ছুটির আমেজে টাইগাররা

টানা ম্যাচের মধ্যে কাল পুরো দিন বিশ্রামে কাটালেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। বিশ্রাম মানে সারা দিনের ছুটি, যা ইচ্ছে করার স্বাধীনতা। পরশু রাতে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর এ নিয়ে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের ভাষ্যও ছিল তাই, কাল সারা দিন ছুটি। ওরা যা খুশি করুক।
এশিয়া কাপে এ দিনটার জন্যই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা ছিল সাকিব আল হাসানের। একদমই নিজের করে নেওয়ার মতো একটা দিন। সাকিবের খুশি এখন একটাই—সন্তানের সঙ্গ উপভোগ। গত নভেম্বরে জন্মের পর থেকে এই মাস চারেক সাকিব-কন্যা যুক্তরাষ্ট্রেই ছিল। মা-মেয়ে দেশে ফিরেছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। মাঝে একদিন টিম হোটেলে এনে সতীর্থ সবাইকে সন্তানের মুখ দেখানোর পরিকল্পনা ছিল বাবা সাকিবের। কী কারণে যেন সেটা আর হয়নি। অনুশীলন-খেলার ব্যস্ততায় নিজেও খুব বেশি সময় দিতে পারেননি পরিবারকে। এমনকি আরব আমিরাতের সঙ্গে ম্যাচ খেলছিলেন বলে বিমানবন্দরে যেতে পারেননি সন্তানের দেশে আসার দিনও। অবশেষে কালকের ছুটি চার মাসের কন্যাসন্তানের কাছে থাকার সুযোগ করে দিল। সন্তানের জন্য বরাদ্দ করা সময়টাতে আর কাউকে ভাগ দিতে চাননি সাকিব। মুঠোফোন বন্ধ করে রাখার কারণ হয়তো সেটাই।
সাকিবের তুলনায় তামিম ইকবাল বাবা হিসেবে আরও নতুন। সন্তানের বয়স মাত্র চার দিন। ব্যাংককে হাসপাতাল ছেড়ে মা-ছেলে হোটেলে উঠলেও তাদের দেশে ফেরার পরিকল্পনা এ মাসের ২০ তারিখে। ছুটির দিনটা তাই একা একাই বাসায় কাটিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার। ব্যস্ততা বলতে একটা কাজই ছিল। বাসায় বসে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এক ক্রীড়া সাংবাদিককে।
আল আমিনকে মুঠোফোনে পাওয়া গেল অনেক চেঁচামেচির মধ্যে। একদিন ছুটি পেয়ে নাকি তিনি ‘হাত ক্লিয়ার’ করছেন। শুনে একটু অবাকই হতে হলো। বোলিং অ্যাকশন তো সেই কবেই ক্লিয়ার করে এসেছেন! এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ১০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। তাকে এখন আবার নতুন করে ‘হাত ক্লিয়ার’ করতে হচ্ছে কেন? ভুল ভাঙালেন আল আমিন নিজেই, আমার ড্রাইভার নেই তো...তাই গাড়ি চালানোর হাতটা একটু ক্লিয়ার করলাম আর কি!
ফাইনালে উঠে দায়িত্ব বেড়ে গেছে সব ক্রিকেটারেরই! দেশকে এশিয়া কাপের প্রথম শিরোপা এনে দেওয়ার দায়িত্ব। সামর্থ্যের পুরোটা ঢেলে দিতে পারলে কাজটা অসম্ভব মনে করেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচে হারলেও মাঝের টানা তিন জয় ফাইনালে অন্য কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে অধিনায়ককে, পর পর দুই ম্যাচে উপমহাদেশের বড় দুটি দলকে হারিয়েছি। এ রকম জয়ের মধ্যে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের তুলনায় ফাইনালে আমরা নিশ্চয়ই আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকব।সঙ্গে আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন—আত্মবিশ্বাস, প্রত্যাশা এসবের কোনোটাই অতিরিক্ত থাকা ভালো নয়। ভারত মহাশক্তিধর দল। তাদের হারাতে ভালো খেলার বিকল্প নেই।
পরশু ফাইনালে ওঠার পর জয়ের উদযাপন মাঠেই শেষ করে ফেলেছিল মাশরাফির দল। এরপর সব শান্ত। মাশরাফি তো এমনও বললেন, আমরা বিশ্বকাপ জিতলেও আমাদের সেলিব্রেশন এ রকমই হবে। যা করার আমরা মাঠেই করি, এরপর হয়তো ড্রেসিংরুমে একটু মজা হয়।
৬ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে পরদিন সকালেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্দেশে দিল্লি উড়াল দেবে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে ভাড়া করা বিমানে ধর্মশালা। তার মানে পরিবারকে বাড়তি সময় দেওয়া দূরের কথা, ব্যাগ গোছানোর সময়টাও ক্রিকেটারদের হাতে থাকছে না! মাশরাফির কাছে এটি পেশাদার ক্রিকেটের বাস্তবতা, এই আত্মত্যাগটুকু তো করতেই হবে। খেলোয়াড়দের পরিবারও সেটা করছে। একসময় এগুলোতে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না। এখন হয়ে গেছি। অনেকটা জয়ের অভ্যাসের মতোই কি?