খোঁড়াখুঁড়ির শেষ নেই, ভোগান্তি সারা বছর

শীত কিংবা গ্রীষ্ম এমন কি বাদ যায়নি বর্ষাও। সব ঋতুইে সমানতালে চলছে রাজধানীর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে অপরিকল্পিতভাবে এ খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সারা বছরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। যদিও নিয়মে বর্ষা মৌসুমে কোনো ধরনের খোঁড়াখুঁড়ি না করার কথা রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোথাও কখনো সে নিয়ম মানা হয়নি। বরং বছরজুড়েই চলমান থাকে খোঁড়াখুঁড়ি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়ক উন্নয়ন, মেরামত এবং বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে বর্ষার মৌসুম। এবারও বর্ষায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। সঠিক সময়ে সড়কের কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। প্রতিবছর রাজধানীতে ওয়াসা, পিডিবি, টিঅ্যান্ডটি, সড়ক বিভাগ ও সিটি করপোরেশনসহ সেবা প্রদানকারী ২৬টি সংস্থা কেউ কারো সাথে কোন সমন্বয় ছাড়াই নিজেদের প্রয়োজনে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে থাকে। দেখা যায়, সড়ক বিভাগ ও সিটি করপোরেশন নতুন সড়ক নির্মাণের পরের দিনই অন্য কোনো সংস্থা এসে ওই সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। ঢাকা শহরে সড়ক বিভাগের চেয়ে সিটি করপোরেশনের সড়কের পরিমাণ বেশি। বর্তমানে সড়ক বিভাগ ও সিটি করপোরেশন উভয় সংস্থার সড়কেই উন্নয়নকাজ চলছে। বর্ধিত মিরপুর রূপনগর এলাকার সড়কগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকার দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ি না করার কথা থাকলেও সে নিয়ম কখনোই মানা হয়নি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ি চলেই। কিছু সড়ক খুঁড়ে পাইপ বা কেবল বসানোর কাজ শেষ করার পর দীর্ঘদিন পড়ে থাকে অরক্ষিত। সব সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির শেষ চাপ গিয়ে পড়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর। বৃষ্টি হলেই পানি জমে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পথ চলতে গিয়ে নগরবাসীকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর জনঘনত্বপূর্ণ পুরান ঢাকার চানখারপুল থেকে হোসনি দালান পর্যন্ত একমাস ধরে সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। মতিঝিল আরামবাগ এলাকা সড়ক কেটে ড্রেনেজের রিং বসানো হচ্ছে। এসময় কাদামাটি সড়কের উপরে রাখায় যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে এ ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। মিরপুরের ১৪ নম্বর থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত নতুন করে সড়ক বিভাজন নির্মাণের কাজ চলছে। একইভাবে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে মিরপুর ১ নম্বর পেরিয়ে শাহ আলী মাজার এলাকা পর্যন্ত সড়ক বিভাজনের জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। শাহ আলী বিপণিবিতানের পেছন থেকে আমতলী বাজার হয়ে ইব্রাহিমপুর এলাকার দিকে যাওয়ার পথটিতে মাটির নিচে কেবল বসানোর জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। মিরপুর রূপনগর এলাকায় একাধিক সড়ক খোঁড়া হয়েছে সড়কগুলো সম্প্রসারণ করার জন্য। সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে আগারগাঁও হয়ে মিরপুর ফলপট্টিতে এসে মিলিত হওয়া ৬০ ফুট বলে পরিচিত সড়কেও। বিমানবন্দর সড়কের বনানীর কাকলী এলাকায় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। একইভাবে মাটির নিচে বিদ্যুতের তার স্থাপন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্য বনানী এলাকার ১০ নম্বর, ৮ নম্বরসহ মোট ১৩টি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার চৌধুরী গলিতে ওয়াসা সড়ক খুঁড়ে নতুন ভাবে পানির লাইন বসানো হচ্ছে। একইভাবে দেখা যায় আজিমপুরের বাংলা প্রেসের গলিতেও সড়ক খুঁড়ে পানির লাইন বসানো হচ্ছে। গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা, খিলক্ষেত এলাকা, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর, বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত প্রধান সড়ক, ডেমরার সিটি করপোরেশনের বর্ধিত অংশ এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির উন্নয়নকাজ চলছে।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার একাধিক গলি ও সড়কে কোনোটার সম্প্রসারণ, কোনোটার সংস্কার এবং কোনোটার ড্রেনেজব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য বড় আকারের রিং বসানোর কাজ চলছে। সড়ক বিভাগ রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কেও উন্নয়নকাজ চলমান রেখেছে। এতে করে আমিন বাজারের পর থেকে জাহাঙ্গির নগর বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত তিব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বর্ষায় রাস্তা খোঁড়াখুড়ির কাজ চলায় সড়ক সংকুচিত হওয়ার ফলে ঝুকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
এবিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ভোরের পাতাকে বলেন, এটি সমন্বয়হীনতার অভাব। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা কোন সূদুর প্রয়াসি কাজ না। অনেক সময়ের বিষয় না, এটা শুধু সদিচ্ছার বিষয়। জনদুর্ভোগকে প্রাধান্য দিয়ে কোন সংস্থাই কাজ করছে না। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দিলেও তারা অন্য সংস্থার সাথে সমন্বয়ের কোন উদ্যোগ নেয় নাই। তারা শুধু সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া প্রতি বছর জুন মাসে বরাদ্দের একটা বিষয় থাকে যে কারণে সংস্থাগুলো এসময়গুলোতে বেশি খোঁড়াখুঁড়ি করে। এবিষয়ে জানতে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।