English Version
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৮:৪৪

দিন শেষে বাংলাদেশের সর্বনাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
দিন শেষে বাংলাদেশের সর্বনাশ

সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে দিন শেষে আফসোস হয়ে রইলো সৌম্য সরকারের আউট।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি এবং মুরালি বিজয় ও ঋদ্ধিমান সাহার সেঞ্চুরির বদৌলতে ৬৮৭ রানের এক ইনিংস গড়ে ভারত। সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ব্যাট হাতে নামে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। কিন্তু তামিম ইকবাল চ্যালেঞ্জে টিকে থাকলেও পরাস্ত হন সৌম্য সরকার। ৩টি চারের মারসহ ব্যক্তিগত ১৫ রান করে উমেশ যাদবের বলে আউট হয়ে যান তিনি।

উমেশ যাদবের ভেতরে আসা বলটি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ঠিকভাবে খেলতে পারেননি। ব্যাট সামান্য ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার হাতে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ আবেদন ভারতের পক্ষেই যায়।

দ্বিতীয় দিন শেষে সৌম্যর উইকেটটি হারিয়ে ৪১ রান করে বাংলাদেশ। তবে অপর প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করে ২৪ রানে অপরাজিত আছেন তামিম ইকবাল। তার সঙ্গী মুমিনুল হক অপরাজিত আছেন ১ রানে। আগামীকাল এ দুই ব্যাটসম্যানের ওপরই তাকিয়ে বাংলাদেশ।

হায়দ্রাবাদের ব্যাটিং স্বর্গে আরো একটা দিন ব্যাট হাতে রাজত্ব করলেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে নেমে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। অবশ্য দু'দিন ধরেই একের পর এক ভুল করে যাওয়ার মাশুল গুনল দল।

তবে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনটা আসলে বিরাট কোহলির। ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাই কী তাহলে পার করছেন তিনি? এইতো সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ২৩৫ রান করে ফিরেছিলেন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষেও ডাবল সেঞ্চুরি। রীতিমতো ইতিহাস গড়া যাকে বলে। টানা চার সিরিজে চারটি ২০০ ছাড়ানো ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসে এমন কীর্তি এর আগে কেউ গড়তে পারেনি! স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও রাহুল দ্রাবিড়কে টপকে গিয়ে এই রেকর্ড গড়লেন কোহলি।

এমন ইতিহাস গড়েই অবশ্য সাজঘরে ফিরে গেলেন ভারত অধিনায়ক। তাকে থামালেন তাইজুল ইসলাম। ২৪৬ বলে ২০৪ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। যেখানে ২৪ চারের সমাহার! এর আগে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই মহা তারকা। ভারতীয় মৌসুমে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের রেকর্ডও অবশ্য আগেই গড়ে ফেলেছেন কোহলি। এই মৌসুমে এখন তার রান ১১৬৮। আগের রেকর্ড গড়েন বিরেন্দর শেবাগ। ২০০৪-০৫ মৌসুমে, ১১০৫ করেন তিনি।

এরপর দলকে আরো পাহাড়ের আরো শিখরে নিয়ে গেছেন ঋদ্ধিমান এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দু'জন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে করেন ৭৪ রান। ৩৪ রান করা অশ্বিনকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

এদিন লাঞ্চ বিরতির আগে কোহলি আর আজিঙ্কা রাহানের জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। এ দু'জন ২২২ রানের জুটি গড়ে বেশ মজবুত অবস্থানে নিয়ে যান স্বাগতিকদের। মেহেদীর অসাধারন ক্যাচে রাহানে বিদায় নেয়ার আগে করেন ১৩৩ বলে ৮২ রান।

এদিনও দৃষ্টিকটু ফিল্ডিং দেখা গেছে বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত চার রানের সময়ই অবশ্য ফিরতে পারতেন ঋদ্ধিমান। কিন্তু তাইজুলের বলে স্টাম্পিংয়ের সহজতম সুযোগটা হাতছাড়া করেন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো অধিনায়ক মুশফিক। তাইজুলের বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেন নি। বল চলে যায় মুশির গ্লাভসে। প্রথম প্রচেষ্টায় বেল ফেলতে ব্যর্থ। পরে ফেললেও আর লাভ হয়নি, জায়গায় চলে আসেন ঋদ্ধিমান! তিনটি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। দুটি মেহেদীর। অন্য উইকেটটি তাসকিনের।

এদিন সকালে উইকেটে নামেন দুই নট আউট ব্যাটসম্যান কোহলি ১১১ ও আজিঙ্কা রাহানে ৪৫ রানে। সকালেই ব্যক্তিগত ৬২ রানের সময় জীবন পান রাহানে। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে পয়েন্টে ক্যাচ ভেসেছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সাব্বির সেটা হাতে জমাতে পারেন নি!

এর আগে বৃহস্পতিবার হায়দ্রাবাদ টেস্টের প্রথম দিনে টাইগারদের বিপক্ষে ভারত প্রথম ইনিংসের ৩ উইকেট হারিয়ে ৯০ ওভারে করে ৩৫৬ রান। বিরাট কোহলি ১৩০ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬ নম্বর সেঞ্চুরি তুলে নেন। লাইফ পেয়ে মুরালি বিজয়ের নবম টেস্ট শতরানের ইনিংসটি শেষ হয় ১০৮ রানে।

চেতেশ্বর পুজারা জীবন পেয়ে অবশ্য শতরান করতে পারেন নি। ৮৩ রানে ফিরে যান তিনি। ১৭৭ বলে ৯টি চারে ৮৩ রান করেন। রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচে অবশ্য টস জিতেন বিরাট কোহলি। ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি ভারত অধিনায়ক।