প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই শুধু ব্যাটসম্যান মুশফিক

ক্রীড়া প্রতিবেদক : সেই শ্রীলঙ্কায়ই কিন্তু এক দশক আগে-পরের দুটি ঘটনায় কত মিল! ২০০৭ সালের সফরে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে তিন টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশের ইনিংস ও ২৩৪ রানের হার। কমবেশি সবাই খারাপ করেছিলেন ওই টেস্টে, তবে দলে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদের জায়গাটা নিয়েই যেন প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল বেশি। একই উপলব্ধি থেকে কলম্বোর পি সারা ওভালে পরের টেস্টের আগে মাসুদ নিজে থেকেই অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে গিয়ে বলেছিলেন যেন মুশফিকুর রহিমকে দিয়ে চেষ্টা করে দেখা হয়। এর বছর দুয়েক আগেই লর্ডসে টেস্ট অভিষেক মুশফিকের, তবে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক হিসেবে সেই শুরু তাঁর। এবার সেই শ্রীলঙ্কায় গিয়ে তাহলে তিনি নিজেই এর শেষ টেনে দিলেন? প্রশ্নাতীতভাবে তিনি দলের সেরা ব্যাটসম্যান, কিন্তু উইকেটের পেছনে তাঁর পারফরম্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল বেশ কিছুদিন থেকেই। ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট অনেকেও মনে করছিলেন উইকেটকিপিং ছেড়ে দিলে মুশফিক ব্যাটিংয়ে আরো মনোযোগী হতে পারবেন। যদিও বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক নিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন জানিয়ে বলেছিলেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার নেবে ম্যানেজমেন্ট। অবশ্য সিদ্ধান্তটি মুশফিক শেষ পর্যন্ত নিজেই নিয়েছেন। গল টেস্টে তিনি খেলবেন শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে।
সুবাদে কিপিং গ্লাভস উঠতে চলেছে লিটন কুমার দাশের হাতে। আর সেটি আজ থেকে মোরাতুয়ায় স্থানীয় দলের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ থেকেই। কলম্বোতে গিয়েই মুশফিকের শুধুই ব্যাটসম্যান বনে যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘হেড কোচের (চন্দিকা হাতুরাসিংহে) সঙ্গে মুশফিকের কথা হয়েছে। ও নিজেই উপলব্ধি করেছে যে এখন কিপিংটা ছেড়ে দিলে দল এবং ওর নিজের জন্যই ভালো হবে। এতে করে ও চাপমুক্ত হয়ে ব্যাটিংয়ে আরো মনোযোগী হতে পারবে। ’ লম্বা সময় কিপিং করার কারণে মুশফিককে কখনো কখনো বাধ্য হয়েই ব্যাটিং অর্ডারে একটু পিছিয়ে যেতে হয়। এ বছরই নিউজিল্যান্ড ও ভারতে তা-ই হয়েছে। টেস্ট অধিনায়ক ব্যাটিং করেছেন ছয় নম্বরে। তবে শ্রীলঙ্কায় তাঁর চার নম্বরে ব্যাটিং করাটা মোটামুটি নিশ্চিত। সেই সঙ্গে মুশফিক শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবে গল টেস্টের প্রথম একাদশেও পরিবর্তন একরকম নিশ্চিত। কারণ বিশেষজ্ঞ উইকেটকিপার হিসেবে লিটনকে তো একাদশে রাখতেই হবে। কিন্তু কার জায়গায়? তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটির পর ব্যাটিং অর্ডারের পরের এই জায়গাগুলোতেও পরিবর্তন আনার কোনো কারণ নেই—মমিনুল হক, মুশফিক, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদ উল্লাহ। চার বোলারের জায়গাও নির্ধারিত থাকার কথা। তাহলে এত দিন সাত নম্বরে ব্যাটিং করে আসা সাব্বির রহমানের জায়গাটিই লিটন নিতে যাচ্ছেন বলে খবর। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ভাষ্য নেই।
মুশফিকের উইকেটকিপিং নিয়ে দোটানা কেটে যাওয়ার পর এখন বাংলাদেশ শিবির মনোযোগ দিচ্ছে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রস্তুতি ম্যাচটিতে। এই ম্যাচটি তারা কলম্বো থেকে মোরাতুয়ায় যাওয়া-আসা করেই খেলবে। এমনিতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচগুলো এমন হয় যে ১৩-১৪ জনও খেলে থাকেন কখনো কখনো। কিন্তু ম্যানেজার মাহমুদ জানালেন, ‘এবার প্রস্তুতি ম্যাচটিকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। এটিকে আমরা টেস্ট ম্যাচ মনে করেই খেলব। তাই খেলবেও ১১ জন। ’ আর কলম্বোয় যাওয়ার পর কালই পুরোদমে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। আকাশ মেঘলা থাকলেও প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সেই অনুশীলন সারার সময় অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসহযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে টাইগারদের। সেটি অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। কারণ বাঁহাতি স্পিনারদের খেলতে অভ্যস্ত নয়, এমন দেশগুলো বাংলাদেশে এসে নেটে হাজার চেয়েও অনেক সময় এ ধরনের স্পিনারদের পায় না। বিদেশে গেলেও তাই এরকম বিরূপ কোনো অভিজ্ঞতা হলে হজম করতে হয়!