ঢাকায় হবে ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল

ঢাকার যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, ওভারপাস এবং এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের সঙ্গে নতুন সংযোজন হবে পাতাল রেল। এটি নির্মাণের আগে প্রস্তুতি কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। জুলাই পর্যন্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক ডিজাইন তৈরির অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। ২০২১ সালের জুন নাগাদ এ কাজ শেষ হবে।
প্রথমে ঢাকায় ৯০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন ৯০ কিলোমিটারের পরিবর্তে পুরো ঢাকায় ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। ঢাকার মাটির ২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতাল রেল ছড়িয়ে পড়বে জালের মতো।
প্রথমে ঢাকার পাতাল রেল (সাবওয়ে) পথ নির্মাণের লক্ষ্যে চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন চারটি রুটের পরিবর্তে ঢাকার মাটির নীচের একাধিক পাতাল রেল রুট নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। ২২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সমীক্ষা পরিচালনা করার কথা থাকলেও ব্যয় বেড়ে ৩২২ কোটি টাকা হচ্ছে। ১৮ মাসের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে এ সমীক্ষা ২০২০ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন সমীক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে সবকিছু ঠিক থাকলে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে অথবা জিটুজি ভিত্তিতে মূল পাতাল রেল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় মেটানোর পরিকল্পনা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ঢাকার যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি (মাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালপথে এমআরটি-৬ নির্মিত হচ্ছে। এই দুটি মেট্রোরেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ঢাকায় পাতাল রেলের পূর্ণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। ফলে ৯০ কিলোমিটারের পরিবর্তে ২৩৮ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।প্রাথমিকভাবে ঢাকায় পাতাল রেলপথ (সাবওয়ে) নির্মাণের জন্য চারটি রুট চিহ্নিত করেছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো- এক. টঙ্গী-বিমানবন্দর-কাকলী-মহাখালী-মগবাজার-পল্টন-শাপলা চত্বর-সায়েদাবাদ-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত। দুই. আমিনবাজার-গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-টিএসসি-ইত্তেফাক ও সায়েদাবাদ পর্যন্ত। তিন. গাবতলী-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কাকলী-গুলশান-২-নতুনবাজার-রামপুরা টিভি ভবন-খিলগাঁও-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল ও কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত এবং চার. রামপুরা টিভি ভবন-নিকেতন-তেজগাঁও-সোনারগাঁও-পান্থপথ-ধানমণ্ডি-২৭, রায়েরবাজার-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ ও সদরঘাট পর্যন্ত।
প্রথম রুটের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৩২ কিলোমিটার। দ্বিতীয় রুটের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ১৬ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমে ঢাকায় ৯০ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করেছিলাম। এখন পাতাল রেল নির্মাণ সমীক্ষার কাজের পরিধি বেড়ে ২৩৮ কিলোমিটার হচ্ছে। ফলে পৃথিবির উন্নত শহরের মতো ঢাকা শহরে জালের মতো বিস্তার হবে পাতাল রেল।
নতুন সমীক্ষা রুটের নকশার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। টঙ্গী জংশন হয়ে গুলশান-মালিবাগ-সদরঘাটে একটি পাতালরেল রুট নির্মাণ করা হবে। এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ দশমিক ২৯ কিলোমিটার, মোট স্টেশন থাকবে ২৪টি। গাবতলী-মিরপুর-কুড়িল হয়ে পূর্বাচলে ১৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মাণ হবে। এই রুটে ১৫টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মহাখালী হয়ে কায়েতপাড়া রুটে ১৬ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রুটের পাতালরেল নির্মিত হবে। এই রুটে থাকবে ১৫টি স্টেশন। হাজারীবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন নির্মিত হবে।
কামরাঙ্গিরচর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। বসিলা-মালিবাগা রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৪ কিলোমিটার, স্টেশন থাকবে ১৩টি। গাবতলী-হাজারীবাগ থেকে শ্মশানঘাট রোড পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১৩টি স্টেশন থাকবে। গাবতলী-বাড্ডা হয়ে পূর্বাচল পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটারের একটি পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-গুলশান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি পাতালরেল নির্মাণ করা হবে, এই বিশাল রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। টঙ্গী জংশন-মহাখালী-মালিবাগ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৪টি স্টেশন থাকবে।
টঙ্গী জংশন-গুলশান-গুলিস্তান হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাতাল রেল নির্মিত হবে। এই রুটে ২৬টি স্টেশন নির্মিত হবে। কেরানীগঞ্জ-সায়দাবাদ হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। এই রুটে থাকবে ১৮টি স্টেশন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-মাতুয়াইল-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি পাতাল রেল রুট যাবে। এই রুটে থাকবে ৯টি স্টেশন। আরও কিছু রুট নির্দিষ্ট করতে নকশা করা হচ্ছে।