English Version
আপডেট : ২০ এপ্রিল, ২০১৬ ১১:০০

শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় দুই আসামিকে জেল-জরিমানা

এমএজামান
শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় দুই আসামিকে জেল-জরিমানা

 

সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে ২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন পুঁজিবাজার মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা, অনাদায়ে আরও অতিরিক্ত ৬ মাস কারাদণ্ড দেন।

বুধবার (২০ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন—সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডর চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমান। মামলার শুরু থেকেই তারা দুইজন পলাতক রয়েছেন। আসামিদের আটক বা তাদের আত্মসমর্পণের দিন থেকে এ কারাদণ্ডের হিসাব শুরু হবে।

রায়ে রিচারক বলেন, অভিযুক্তরা পারস্পরিক যোগসাজশে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন। তদন্ত কমিটির তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারা লঙ্ঘন করেছেন। যা একই অধ্যাদেশের ২৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য।

বিএসইসি’র আইনজীবী মাসুদ রানা খান আদালতের রায়ে সন্তুষ্টিট প্রকাশ করে বলেন, আসামিরা অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন-তা প্রমাণে সফল হয়েছি।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩জন সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন-বিএসইসি’র উপ-পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুব রহমান ও সিডিবিএল এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী।

তবে মামলার সাথে জিয়াউর রহমানের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকায় তার সাক্ষ্য আমলে নেয়নি ট্রাইব্যুনাল।

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার বিচারকার্য শুরু হয় এবং ১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য ২০ এপ্রিল দিন ধার্য্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

বুধবার (২০ এপ্রিল) রায় ঘোষণার সময় ট্রাইবুন্যালে একমাত্র বিএসইসি’র আইনজীবী মাসুদ রানা খান উপস্থিত ছিলেন।

সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০০৪ সালে বিএসইসির তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ আলী খান ও পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে বিএসইসির পক্ষে মামলা দায়ের করেন।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানের অস্বাভাবিক লেনদেন তদন্তে কমিশন ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন— খায়রুল আনাম খান ও শুভ্র কান্তি চৌধুরী। খায়রুল আনাম খানের মৃত্যুর পর তার স্থলে ফরহাদ খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটির তদন্তে কাশেম সিল্ক মিলসের শেয়ার অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি ধরা পড়ে। ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বরে ২০ লাখ শেয়ারের কোম্পানিটির ১ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০টি ১৬.১৪ শতাংশ বেশি দরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়। এই লেনদেন ও দর বৃদ্ধি ছিল অস্বাভাবিক।

১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বরে এসপিএম কাশেম সিল্কের ৩৮ লাখ ৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ক্রয় ও ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ১০০টি শেয়ার বিক্রয় করে। যা কাশেম সিল্কের ওইদিনের শেয়ার লেনদেনের ৩৬.৪৬ শতাংশ ও ৩৫.৩০ শতাংশ।

তদন্ত কমিটি দেখতে পায় মো. মহিবুর রহমান ২৪.২৭ টাকা দরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন ও ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেন। তিনি দুপুর ১২টা থেকে ১.৩৫ মিনিট পর্যন্ত সময়ে টানা ২২ লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার ক্রয় করেন। এরপরে ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আরও ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন। তিনি ২১.৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ ২৫.৯০ টাকা দরে শেয়ার ক্রয় করেন।

এতে একই দিনে নিষ্পত্তি ব্যর্থতা এড়াতে বিক্রেতারা সৈয়দ মহিবুর রহমানের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে মহিবুর রহমান ডিকটেটেড মূল্য ২৬ টাকা করে বিক্রয় শুরু করেন। এবং ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেন। এর মাধ্যমে মহিবুর রহমান ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৯ টাকা ও বাকি থাকা ৯২ হাজার ৩০০ শেয়ার মুনাফা করেন।

মহিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ টাকা ডিপোজিট করেন। যা প্রকৃতপক্ষে শেলী রহমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তার স্বামী লুৎফর রহমান চেকের মাধ্যমে ডিপোজিট করেন। যা ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয়ে ব্যবহার করা হয় না। মহিবুর রহমান এই শেয়ার ক্রয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকার রেমিটেন্স ব্যবহার করেন। এখান থেকে তদন্ত কমিটি বুঝতে পারে যে, ডিপোজিটকৃত টাকা অর্থায়ন করেন শেলী রহমান।

মহিবুর রহমান ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকা অর্থায়ন করে ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। যা ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশের ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারায় জালিয়াতি। এক্ষেত্রে এসপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান, চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও মহিবুর রহমান যোগসাজশের মাধ্যমে এ অনিয়ম করেছেন বলে তদন্তে বলা হয়।

বিএসইসির এ তদন্তের প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে মামলা দায়ের করে বিএসইসি। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারা লঙ্ঘনে ২৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়।