আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত উত্তরা ৯ নং সেক্টরবাসী

রাজধানীর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, কাগজে-কলমে আবাসিক হলেও বাড়ি বাড়ি গড়ে উঠেছে করপোরেট অফিস আর দোকান পাট। ফুটপাত দখল করেছে টং দোকান। কল্যাণের নামে কল্যাণ সমিতি করছে নিরব চাঁদাবাজি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট, চোরাই ব্যবসায়ীদের আনাগোনা, বখাটেদের আড্ডা আর কিশোর গ্যাংদের মারপিটের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত সেক্টরবাসী। ফলে আবাসিক সুবিধার আশায় উত্তরা ৯ নং সেক্টরে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা বসবাসকারীরা পড়েছেন বিপাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশকে বারবার জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে দিন দিন বসবাসের আগ্রহ হারাচ্ছেন বাসিন্দারা। এখানে প্রতি রাস্তায় বাণিজ্যিক ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন আবাসিক বাড়ি ও প্লটে কাঁচাবাজার, মুদি-মনোহারি দোকান, খাবার হোটেল, রড-সিমেন্টের দোকান, মোটরগাড়ির শোরুম, ক্লিনিক, ওষুধের দোকান, গ্রিল ওয়ার্কশপ, কাঠ, বাঁশ ও ফার্নিচারের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
বাণিজ্যিক ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯নং সেক্টর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল সংলগ্ন আবাসিক প্লটগুলো।এছাড়াও হাসপাতালের বাহিরে রাস্তার দুপাশে দাড়ানো থাকে শ’খানেক বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স। যায় ফলে এসব রাস্তায় প্রায়ই দেখা যা্য় জানযট।রয়েছে একই সেক্টরের রোড ১, ২, ৩, ৪ ও পানির ট্যাংকি এবং কল্যাণ সমিতির কার্যালয় সংলগ্ন আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক একাধিক প্রতিষ্ঠান। উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের দেয়াল ঘেসে ৪ নং রোডে গড়ে উঠেছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি দোকান। রয়েছে পুরানো মালামাল কেনার ভাঙারির দোকানও। অভিযোগ আছে সাইফুল নামের এক ব্যাক্তি দীর্ঘদিন যাবত সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চোরাই মালামাল কেনা বেঁচা করেন এখানে বসেই। ৯নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির কিছু অসাধু গার্ডকে কমিশন দিয়েই চালাচ্ছেন তিনি এই ব্যবসা। তাছাড়া ৯ নং সেক্টর কাঁচাবাজার ও আবদুল্লাহপুর সংলগ্ন বেশির ভাগ প্লটের বাণিজ্যিক ব্যবহার রয়েছে।
চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানিসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলেছে।গত ১০ মে সকাল ৯টায় গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়ক এলাকার ভাড়াটিয়া আবু বকর ছিদ্দিক এর একমাত্র সন্তান সাব্বিরকে নিজ বাসা থেকে অপহরণ করে ভিকটিমের বাবার মোবাইলে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণও দাবি করে একটি চক্র। পরে উত্তরার ৯নং সেক্টরে পরিত্যক্ত একটি ফ্ল্যাট থেকে ভিকটিমসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে র্যাব।
এসকল বিষয়ে জানতে উত্তরা ৯নং সেক্টর কল্যান সমিতির সভাপতি শাহজাহান বলেন, ফুটপাত ও আবাসিক ভবনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুক্ত করতে আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালীদের কারণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি কল্যাণ সমিতিকে প্রতিবারই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন। এক্ষেত্রে আমরা সিটি করপোরেশন ও রাজউকে জানিয়েছি। কিন্তু তারাও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
৯ নম্বর সেক্টরে কোনো খেলার মাঠ না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা সময় এখানে খেলা মাঠ ছিল। বর্তমানে সে জায়গা প্রভাবশালীদের বহুতল ভবন হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশনের নিকট বহুবার আবেদন করেছি মাঠ দখল মুক্ত করতে কিন্তু কার্যত কোনো লাভ হয়নি। আমাদের “উত্তরা এসোসিয়েশন” এর নামে দেড় কাঠার একটা ক্লাব ছিল সেটাও রাজউক নিয়ে গেছে।
কল্যাণ সমিতির চাঁদাবাজি নিয়ে তিনি বলেন, কল্যাণ সমিতির সদস্যরা মাসিক হারে এলাকার ময়লা পরিস্কার করা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধে নাইট গাডদের ব্যয় মেটাতে চাঁদা নেয়। এটা প্রশাসন থেকে সবাই অবগত আছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের দুটি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।