান।
প্রসঙ্গত, আজকের ম্যাচটিতে মোটে সাতটি রেকর্ড গড়েন ক্রিস গেইল।
৭. টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়। এর আগের রেকর্ড ছিল তারই। আইপিএলে ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোরের হয়ে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলার সময় ১৭টি ছয় মেরেছিলেন গেইল। আর বিপিএলে সর্বোচ্চ ছয়ের নিজের রেকর্ডও ভেঙ্গেছেন তিনি, এর আগে ছিল ১৪টি।
৬. টি-২০ ক্যারিয়ারে গেইলের বর্তমান রান সংখ্যা ১১১৭। আর বিপিএল দিয়েই ১১০০ রান পূর্ণ করলেন তিনি। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ রান ।
৫. বিপিএলের চারটি আসরের কোন ফাইনালে সেঞ্চুরির দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ৫ম আসরে এসে বিপিএল ফাইনাল দেখলো প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ইমরান নাজিরের, প্রথম ফাইনালে করেছিলেন ৭৫ রান।
৪. ১৪৬ রানে অপরাজিত। এটি বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইনিংস। এখানেও ভেঙ্গেছেন নিজের রেকর্ড। এলিমিনেটরে নিজের ১২৬ রানই ছিল সর্বোচ্চ। গেইলের ইনিংসটি যে কোনও টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালেরই সর্বোচ্চ ইনিংস।
৩. বিপিএলে ১০০ ছক্কা ছাড়িয়ে গেলেন গেইল। বিপিএলে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক ছয়, এরপর আছেন সাব্বির রহমান, তার ছয় ৪৭টি।
একম্যাচে সাতটি রেকর্ড গড়েন ক্রিস গেইল ২. ২০১* বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটি। জনসন চার্লস আউট হয়েছিলেন ৫ রানে। এরপর গেইল-ম্যাককালাম অবিচ্ছিন্ন ছিলেন ২০৬ রান পর্যন্ত। এ জুটি ভেঙ্গেছে ২০১৩ সালে লু ভিনসেন্ট ও শাহরিয়ার নাফিসের ১৯৭ রানের রেকর্ড।
১. বিপিএলে সর্বোচ্চ তিনটি শতকের মালিক গেইল। তার বর্তমান শতকের সংখ্যা ৩ টি।
রংপুর একাদশ: রংপুরের সম্ভাব্য একাদশ: ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, জনসন চার্লস, নাহিদুল ইসলাম, রবি বোপারা, মাশরাফী বিন মোর্তুজা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিথুন (উইকেট রক্ষক), সোহাগ গাজী, উদানা, নাজমুল ইসলাম ও রুবেল হোসেন।
ঢাকা ডায়নামাইটস: মেহেদী মারুফ, ইভিন লুইস, জো ডেনলি, কাইরন পোলার্ড, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), শহীদ আফ্রিদি, মোসাদ্দেক হোসেন, সুনীল নারিন, জহীরুল ইসলাম, আবু হায়দার ও খালেদ আহমেদ।