English Version
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১২:০২

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি নিয়ে শিগগিরই বসবেন অর্থমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি নিয়ে শিগগিরই বসবেন অর্থমন্ত্রী

পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নে করহার কমানোসহ অর্থমন্ত্রীর কাছে বেশকিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) প্রতিনিধিরা। বাজারের স্বার্থে এসব প্রস্তাব কার্যকর করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে শিগগিরই বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়নের দায়িত্ব পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও থাকবেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের এনএসই সম্মেলনকক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী। আর পুঁজিবাজারে অগ্রগতিতে উদ্যোগ নিতে অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালকে অনুরোধ করেছে ডিএসই ও ডিবিএ। বৈঠকে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি, সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান এবং ডিবিএর প্রেসিডেন্ট মোঃ শাকিল রিজভী। এতে পুঁজিবাজার ছাড়াও ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি খাত নিয়ে আলোচনা হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবনায় রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নির্দিষ্ট ডিভিডেন্ড পলিসি থাকা উচিত। বর্তমান বাজারে স্টক (বোনাস শেয়ার) ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার পর এক সময় উদ্যোক্তারা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যায়।

প্রস্তাবে রকিবুর রহমান বলেন, বাজার বিকাশের স্বার্থে লাভজনক সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আনতে আইনী বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। আইপিওর মান নিশ্চিত করতে হবে। এমন কিছু কোম্পানি আছে, যাদেরকে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি, গ্যাস ও এলপিজি বিপণনকারী কোম্পানি, টেলিকম খাতের কোম্পানি ইত্যাদি। এসব কোম্পানির লাইসেন্সে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত আরোপ করা যেতে পারে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। কারণ এই কোম্পানিগুলোর গ্যারান্টেড মার্কেট আছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকার কিনে নেয়। এই নিশ্চিত ও নিরাপদ মুনাফার সুবিধাভোগী অল্প কিছু মানুষ। দেশের সাধারণ মানুষ এই মুনাফার কোনো ভাগ পায় না। কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সাধারণ মানুষ লাভবান হবে।

তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রজেক্ট (নতুন এয়ারপোর্ট, পুরাতন এয়ারপোর্ট সম্প্রসার, পাওয়ার প্রজেক্ট, এলপিজি টার্মিনাল) কোম্পানিতে রুপান্তরিত করে জনগনকে সম্পৃক্ত করার জন্য বাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে, এতে জবাব দিহিতা বাড়বে। বাজারে কোম্পানি আনার জন্য ইনটেনসিভ দিতে হবে, একই সঙ্গে লিস্টেট কোম্পানির জন্য টেক্স কমাতে হবে, নন লিস্টেট কোম্পানির জন্য টেক্স বাড়াতে হবে। অডিট রিপোর্ট যাতে জবাবদিহি হয়, যেনতেন অডিট রিপোর্ট যাতে কোনো কোম্পানি দিতে না পারে সেজন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল কে শক্তিশালি করা করা উচিত। উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির ব্যাপারে রেস্টিকশন দেয়া হউক, কোনো কোম্পানি সম্প্রসারনের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অর্থ নেয়া বন্ধ করতে হবে, স্বল্প মূলধনী কোম্পানি এবং জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি মূল মার্কেটে রাখা যাবে না, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে রিফার্নিশ করতে হবে। আর এসব কার্যক্রম বাস্তাবায়ন করতে পারলেই বাজারের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।

উন্নয়নের জন্য দেশের বাইরে থেকে টাকা না এনে পুঁজিবাজার থেকে টাকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, শিল্পায়নে ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন না করে এই অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হবে।

অন্যদিকে, ডিবিএ প্রেসিডেন্ট মোঃ শাকিল রিজভী আইপিও অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক উদ্যোক্তা বাজারে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

পুঁজিবাজারের বিকাশের স্বার্থে দ্বৈত কর প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি কোম্পানি তার মুনাফা থেকে সরকারকে কর দেয়। সেই করপরবর্তী মুনাফা থেকে দেওয়া লভ্যাংশ বিতরণকালে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উৎসে কর কেটে রাখা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ পেলে তা ওই কোম্পানির আয়ের সঙ্গে যোগ হয় এবং তার ওপর আবার কর দিতে হয়। একই আয়ের উপর একাধিকবার কর দেওয়ার বিষয়টি মোটেও যৌক্তিক নয়। এছাড়া শেয়ার লেনদেনের উপর বিদ্যমান কর হার কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

পরবর্তীতে প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম, পরিচালক রকিবুর রহমান ও মিনহাজ মান্নান ইমন, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানীজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: খলিলুর রহমান, ডিবিএ’র সহ-সভাপতি ডি রোজারিওসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।