ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা বাড়ানো যুক্তিসংগত

ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তা অত্যান্ত যুক্তিসংগত বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
রাজধানীর পূর্বানী হোটেলে সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পুঁজিবাজার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ড. মশিউর রহমান বলেন, ব্যাংকে যে পরিমান অলস টাকা পড়ে আছে, সেখানে আরও টাকা দিলে অলস টাকার পরিমান বাড়বে। অলস টাকা বাড়লে ব্যাংক আমানত নিতে অস্বীকার করবে। তাই এই মুহুর্তে বেশি টাকা ব্যাংকের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যুক্তিসংগত হবে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অত্যান্ত যুক্তিসংগত।
এখন যদি কেউ এটি বাস্তবায়ন না করতে চায়, তাহলে তার শক্ত যুক্তি দেখাতে হবে এতে- ‘অর্থনীতির ক্ষতি হবে’ যেটাকে বলে বাবল। বাবল সৃষ্টি হয়, যদি হঠাৎ টাকা আসে। বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা বাড়ানো সঠিক ভাবে হলে বাবাল হওয়ার সুযোগ নাই। তাই এ মুহুর্তে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা বাড়ানো একান্ত আবশ্যক, বলেন মশিউর রহমান।
এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে ছিলেন ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা বাড়িয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত করা হবে। এরপর আমরা গেলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলে এটি আসতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। গেলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে চিঠি লিখলে আমরা ওকে করে দিবো। এরপর আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে গেলাম তিনি পুঁজিবাজারের স্বার্থে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
এরপর অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের সামনে কথা দিয়েছেন বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা বাড়ানো হবে। সে সময় অর্থ সচিবও উপস্থিত ছিলেন। আমরা খতিয়ে দেখলাম যে আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেই আইন পরিবর্তন না করেই সমন্বয়ের সীমা বাড়ানোর সুযোগ আছে। এখন শুনছি কয়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রীকে বোঝানো হচ্ছে এই সুযোগ দেওয়া হলে বাজার কারসাজি ও বাবল হবে। আমরা কোন অর্থ খুজে পাচ্ছি না এটাতে কিভাবে বাজার বাবল হবে জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর লক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজড করা হয়েছে। তবে অনেক বিজ্ঞরা এ বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন। ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হয়েছে কিন্তু শেয়ারবাজারে ইতিবাচক না হওয়ায় তারা সমালোচনা করেন।
সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি কারনে ২০১০ সালের পরবর্তী সময়ে ফোর্সড সেল করা সম্ভব হয়নি বলে জানান খায়রুল হোসেন। সবমিলিয়ে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি আরিফ খান বলেন, শুধুমাত্র ফি নিতে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে মার্চেন্ট ব্যাংকের সুপারিশ করা ঠিক না। সম্পূর্ণ ডিউ ডেলিজেন্স পালন করে একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। এছাড়া একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে টাকা সংগ্রহ থেকে শুরু করে তা ব্যবহার পর্যন্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষে তদারকি করা দরকার।
তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুযায়ি বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্বাস করে না। এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য করে প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ মিথ্যা অ্যাকাউন্টস প্রকাশ করতে পারে না। যদি করে সেটা ক্রিমিনাল অপরাধ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিন ড. মোহাম্মদ মূসা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি মো. সায়েদুর রহমান। এসময়ে বক্তব্য রাখেন প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন, ডিএসইর সাবেক জৈষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী, ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী।