গর্জে ওঠো বাংলাদেশ

এশিয়ার সেরা কে। কার ভাগ্যের শিকা ছিঁড়বে এটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। ইতিহাস, তথ্য বলছে ভারতের কথা। তবে অধিনায়ক শিরোমণি লড়াকু বীর মাশরাফি বিন মুর্তজার মত ভিন্ন। তার কথা ‘এ মুহূর্তে দলীয় একতা, দর্শক, মাঠ, ড্রেসিংরুম সব আমাদের ’। হ্যাঁ, তা তো সত্যি। আজকে ১৬ কোটির বুলন্দ আওয়াজ উঠবে আমরাই সেরা। তাদের সে আশীর্বাদ নিয়ে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এশিয়া কাপের ফাইনালে মাশরাফি বাহিনী মুখোমুখি হচ্ছে ধোনির ভারতের।
২২ মার্চ ২০১২। বাংলাদেশকে দুই রানে হারিয়ে ৫০ ওভারের এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। তীরে এসে তরী ডোবায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সেদিন কেঁদেছিলেন সাকিব, মুশফিকরা। কেঁদেছিলেন দেশের ১৬ কোটি বাংলাদেশি। টাইগারদের সেদিনের কান্না, হাসিতে রূপ নেয় গত বুধবার! সেই একই মঞ্চ, একই ভেন্যু, একই প্রতিপক্ষের (পাকিস্তান) বিপক্ষে পাওয়া গেছে ৫ উইকেটে জয় যা, টাইগারদের পৌঁছে দিয়েছে আরও একবার এশিয়া কাপের ফাইনালে। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। এ ম্যাচটি জিতলেই টাইগারদের মাথায় উঠবে এশিয়া সেরার মুকুট।
একটা সময় ছিল যখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। ক্রিকেটের ‘এল কাসিকো’ও বলা হয় পাক-ভারত ম্যাচকে। এ দুদলের মধ্যকার লড়াই রোমাঞ্চ ছড়ায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচও দিচ্ছে উত্তেজনার পালে বাড়তি হাওয়া। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকেই এশিয়ার এই দুদলের মধ্যকার খেলা মানেই বাড়তি উত্তাপ। দুদলের মর্যাদার লড়াইও। অবশ্য মর্যাদার সে লড়াইয়ে একবার পরাস্ত হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ক্যাচ মিস এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জয়বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে। তবে আগের ম্যাচের হার ফাইনালে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন মাশরাফি। তার মতে, ওই ম্যাচে যদি ২০০ রান ব্যবধানেও বাংলাদেশ জিতত তাহলেও ফাইনাল ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলত না। বাংলাদেশের অধিনায়ক জানান, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাই এমন, আপনাকে প্রত্যেক ম্যাচে ভালো খেলতে হবে। যেদিন খেলা সেদিন ভালো খেলতে পারলে তবেই জয় আসবে। এখানে আগের সাফল্য, ব্যর্থতা নতুন ম্যাচে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এবারই প্রথমবারের আয়োজন করা হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপ। ছোট ভার্সনের এ ক্রিকেট দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশ-ভারত ফাইনালের টিকিটের জন্য হাহাকার আরও একবার তারই প্রমাণ করল। তবে এ ফরম্যাটের ক্রিকেট এখনো ভালোমতো রপ্ত করতে পারেনি বলে ব্যাপক প্রচার ছিল টাইগারদের। তাদের পারফরম্যান্স গ্রাফও তার ইঙ্গিতবহ। এশিয়া কাপ কিন্তু সে ধারণা বদলে দিয়েছে। এশিয়ার দুই ক্রিকেট পরাশক্তি শ্রীলংকা ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ এখন বাংলাদেশ।
তবে এতকিছুর পরও মাটিতেই পা রাখছেন মাশরাফি। বলছেন, আমরা আগের চেয়ে ভালো খেলছি, কিন্তু এখনাে উন্নতির অনেক কিছু আছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আমাদের ল্য সেটিই। এশিয়ার ‘পাওয়ার হাউস’ হওয়া বা এই ধরনের কিছু নয়। অবশ্য মাশরাফি এটাও বলেছেন, ‘ফাইনাল হওয়ায় ম্যাচের আলাদা ফেভার রয়েছে। এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ। অবশ্যই এটা ফাইনাল, ফেভার আলাদা হবেই। তবে আমরা অন্যসব ম্যাচের মতোই দেখছি। নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই। গত তিন ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলতে চাই।’
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিরুদ্ধে আগের খেলা তিন ম্যাচেই পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগারদের। তবে মনে-মনে জয়ের বাসনা থাকলেও মাশরাফি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আজকের ম্যাচে ভারত-ই ফেভারিট। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশ কজন তরুণ ক্রিকেটার আছে। তারা যে শুধু সম্ভাবনাময়, তা নয় সেই সম্ভাবনাকে তারা কাজে লাগাতে পারছে। এটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। পারফরম্যান্স, তথ্য, ইতিহাস বলছে আজকের ভারত-বাংলাদেশের ফাইনালে ভারত পরিষ্কার ফেভারিট। এ মুহূর্তে আমাদের দলীয় একতা দারুণ। দর্শক, মাঠ, ড্রেসিংরুম সব আমাদের। তবে এটাই শেষ কথা নয়, সব কিছু পক্ষে থাকলেই যে দিন আমাদের হবে, এর নিশ্চয়তা নেই।’
গত বছর ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে বল হাতে আলো ছড়িয়েছিলেন মুস্তাফিজ। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেললেও চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় মুস্তাফিজ খেলতে পারছেন না ফাইনাল। মাশরাফি জানিয়েছেন, দলের সেরা বোলারকে ছাড়াই তারা খেলছেন। তার কথা, ‘মুস্তাফিজকে ছাড়া খেলছি, মানে এই মুহূর্তে আমরা আমাদের সেরা বোলারকে ছাড়া খেলছি। কিন্তু মুস্তাফিজের জায়গায় গত মাচে দেখেন, তাসকিন, আল আমিন সবাই ভালো করছে। এটা একটা দলের জন্য ভালো ব্যাপার, সেরা বোলার না থাকার পরও অন্যরা দায়িত্ব নিচ্ছে ও পারফর্ম করছে।’
ম্যাচপূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত দলের অধিনায়ক আসেন। গতকাল অবশ্য ভারতের অধিনায়ক ধোনি আসেননি। আসেন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রশংসা করলেও তিনি বলেছেন, ম্যাচটি তাদের কাছে অন্য ম্যাচের মতোই। এশিয়ার সব দলই ভালো খেলছে। বাংলাদেশও ভালো ক্রিকেট খেলছে।’
২০১২ এশিয়া কাপে খুব কাছে গিয়েও ছোঁয়া হয়নি শিরোপা। টি-টোয়েন্টিতেও বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবার শিরোপা জিততে চায়। মাশরাফি বলছেন, ‘ওরকম পরিস্থিতি হলে হয়তো বেটার হবে। তবে এভাবে বলতে পারব না যে, চার বছর আগের সেই ফাইনালে অত কাছে গিয়েছি বলেই এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। তবে যদি কোজ হয়, ও রকম পরিস্থিতি হলে হয়তো চার বছর আগের তুলনায় ভালো করতে পারব।’ অবশ্য ভাগ্য দেবীর সহায়তাও চাইছেন মাশরাফি। ‘খেলার মাঠে আমরা শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করব। নিজেদের যা করণীয়, সেটার সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করব। ভাগ্যকে পাশে পেলে জয়টা আমাদের হবে।’
ভারত ম্যাচে একাদশে চমক থাকে। ফাইনালেও একাদশে কোনো চমক থাকবে কিনা? মাশরাফি বলেন, ‘না, আমরা চমক দেওয়ার জন্য কিছু করব না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, ২০১৫ সাল থেকে আমরা বিশ্বাস করে আসছি, উইনিং কম্বিনেশন বলে কিছু নেই। প্রতিপক্ষ ও উইকেট মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
লড়াইটা একের সঙ্গে ১০-এর। জিতলে ঘরে উঠবে শিরোপা। আর হারলে, উত্তরটা শুনুন মাশরাফির মুখ থেকেই, ‘না জিতলে কিছুই না। আমি এটাই বিশ্বাস করি। এমন নয় যে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখানেই থেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। এই টুর্নামেন্ট খুব ভালো একটি বার্তা দিয়েছে, টি-টোয়েন্টিতেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিতলে অসম্ভব ভালো লাগবে।’