English Version
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৬ ১৮:৫৩

দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে শ্যামলী

অনলাইন ডেস্ক
দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে শ্যামলী

ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার পর নড়াইলকে এবার আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নিয়ে গেল আর্চারকন্যা শ্যামলী রায়। স্কুলপড়ুয়া এ শ্যামলী স্বপ্ন দেখতেন ভালো রেজাল্ট করে অন্যদের ছাড়িয়ে যাবার। কিন্তু তখন কি জানতেন বই-খাতা নয়, একদিন তার হাতের তীর-ধনুকই তাকে নিয়ে যাবে বিশ্ব অলিম্পিকে।

ছোটবেলার সুপ্ত প্রতিভাটাই তাকে দেশের হয়ে বিশ্ব আসরের ক্রীড়াযজ্ঞে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিয়েছে। ওয়াইল্ড কার্ডের সৌজন্যে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন এই শ্যামলী। স্বপ্নের সীমারেখা ছাড়িয়ে এখনও সেই রেকর্ড করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

৫ আগস্ট রিওতে শুরু হবে অলিম্পিক গেমস। এই তো ক'দিন আগে শ্যামলীকে নিয়ে কোনো মাতামাতি ছিল না। আর্চারি মানেই ইমদাদুল হক মিলনের নামটিই বেশি উচ্চারিত হতো। কিন্তু তিনি পারেননি ওয়াইল্ড কার্ড পেতে। পেয়েছেন অখ্যাত এক তরুণী। যার তীরন্দাজ হওয়ার পেছনের গল্পটাই ছিল ভিন্ন।

দুই বছর আগে পেশাদার আর্চার ছিলেন না শ্যামলী। ২০০৮ সালে নড়াইলে স্কুল পর্যায়ে আর্চারি ক্যাম্প হয়েছিল। সেখানে টিকে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর চলে আসেন ঢাকায়। আলোকিত পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে ২০১০ সালের এসএ গেমসের ক্যাম্পে ছিলেন।

কিন্তু কোনো এক অসুস্থতার জন্য ২০০৯ সালে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে হয় তাকে। সুস্থ হয়ে আবারো ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে ছিলেন অনিয়মিত। ২০১০ সালের পর থেকে মাঝে মাঝে ক্যাম্প আর কোনো গেমস থাকলেই কেবল ঢাকায় আসতেন। জাতীয় দল কিংবা কোনো কাবের হয়ে খেলেছেন। ২০১৩ সালে আর্মির হয়ে এবং একই দলের হয়ে অষ্টম বাংলাদেশ গেমসেও খেলেছেন শ্যামলী। এভাবে আর কতদিন? শ্যামলীরও যেন একঘেয়েমি চলে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালে জাতীয় দলে নিজের অবস্থানটা পাকাপোক্ত করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি নড়াইলে জন্ম নেওয়া এ আর্চারকে।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় শ্যামলী। এবছর ভারতে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসেও খেলেছিলেন। কিন্তু নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বলে শ্যামলী রায় বলেন, 'আমি রিকার্ভ ইভেন্ট খেলছি; কিন্তু কোনো রেজাল্ট নেই। আমার হাতে ব্যথা থাকায় ভালো খেলতে পারিনি।'

সেখানে পারেননি, তবে ডেনমার্কে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ঠিকই ভালো স্কোর করেছি। তাতেই অলিম্পিকে খেলার সুযোগ অর্জন করি। '২০১৫ সালে ডেনমার্কে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আমার স্কোরিং খুব ভালো ছিল। সেখানে আমার র‌্যাংকিং ভালো ছিল। তারপর ওই বছরের অক্টোবরের দিকে ব্যাংককে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাই। সেখানে আমার আরো ভালো স্কোর হয়। এবং সেখানেও র‌্যাংকিং ভালো হয়। আমার স্কোর এবং র‌্যাংকিং ভালো হওয়াতেই আমি ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছি।

'অথচ তখনও কল্পনা করতে পারেননি যে, রিও অলিম্পিকে খেলতে যাবেন তিনি। কারণ শ্যামলীর সঙ্গে ছিলেন মিলন, সুজন, মারমার মতো তারকারা। এই তিনজন থেকে যে কোনো একজনেরই সম্ভাবনা বেশি ছিল অলিম্পিকে খেলার। স্কোর কম হওয়ায় তারা পারেননি।

অলিম্পিকে শুধু অংশই নয়, দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনাই মূল লক্ষ্য শ্যামলীর। 'সবারই ভালো খেলার লক্ষে থাকে, আমার চেষ্টা থাকবে সে রকমই। আমি যেন সেখানে ভালো স্কোর করতে পারি এবং দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারি।

দেশের সুনাম মানে আমার সুনাম। যেন কিছু করে আসতে পারি। এখন জানি না কতদূর কী হতে পারে। এটা আমি ঠিক বলতে পারি না। তবে ভালো কিছু করার চেষ্টা করব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করনে শ্যামলী।