জয় দিয়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৮ রানে হারিয়ে স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার দিনে ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আবারো জ্বলে উঠলেন তামিম ইকবাল। তার অপরাজিত ৮৩ রানের সুবাদেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ডাচদের ১৫৪ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের দেয়া ১৫৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২০ ওভার শেষে ১৪৫ রান করতে সমর্থ হয় ডাচরা। শুরুটা ভালো করেছিল নেদারল্যান্ড। তবে ডাচদের রানের রেশ টেনে ধরেন আল আমিন। দলীয় ২১ রানে ডাচদের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন এই পেসার। বেরেসিকে সাব্বিরের ক্যাচ বানিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরান আল আমিন।
এরপর বাংলাদেশের জন্য পথের কাঁটা হয়ে থাকা স্টিভেন মাইবার্গকে ফেরান নাসির হোসেন। আউট হবার আগে ২৯ বলে ২৯ রান করেন মাইবার্গ। এরপর কুপার-বোরেন জুটিটাও বেশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। ১৯ বলে ২৪ রান আসে এই জুটিতে। তবে সময়মতো জুটিটো ভেঙেছেন সাকিব। সাকিবের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হন বেন কুপার। নেদারল্যান্ডের রান তখন ৭৭।
বোরেন-কুপারের চতুর্থ উইকেট জুটিটা বেশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। তবে দলীয় ১১২ রানে ডাচ অধিনায়ক পিটার বোরেনকে আউট করেন সাকিব আল হাসান। সেই ওভারের চতুর্থ বলেই বোরেনের সহজ একটা ক্যাচ ছেড়েছিলেন নাসির। তবে দুই বল ব্যবধানে সেই নাসিরের কাছেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে ডান ডাচ দলনেতা।
১৭তম ওভারের ভ্যান ডার মারইউকে আউট করে বাংলাদেশের জয়টা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন অধিনায়ক মাশরাফি। এই ম্যাচে অসাধারণ বোলিং করেছেন বাংলাদেশে দলপতি। চার ওভার বল করে মাত্র ১৪ রান দিয়ে এক উইকেট নেন মাশরাফি। বোরেন আউট হবার পর ডাচদের স্কোরবোর্ড স্থবির হয়ে পড়ে। উইকেটে টম কুপার থাকলেও তাসকিন-আল আমিনদের আটোসাট বোলিংয়ের সামনে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত রানে হারতে হয় ডাচদের।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব দুটি উইকেট নেন। এছাড়া আল আমিন ও মাশরাফি একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে তামিমের ৮৩ রানে ভর করে ৭ উইকেটে ১৫৩ রান করেছে বাংলাদেশ। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নেদারল্যান্ডস। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করে টাইগাররা। ৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১৮ রান। চতুর্থ ওভারের শুরুতেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ম্যাকিরিনের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ব্যারিসিকে ক্যাপ দিয়ে ফিরে আসেন সৌম্য। আউট হবার আগে ১৩ বলে ১৫ রান করেন এই ওপেনার। আর একবার ভালো শুরুর পরেও ইনিংসটাকে বড় করতে পারলেন না সৌম্য সরকার। এর আগে প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে বুখারির বলে ক্যাচ দিয়েও সে যাত্রায় বেচে যান সৌম্য।
এরপর বাংলাদেশের ইনিংসটাকে টানতে থাকেন তামিম-সাব্বির জুটি। এই জুটি ২৭ বল খেলে স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান যোগ করেন। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভ্যান ডার মারইউয়ের বলে বিশাল একটি ছয় মারেন সাব্বির রহমান। এরপরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পরেন এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়ার। অপরপ্রান্তে অবশ্য বেশ স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন তামিম ইকবাল। তবে খারাপ সময় যেন কাটতেই চাইছে না সাকিব আল হাসানের। বাছাইপবের্র প্রথম ম্যচেও রান পাননি এই অলরাউন্ডার।
ডাচ অধিনায়ক পেটার বোরেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে মাইবাগের্র হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাকিব। ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন সাব্বির। এরপর ১৩ ইনিংসে মাত্র একটি ত্রিশোর্ধ রানের ইনিংস রয়েছে সাকিবের।
এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যর্থ হলেও বিশ্বকাপে জ্বলে উঠে তামিমের ব্যাট। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে মারইউয়ের বলে দুই রান নিয়ে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন তামিম ইকবাল। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম।
হাফসেঞ্চুরি করতে মাত্র ৩৭ বল খেলেন তামিম। ৩টি চার ও দুটি ছয়ে এই হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। অর্ধশতকের পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন তামিম। তবে ১৫তম ওভারে আউট হয়ে ফির যান দি ফিনিশার খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। গুটেনের বলে আউট হবার আগে ৯ বলে ১০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদইল্লাহ ফেরার পরপরই আউট হন মুশফিকুর রহিমও। সাকিবের মতো তারও ব্যাটিং দুর্দশা কাটছে না। এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও ব্যর্থ হলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিক। অধিনায়ক মাশরাফি ফিরে যান ৭ রান করে। শেষ ওভারে তামিম ও আরাফাত সানি একটি করে ছয় মারলে ১৫৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
ভারতের ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার সাড়ে ৩টায় মাঠে নামে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), আরাফাত সানি, আল-আমিন হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
নেদারল্যান্ডস একাদশ: স্টিফেন মাইবার্গ, ওয়েসলে ব্যারেসি (উইকেটরক্ষক), বেন কুপার, টম কুপার, রোয়েলফ ভ্যান ডের মারওয়ে, টিম ভ্যান ডের গুগটেন, আহসান মালিক, লোগান ভ্যান বিক, পল ভ্যান মেকারেন, পিটার বোরেন (অধিনায়ক) ও মুদাসসার বুখারি।