ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল

সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান স্টিভেন স্মিথরা। প্রায় এক যুগ পর আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এবার আর কোনো সংশয় নেই।
এর আগে দলটির আসার কথা ছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যুতে সেবার আর আসেনি। এবারও সফর ভেস্তে যেতে বসেছিল। দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের আর্থিক বিষয় নিয়ে টানাপড়েনের জেরে। তবে শেষ পর্যন্ত সে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।
প্রতীক্ষাটা শুরু বোধহয় ২০১১ সাল থেকেই। সেবার বিশ্বকাপের পর পরই বাংলাদেশে তিনটি ওয়ানডে খেলেছিলো মাইকেল ক্লার্কের দল। বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট খেলা তখন যেন তাদের কাছে সময় নষ্ট করার সামিল। পরে কোন এক সময় এসে দুই টেস্ট খেলব, দিয়েছিলো এমন সান্ত্বনা। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে কত গাইগুই।
বোর্ড কর্তাদের অনেক দূতিয়ালির পর ২০১৫ সালে এসে রাজি হয় কুলীন দলটি। ঠিক হয় অক্টোবর-নভেম্বরে দুই টেস্ট খেলতে আসবে তারা। চূড়ান্ত হয় সূচি। ঘোষণা হয় দল। সব প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেধে মাঠে তখন বাংলাদেশ। বিমানে উঠার আগেই হঠাৎ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সফর বাতিল করে দেয় তারা। গণমাধ্যম জুড়ে তোলপাড়। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাষ্ট্রপ্রধান মানের নিরাপত্তার ওয়াদাও করা হয়। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়ে দেয় কিছুই করার নেই তাদের। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল নেই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঘোর অন্ধকার। নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানের মতো অচ্যুত হওয়ার শঙ্কা। সে শঙ্কা পরে বাড়িয়ে দিয়েছিলো হোলি আর্টিজেনের জঙ্গি হামলা। তবে সব তুড়ি মেরে উড়িয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা সিরিজ হয়েছে, এশিয়া কাপ হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজন করে নিরাপত্তার শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। তবে যুব বিশ্বকাপে ওই নিরাপত্তার অজুহাতেই দল পাঠায়নি অস্ট্রেলিয়া। যদিও বিশ্বকাপ প্রাক বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দল একদিনের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলো।
অস্ট্রেলিয়ার সব নিরাপত্তার শঙ্কা অবশ্য দূর হয়ে যায় গেল অক্টোবরে ইংল্যাড সিরিজে। ইংলিশদের সেবার ইতিহাসের সেরা নিরাপত্তা দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। তখন অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিজ চোখে এসে দেখে গেছেন তা। এবার যখন সিরিজের সূচি চূড়ান্ত হলো তখন আর নিরাপত্তার শঙ্কা নেই। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারল একাধিক সফরে সন্তুষ্ট হয়ে দিয়েছেন গ্রিন সিগন্যাল। সব যখন সম্পন্ন তখন আবার দেখা দিল নতুন সংকট। বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলনে গেলেন স্মিথ-ওয়ার্নাররা। তা এমনই অবস্থা দাঁড়ালো যে বোর্ড আর ক্রিকেটাররা একদম মুখোমুখি। কেউ ছাড় দিবে না। দাবি না মানলে বাংলাদেশ সফর বাতিলের হুমকিও দিয়ে বসলেন ক্রিকেটাররা। আবার দেশের ক্রিকেটে দুশ্চিন্তা। নিরাপত্তার সমস্যাও নেই, তবু ফসকে যাবে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপধারীদের সফর?
কয়েকদিন সবাইকে টান টান উত্তেজনায় রেখে দাবি মেনে নিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। হাসতে হাসতে অনুশীলনে ফিরে গেলেন স্মিথরা। ব্যাটে বলে শান দিয়ে বাক্স পেটরা গুছিয়ে হয়ে গেলেন তৈরি। আর কোন সংশয় নেই।
সফরে অস্ট্রেলিয়া শুধু দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে। ঢাকায় প্রথম টেস্ট ২৭ আগস্ট শুরু হবে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
২২ ও ২৩ আগস্ট দু’দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে সফর শুরু করবে অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচের নির্ধারিত ভেন্যু ফতুল্লা। তবে টানা বৃষ্টির দরুন ফতুল্লার মাঠে পানি জমে যাওয়ায় ভেন্যু বদল হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি হিসেবে অস্ট্রেলিয়া দল ডারউইনে অনুশীলন ক্যাম্প করে। সেখানকার কন্ডিশন ও উইকেট বাংলাদেশের মতো হওয়ায় স্মিথরা ডারউইনকে প্রস্তুতির জন্য বেছে নেন। সেখানে নিজেদের মধ্যে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে অস্ট্রেলিয়া দল।
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের কথা চিন্তা করে প্রস্তুতি ম্যাচে ছিলেন ছয়জন স্পিনার। এর মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজের কথা বেশি করে ভাবাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া দলকে। এ জন্যই তারা অফ-স্পিনার বোলারদের নিয়েই বেশি অনুশীলন করেছে।
এদিকে বাংলাদেশও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ সামনে রেখে কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রাথমিক দল নিয়ে অনুশীলন প্রস্তুতি সারছেন। বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে ম্যাচের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কেমন ব্যাটিং বা বোলিং করতে হবে সে হিসাবে অনুশীলন করেছেন মুশফিক-তামিমরা। নির্বাচকরা এরই মধ্যে চূড়ান্ত দল বিসিবি সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন।
শনিবার বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হতে পারে। দলে থাকতে পারে দু’একটি চমক।