টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছেন মাশরাফি?

টেস্ট খেলছেন না অনেকদিন ধরেই। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট তার চোটে জর্জরিত দেহের জন্য উপযোগী না। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির দলের দায়িত্ব নিয়ে গত এক বছরে বাংলাদেশকে নতুন ক্রিকেট শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হারের পর হার আর সমালোচনায় জর্জরিত টাইগারদের এক জাদুকরী শক্তিতে জিততে শিখিয়েছেন। ফিরিয়ে এনেছেন আত্মবিশ্বাস। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে ২৮ ম্যাচে ২০ বার জয়ের সুবাস পাইয়ে দিয়েছেন দলকে। সাফল্য ৭১.৪২ শতাংশ। তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তদের নয়নের মণি বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অধিনায়কদের একজন মাশরাফি বিন মুর্তজা। চোট যার নিত্যসঙ্গী। শারীরিকটা প্রকাশ্য কিন্তু মানসিকটাও তো কম নয়। মনে আছে নিশ্চই ২০১১ বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে কেঁদেছিলেন এই লড়াকু যোদ্ধা। তারপর অশ্রু মুছে আবারও শুরু করেন লড়াই্। সেই লৌহমানব মাশরাফি চোটের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে আবারও ফিরে আসেন ক্রিকেট মাঠে। অধিনায়ক হিসেবে ২০১৫ বিশ্বকাপে দলকে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সময় তার বয়স হবে ৩৫। আমজনতা বলে থাকেন, আজ থেকে আরও ত্রিশ বছর পর যদি বৃদ্ধ মাশরাফি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়ে মাঠের এক কোনায় বসে থাকেন তবুও দশজন খেলোয়ার নিয়েই বাংলাদেশ জিতবে। যদিও বিনয়ী মাশরাফি সবসময় সফলতার কৃতিত্ব দেন দলকে। সেই মাশরাফি নাকি টি-টোয়েন্টি ঘরনার ক্রিকেট থেকে অবসরের চিন্তাভাবনা করছেন! এমনটা শোনা যাচ্ছে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অথবা পরে আনষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। যদি গুজব সত্যি হয় তবে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ভারতের এই টুর্নামেন্টটাই তখন হয়ে যাবে মাশরাফির ক্যারিয়ারের শেষ বড় আসর।
তার সাবেক গুরু বর্তমান জিম্বাবুয়ে দলের কোচ ডেভ হোয়াটমোর ভালবেসে ম্যাশের নাম দিয়েছিলেন ‘পাগলা’। সেই ‘পাগলা’ মাশরাফি সারা জীবন বলেছেন, টি-টোয়েন্টি কোনো ক্রিকেটই না। জিম্বাবুয়ের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনেও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন, টেস্টের বিকল্প আসলে কিছুই নয়। অথচ এই মাশরাফিই এখন পর্যন্ত হওয়া তিন বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক! নিজে যে খেলাটা পছন্দ করেন না, কোন জাদুবলে, কোন মহামন্ত্রে সেখানেও উজ্জীবিত করে তোলেন ১১টি প্রাণ? টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন বলতে কিছুই নেই। কিন্তু মাশরাফি এখনো আছেন বলেই মানুষের আস্থা আছে যে এবার কিছু একটা হবে। যিনি ওয়ানডে দলকে আমূল বদলে দিয়েছেন তিনি কেন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকেও আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে তুলে দিতে পারবেন না? বরাবরের ‘নির্লিপ্ত’ মাশরাফি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে মাশরাফি এখন শুধুই একজন ‘ব্যাক্তি’ নন। তিনি সমগ্র দেশের নয়নের মণি। ক্রিকেটভক্তদের আবেগের জায়গাটাও তিনি বিবেচনা করবেন বলে আশা করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের চিন্তার কারন হিসেবে বলা যেতে পারে চোটের ভয় এবং আরো বেশ কয়েকবছর ওয়ানডে খেলার ইচ্ছা। ওয়ানডের মতো সামনের তিন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও যদি বাংলাদেশের বাঘের চেহারাটা ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তখন তো ‘ম্যাশ’ নামক মহামানবের কীর্তি ধরে রাখতে একটা আলাদা জাদুঘরই বানাতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অবসরের গুজব সম্পর্কে মাশরাফি বলেছেন, আসলে কোথায় শেষ হবে নিজেও জানি না। তবে এটুকু বুঝি, হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যাবে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখবেন আমি আর খেলছি না। আমার সবকিছু এ রকম হঠাৎ করেই হয়। দু্ই পায়ে সাত-সাতটি অপারেশন। পায়ে আর কোন বাড়তি লিগামেন্ট নেই। আরেকবার চোট পেলে অনিবার্য পঙ্গুত্বর দিকে যেতে হবে তাকে। এইরকম ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কার পরও যিনি দেশের জন্য মাঠে লড়াই করেন, বল হাতে বাঘের মত ছোটেন উইকেটে তাকে কি অবসর না নেয়ার অনুরোধ করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা? আবেগ আর বাস্তবতার তুলনায় সেটা কতটুকুই বা যৌক্তিক হবে?