নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ

উইলিয়ামসন ও ব্রুমের ব্যাটিং দৃঢ়তায় নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ।
একটা সময় সিরিজ হার কিংবা হোয়াইটওয়াশ হওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল পরিচিত বিষয়। কিন্তু দেশের মাটিতে টানা ৬ সিরিজ জেতা বাংলাদেশ গত দুই বছর ধরে ক্রিকেটের খারাপ দিকটা যেন ভুলে গিয়েছিল।
দেশের মাটিতে ‘বাঘ’ হয়ে ওঠা টাইগারদের জয়রথ থেমেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। স্রেফ ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ খুঁইয়েছিল। এরপর টেস্ট জয়ের পর নতুন করে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাওয়া টাইগাররা আসে নিউজিল্যান্ড সফরে। কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে গেল ‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটি! অবিশ্বাস্য ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় ওয়ানডে সিরিজে কিউইদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ! তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি ৮ উইকেটে সহজে জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। নেলসনের সেক্সটন ওভালের পিচ এমনিতেই ব্যাটিং স্বর্গ। সেটা খুব নিষ্ঠুরভাবে প্রমাণ করলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং নেইল ব্রুম। দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর আজও সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থেকে আউট হলেন নেইল ব্রুম। সেঞ্চুরি করতে পারেননি অধিনায়ক উইলিয়ামসনও। তিনি ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে যথারীতি ভালো শুরু করে টাইগাররা। আজ হারলেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেতে হবে। তাই যে করেই হোক হার এড়ানোর লক্ষ্য টাইগারদের। দুই ওপেনার তামিম-ইমরুল মিলে বড় উদ্বোধনী জুটি গড়লেন। কিন্তু কিছু পরই দেখা গেল দ্বিতীয় ম্যাচের পুনরাবৃত্তি! ১ উইকেটে ১০২ রান থেকে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ রান করতে সক্ষম হলো সফরকারীরা! ৭৭ রানের মধ্যেই নেই ৭ উইকেট!
ইমরুল কায়েসকে দিয়েই দলীয় ১২৫ রানে শুরু হলো উইকেট পতন। স্যান্টনারের বলে নেইল ব্রুমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ৬২ বলে ৫ বাউন্ডারি এবং ১ ওভার বাউন্ডারিতে ৪৪ রান করা ইমরুল। এরপর সাব্বির রহমানকে সঙ্গী করে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তামিম। কিন্তু একে একে বিদায় নিলেন সাব্বির, মাহমুদ উল্লাহ। দলের এমন অবস্থায় দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হলেন তামিম। ৮৮ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৯ রান করে নিশামের বল নেইল ব্রুমের হাতে ধরা পড়লেন এই ড্যাশিং ওপেনার। এককথায় ধস নামল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে!
১০২ রানের উদ্বোধনী জুটি থেকে হঠাৎ করেই দেখা গেল ৭ উইকেটে ১৭৯! স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাব্বির (১৯), সাকিব (১৮), মোসাদ্দেক (১১) রান করলেন। আবারও ব্যর্থ হলেন মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ (৩)। আগের ম্যাচে ২ রান করা অভিষিক্ত তানভীর হায়দার আবারও সুযোগ পেয়েছেন একাদশে। কিন্তু করতে পারলেন মাত্র ৩ রান! রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হলেন অধিনায়ক মাশরাফি (১৪)। কিন্তু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান নিজের কাঁধে দায়িত্বটা নিলেন। দারুণ চাপের সময় খেললেন ৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস!
গত ম্যাচে এই অভিষিক্ত তরুণের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ২৩৬ রান তুলতে সক্ষম হয় সফরকারীরা। ম্যাট হেনরির বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন নুরুল হাসান। ৩৯ বলের ইনিংসটিতে তিনি ৩টি চার এবং ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
বাংলাদেশের দেওয়া ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের জাদুতে দলীয় ১০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ৪ রান করে মুস্তাফিজের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন টিম ল্যাথাম। নিজের তৃতীয় ওভারে নেইল ব্রুমের উইকেট নিতে পারতেন মুস্তাফিজ। কিন্তু স্লিপে দেওয়া সহজ ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হলেন ইমরুল কায়েস।
এরপর যেন বোলিং করতে ভুলে গেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। অপর ওপেনার মার্টিন গাপটিল রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর দুর্দান্ত জুটি গড়েন নেইল ব্রুম এবং অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দুজনে মিলে ১৭৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। ব্যক্তিগত ৯৭ রানে মুস্তাফিজুর রহমানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন নেইল ব্রুম। মাশরাফির হাতে ধরা পড়ার আগে ৯৭ বলের ইনিংসটিতে ১২টি চার এবং ১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ব্রুম।
এরপর জেমস নিশামকে নিয়ে সহজেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।