English Version
আপডেট : ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ১৮:০৯

নতুন আইপিও শেয়ার নিয়ে যা বললেন বিএসইসি কমিশনার

অনলাইন ডেস্ক
নতুন আইপিও শেয়ার নিয়ে যা বললেন বিএসইসি কমিশনার

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে দুর্বল কোনো কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায়, তবে বিনিয়োগকারীদের উচিত এ ধরনের কোম্পানিকে প্রত্যাখ্যান করা। এতে পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ থাকবে না। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) অডিটোরিয়ামে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সোমবার একথা বলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বিনিয়োগ শিক্ষা ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ইউল্যাবের স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক ইমরান রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার খন্দকার কামালউজ্জামান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের ৮০ শতাংশই ব্যক্তিশ্রেণীর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আর এ বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই কোনো ধরনের বিনিয়োগ শিক্ষা ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। এটি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা। বাজার সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকার কারণে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এজন্য তারা সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই দোষারোপ করেন। তাই বিনিয়োগকারীদের সচেতন করে তুলতে বিএসইসি গত বছর থেকে বিনামূল্যে প্রতি কার্যদিবসে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

পুঁজিবাজারে আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নিরীক্ষক ও ইস্যু ব্যবস্থাপকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা কোম্পানির যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রসপেক্টাস তৈরি করেন। ফলে এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষকদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার বিষয়টি উল্লেখ তিনি বলেন, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রচেষ্টায় নিরীক্ষকদের জবাবদিহিতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে তাদের আরো বেশি জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি অনুপস্থিত উল্লেখ করে অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী বলেন, আইপিওতে আসা কোম্পানির ক্ষেত্রে অনেক সময় ২৫-৩০ গুণ পর্যন্ত আবেদন পড়তে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত আইপিওতে আসা কোনো কোম্পানিকেই সাবস্ক্রিপশনের সময় বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাখ্যান করেননি। যদি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিওর কোনো কোম্পানিকে প্রত্যাখ্যান করতেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আন্ডাররাইটারকে (অবলেখক) বাধ্যতামূলকভাবে শেয়ার কিনতে হতো। এতে আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে আন্ডাররাইটার ও ইস্যু ব্যবস্থাপকরা আরো বেশি সতর্ক হতেন এবং দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ পেত না। পাশাপাশি আইন-কানুন মানার ব্যাপারে অনীহার কারণে অনেক ভালো কোম্পানির উদ্যোক্তারাই পুঁজিবাজারে আসতে চান না উল্লেখ করে তিনি উদ্যোক্তাদের এ ধরনের মানসিকতা পরিহারের আহ্বান জানান।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান মেনে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বিএসইসির কমিশনার খন্দকার কামালউজ্জামান বলেন, বিনিয়োগকারীদের নিজেদের স্বার্থের সুরক্ষাসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। এক্ষেত্রে ডিপোজিটরি আইন ১৯৯৯-এর আওতায় বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের সুবিধা গ্রহণে পরামর্শ দেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে সিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, দেশের অর্থনীতি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে পুঁজিবাজার এগোচ্ছে না। তবে দেশের পুঁজিবাজারের উজ্জ্বল সম্ভবনার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আগামী কয়েক বছরে দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বাড়াতে হবে। আর সেজন্য পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থায়নের চেয়ে সহজ কোনো বিকল্প নেই বলেও মত দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক এ স্থায়ী প্রতিনিধি।