English Version
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১২:৪৯

সোনার মেয়ে সীমান্ত-শীলা (ভিডিওসহ)

অনলাইন ডেস্ক
সোনার মেয়ে সীমান্ত-শীলা (ভিডিওসহ)

 

মাইকে তখন বাজছে—আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...। জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন জানিয়ে সমানে কাঁদছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। কে জানে, এত চোখের জল কোথায় জমা ছিল? পুরস্কার মঞ্চে ওঠার পর থেকেই অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন  সীমান্ত। কাঁদছেন ফেডারেশনের সব কর্মকর্তা, কোচ। এ যে বড় সুখের কান্না!

বাবা হারুনুর রশীদ ঢাকার খিলগাঁওয়ে মুদির দোকানদার। টাকার অভাবে পড়ালেখা একসময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সীমান্তর। ভারোত্তোলনে এসে আনসারের চাকরি পেয়েছেন। এখন সংসারেও হাসি ফুটেছে। আবারও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে সীমান্তর সীমান্ত এখন আকাশছোঁয়া, আমি এবার অলিম্পিকে খেলতে চাই।

ভারোত্তোলনে কাল মেয়েদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতলেন সীমান্ত। অধরা সোনার পদক ধরা দিল গেমসের তৃতীয় দিনে এসে। স্ন্যাচ এবং ক্নিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৪৯ কেজি ওজন তুলে সোনা জিতেছেন সীমান্ত। শেষ বিকেলে আরেকটি সোনা এসেছে সাঁতার থেকে। মেয়েদের ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনা জিতেছেন মাহফুজা খাতুন শিলা। সোনার আলোয় রাঙিয়ে দেবেন, এক দিন আগেও হয়তো ব্যাপারটা সীমান্তের কাছে ছিল দূর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। কাল সোনা জয়ের পর তাই বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাঁর, সোনা জিতে আমি একটু অবাকই হয়েছি!

অবাক তো হবেনই! এসএ গেমসে পদকের লড়াইয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো সাহস কমই দেখাতে পারেন ভারোত্তোলকেরা। তাই রুপাটাকেই নিয়তি মেনে নেন সবাই। এর ওপর গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুশীলনের সময় কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন সীমান্ত। চিকিৎসক তাঁকে সাবধান করে দিয়ে না খেলারই পরামর্শ দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত হাতে ব্যথা নিয়েই খেলেছেন। এবং সোনা জিতে বাজিমাত করেছেন। সোনা জয়ের পর বললেন সেই শঙ্কার কথা, কাল রাতে হাতের ব্যথাটা অনেক ছিল। কনুই ভাঁজ করতে পারছিলাম না। গরম সেঁক দিয়েছি। হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম খেলতেই পারব না। তবে সকালে যখন দেখি ব্যথাটা অনেক কমে গেছে তখনই খেলার সিদ্ধান্ত নিই।

সোনা জয়ে ভাগ্যের সহায়তাও অনেকটা পেয়েছেন সীমান্ত। না হলে কি আর সম্ভাব্য সোনাজয়ী ভারতীয় প্রতিযোগী রিনা ওভাবে লিফট মিস করেন! রিনা স্ন্যাচে প্রথম দফায় ৮৫ কেজি তোলেন। পরেরবার ৮৯ কেজি তুলে সোনার লড়াইয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে যান। কিন্তু এরপর স্ন্যাচের শেষ লিফট ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কের তিনটি লিফটই নিখুঁতভাবে তুলতে ব্যর্থ হন। সীমান্ত অবশ্য ক্লিন অ্যান্ড জার্কে প্রথমবার ভার তুলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরের দুটি ঠিকঠাকই তোলেন। এতেই সোনার পদক ধরা দেয় মাদারীপুরের মেয়ের হাতে।

ভারোত্তোলনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে মেয়েরা। সেই ধারাবাহিকতা থাকল প্রথমবারের মতো এসএ গেমসে এসেও। এর আগে মালয়েশিয়ায় ২০১৩ কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে রুপা জেতেন সীমান্ত। পরের বছর উজবেকিস্তানে আফ্রো-এশিয়া কাপেও রুপা। ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডে কিংস কাপে ব্রোঞ্জ। নেপালে প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্রোঞ্জ ছিল। বক্সিং কোচ মামা শাহাদাত কাজী জোর করেই একদিন ভারোত্তোলনে নিয়ে এসেছিলেন। খেলতে চাইতেন না বলে মামার কাছে কত বকাও খেয়েছেন। কাল পদক জিতে তাই সবার আগে মামাকেই স্মরণ করলেন, মামার জন্যই এত দূর এসেছি। সীমান্তর সোনা জয়ের পর দিনের দ্বিতীয় সাফল্য এল সারুসাজাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। শেষ বিকেলে সোনা রঙে রাঙিয়ে দিলেন মাহফুজা খাতুন শিলা। কাল ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনা জিতেছেন ১ মিনিট ১৭: ৮৬ সেকেন্ড। গত আসরে এই ইভেন্টে সেকেন্ডের ভগাংশ ব্যবধানে সোনা মুঠো ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল। সোনা জয়ের পর কাল তাই উচ্ছ্বসিত।

মাহফুজা বলেন, গতবার সোনা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল। এবার সেটা জিততে পেরে কী যে ভালো লাগছে! যশোরের মেয়েটি এখন সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাফল্য পেয়েও ফেডারেশনের অবহেলা কুড়ান মাহফুজা। কাল সোনার পদক হাতে নিয়ে উগরে দিলেন সেই ক্ষোভ, গত জাতীয় সাঁতারে সাফের টাইমিং টপকেছি। নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছি। তবুও অলিম্পিকে বা অন্য কোনো হাইপারফরম্যান্স ট্রেনিংয়ে যেতে পারি না। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো মেয়ে সাঁতারু সোনা জিতলেন এসএ গেমসে। এমন সাফল্যের পরও কি উপেক্ষার যন্ত্রণা সইতে হবে মাহফুজাকে?

সেই অসাধারণ ভিডিওটি দেখুন এখানে