English Version
আপডেট : ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০৭:২৮

মাশরাফির রংপুরের শুভ সূচনা

অনলাইন ডেস্ক
মাশরাফির রংপুরের শুভ সূচনা

জয়ের লড়াইটা বড্ড দীর্ঘ হলো। তিন ঘণ্টার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষ হতে লেগে গেল চার ঘণ্টা।

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার বদলে ক্লান্তিকর প্রতীক্ষা। তবু শেষটা মধুরই হলো রংপুর রাইডার্সের। রাজশাহী কিংসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে জয়ে শুরু রংপুর রাইডার্সের জয়ের লড়াই। নতুন জার্সি নাম্বার শূন্য (০) পিঠে নিয়ে নবযাত্রা মাশরাফি বিন মর্তুজারও। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যাচভাগ্য খারাপ গেলেও মুদ্রাভাগ্য ভালো ছিল মাশরাফির। তিন ওয়ানডের সিরিজে প্রথম দুটোতেই তো টস জিতেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

রংধনুর দেশ থেকে রংপুর রাইডার্স, জার্সি নাম্বার ২ থেকে বদলে করেছেন ০। হয়তো গত বিপিএলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস আর বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর; মন থেকে মুছে ফেলতে চান এই দুটো অধ্যায়ই। নতুন যাত্রায় শুরুতেই পেয়েছেন ভাগ্যের সহায়তা, রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে জিতেছেন টস।

কিন্তু এরপর বোলিং নিয়ে সতীর্থদের সহায়তা পেয়েছেন কমই। নিজে ৪ ওভার বল করে টি-টোয়েন্টিতেও নিয়েছেন একটা মহামূল্যবান মেডেন ওভার, মাত্র ১৮ রান খরচায় পেয়েছেন রাজশাহীর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা রনি তালুকদারের উইকেট। কিন্তু বাকিরা? থেকেছেন নিজেদের ছায়া হয়ে।     ফিল্ডিংয়ে শ্লথ গতি, সঙ্গে যোগ হয়েছে ৪ পেসারের লম্বা রান আপ আর হেমন্তের রাতে চা বাগানের কোলের স্টেডিয়ামে চুইয়ে পড়া শিশিরভেজা মাঠ। সব মিলিয়ে ২০ ওভার বোলিং করতে রংপুর রাইডার্স সময় নিয়েছে ১১১ মিনিট যা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২১ মিনিট বেশি। রংপুর রাইডার্স প্রথম সাফল্য পায় মমিনুল হককে আউট করে, সোহাগ গাজীর বলে টানা সুইপ করার চেষ্টা করে যাওয়া মমিনুল অফস্টামেপর বাইরের বলেও স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। ক্যাচ তালুবন্দি করেন রুবেল হোসেন। লুক রাইটও খুব বেশিক্ষণ থাকেননি ক্রিজে, মাত্র ১১ রান করেই নাজমুল অপুর বলে ক্যাচ দেন থিসারা পেরেরার হাতে। মুশফিকুর রহিমও কাটা পড়েন ১১ রানেই। বোলার সেই নাজমুল অপু, বল তালুবন্দি করেন রবি বোপারা। রাজশাহী এভাবে উইকেট হারিয়েছে নিয়মিতই।  

একদিকে উইকেট আগলে রেখেছিলেন রনি তালুকদার, ৩৮ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও পারেননি। ৪৭ রানে বোল্ড হয়েছেন মাশরাফির বলে।

কিন্তু শেষ দিকে বেড়ে যায় রান তোলার গতি। জেমস ফ্রাংকলিন আর ড্যারেন সামি, টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞ এই দুই ক্রিকেটার রাজশাহীকে পার করান দেড় শর সীমানা। ২২ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থেকে যান ফ্রাংকলিন, ১৮ বলে ২৯ রান করে মালিঙ্গার বলে অ্যাডাম লিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন সামি। তাঁর ইনিংসে একটা চারের সঙ্গে আছে রুবেল হোসেনকে পর পর দুই বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারা দুটো ছক্কাও। শেষ বেলায় মেহেদী হাসান মিরাজের ৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৫ রানের ইনিংসটাও মহামূল্যবান! শেষ ৫ ওভারে ৫০ রানের ওপরে নিয়েছে রাজশাহী। ১৫ ওভার শেষে যেখানে তাদের রান ছিল ৫ উইকেটে ৯৬, সেখান থেকে ২০ ওভারে তারা ইনিংস শেষ করেছে ৮ উইকেটে ১৫৪ রানে অর্থাৎ শেষ ৩০ ডেলিভারি থেকে নিয়েছে ৫৮ রান। ইয়র্কারের আশায় একের পর এক ফুলটস দিয়ে গেছেন রুবেল, যার ফলও ভুগতে হয়েছে তাঁকে। ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান, পাননি কোনো উইকেট।

দলক দেড় শ পার করায় ব্যাট হাতে অবদান রাখা মিরাজ প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়ে দেন রংপুরের ইংলিশ ওপেনার অ্যাডাম লিথকে। স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই উইকেটের ঘরে ১। রংপুর প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে। ওদিকে জনসন চার্লসও ফরহাদ রেজার বলে এলবিডাব্লিউ হওয়ার পর ক্রিজে আসা শাহরিয়ার নাফীস শুরুতেই জীবন পেয়ে খোলসবন্দি হয়ে পড়লেও পরে মানিয়ে নেন। মোহাম্মদ মিঠুনও পরিস্থিতির দাবি মেটাতে হয়ে ওঠেন আক্রমণাত্মক। ৫৩ বলে আসে রংপুরের প্রথম ৫০ রান। নবম ওভারটা করেন মিরাজ, তাঁর ওভারের শেষ দুই বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে দুটো ছয় হাঁকিয়ে রানের গতি বাড়ান মিঠুন। পরের ওভারেও ফরহাদ রেজার বলে মারেন বাউন্ডারি। ১০ ওভার শেষে রংপুরের রান ২ উইকেটে ৬৪, অর্থাৎ শেষ ৬০ বলে জয়ের জন্য দরকার ৯১ রান, হাতে ৮ উইকেট।

মিঠুন ও নাফীসের ৪১ বলের হাফসেঞ্চুরি জুটিটা জয়ের পথেই রাখে রংপুরকে। মিঠুন নিজের হাফসেঞ্চুরিটাও পেয়ে যেতেন, কিন্তু বাদ সাধেন লুক রাইট। কেসরিক উইলিয়ামসের অফস্টামেপর বাইরের বলটা কাট করেছিলেন মিঠুন, পয়েন্টে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রাইট নেন অসাধারণ এক ক্যাচ।   ৩৩ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান মিঠুন। দলের রান তখন ৯০, জয়ের জন্য রংপুরের দরকার ৪৪ বলে ৬৫ রান আর হাতে ৭ উইকেট। সহজ এই অঙ্কটা আরো সহজ হয়ে যায় রাজশাহীর ফিল্ডারদের বদান্যতায়। অসাধারণ ক্যাচ ধরার পর একই জায়গায় রবি বোপারার সহজ ক্যাচ ফেলেছেন রাইট। বাউন্ডারিতে থিসারা পেরেরার ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি সামিত প্যাটেল। দুই দলের রান যখন সমান, তখনো পেরেরার ক্যাচ জমাতে পারেননি লুক রাইট।

বোপারার অপরাজিত ২৩ বলে ৩৯ রান আর পেরেরার ১২ বলে ২০ রানই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয় রংপুরকে। ৭ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই প্রথম ম্যাচটা জিতে বিপিএলে নতুন মালিকানায় শুভ সূচনা রংপুর রাইডার্সের।