পুঁজিবাজারে ঝুঁকি কমাতে নতুন আইন করছে বিএসইসি

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মূলধনঝুঁকি কমাতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে। এ আইনের আওতায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কমপক্ষে পাঁচ কোটি, পূর্ণাঙ্গ স্টক ব্রোকার ও ডিলারের ১৫ কোটি টাকা এবং পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকের ৩৫ কোটি টাকা মূলধন থাকার বাধ্যবাধকতা থাকছে নতুন আইনে।
বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মধ্যে এক কোটি পর্যন্ত মূলধন রয়েছে ১৭ প্রতিষ্ঠানের, পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত মূলধন রয়েছে ৯৪টির, ১০ কোটি টাকা রয়েছে ৫৪টির, ২০ কোটি টাকা রয়েছে সাতটির, ২৫ কোটি টাকা রয়েছে চারটির, ৪০ কোটি টাকা রয়েছে ১১টির, ৭৫ কোটি টাকা রয়েছে ৯টির, ১০০ কোটি টাকা রয়েছে পাঁচটির, ২০০ কোটি টাকা রয়েছে আটটির এবং ৪০০ কোটি টাকা মূলধন রয়েছে ১১ প্রতিষ্ঠানের।
খসড়া আইনে ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা (রিস্ক বেইসড ক্যাপিটাল এডেকোয়েসি) আইনের খসড়ায় পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ৩৫ কোটি টাকা রাখার নির্দেশনা রযেছে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব মাস বা প্রান্তিক (তিন মাসে এক প্রান্তিক) শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই কমিশনে জমা দিতে হবে। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আইনটি বাস্তবায়নে তিন বছর সময় চেয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই যাদের পর্যাপ্ত মূলধন নেই, সেটা পূরণ করবে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
প্রস্তাবিত আইনে সাধারণ স্টক ব্রোকার থেকে মার্জিন ঋণদাতা সবার জন্যই পৃথক মূলধন থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজার ও ফান্ড ম্যানেজারের জন্য ন্যূনতম মূলধন থাকার বিধান করা হচ্ছে। এখন সাধারণ স্টক ব্রোকারের কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন বা পাঁচ কোটি টাকা মূলধন থাকতে হবে। হোলসেল ট্রেডারের তিন কোটি বা ৩০ মিলিয়ন, মার্জিন ঋণদাতার ৫০ মিলিয়ন বা পাঁচ কোটি, স্টক ডিলারের জন্য পাঁচ কোটির সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি টাকা, আর একটি পূর্ণাঙ্গ স্টক ব্রোকার বা ডিলারের জন্য ১৫ কোটি বা ১৫০ মিলিয়ন টাকা মূলধন থাকতে হবে।
মার্চেন্ট ব্যাংক ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, যারা পুঁজিবাজারে নতুন কম্পানি আনতে কাজ করে তাদের মূলধন থাকতে হবে ৫০ মিলিয়ন বা পাঁচ কোটি টাকা, আন্ডাররাইটারের জন্য অতিরিক্ত আরো ১৫ কোটি টাকা, পোর্টফোলিও ম্যানেজার (মার্জিন ঋণ) অতিরিক্ত ১৫ কোটি টাকা আর পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন থাকতে হবে ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ আইনটি আরো আগেই প্রয়োজন ছিল। অনেক ব্রোকারের ন্যূনতম কোনো মূলধন নেই, কিন্তু পাবলিকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর মূলধন ঝুঁকিতে পড়ে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা আইনের শর্তানুযায়ী ১৭টি ব্রোকারেজ হাউস ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ স্টক ব্রোকারের পাঁচ কোটি টাকার মূলধন থাকার যে শর্ত সেটি মানতে পারছে না। জানা যায়, এই ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মূলধন রয়েছে এক কোটি টাকা বা কিছুটা বেশি। যদিও থাকতে হবে পাঁচ কোটি টাকা।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এ আইনটি সময়োপযোগী। তবে ব্রোকারদের সময় দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা তিন বছর সময় চেয়েছি। আমাদের অবস্থাও বুঝতে হবে।’ ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মূলধন বেঁধে দেওয়া শর্তের চেয়ে কম আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মূলধন কম থাকা সমস্যার সমাধানে একটু সময় দিতে হবে। কারণ হঠাৎ করেই তো এত মূলধনের জোগান আসবে না। তবে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউস কৌশলগত অংশীদারের কাছে শেয়ার বিক্রি থেকে প্রায় চার কোটি টাকা পাবে। সেই টাকা দিয়ে মূলধনের জোগান নিশ্চিত করতে পারবে।