English Version
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৫:৪৬
সূত্র:

আমাদের একজন আনিসুল হক ছিলেন

আমাদের একজন আনিসুল হক ছিলেন

স্বপ্নবাজ এক মানুষ ছিলেন আনিসুল হক। তিনি নিজে সফলতার স্বপ্ন দেখতেন। অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসতেন। শুধু তাই নয়; সে সব স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেছেন। যিনি ৬৭ বছর ধরে বেদখল হওয়া রাস্তা উদ্ধার করেছেন মাত্র দু’দিনে। যার ছোঁয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আধুনিক শহরের রূপ নিয়েছে। বহুবিধ মানবিক গুণের অধিকারী আনিসুল হক সংগঠক, নেতা ও অভিবাবক সব ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব হবে তার দেখা সে স্বপ্নের রাজধানী গড়ে তোলা।

মানুষের জন্যে কাজ করতে ইচ্ছাটাই যে সবচেয়ে দরকারি তা প্রমাণ করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক। সুন্দর করে কথা বলা এই মানুষটি কাজ দিয়েও জয় করেছিলেন ঢাকাবাসীর মন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, আনিসুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

প্রবল বাধার মুখেও অটল থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা সড়কটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে পেরেছিলেন আনিসুল হক। প্রশস্ত মনোরম এই সড়কটি বলে দেয় কতটা দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন তিনি। তবে তিনি প্রয়াত হওয়ার পর মাঝে মাঝেই সড়কটি চলে যায় আগের অবস্থায়।

আনিসুল হকের পরিকল্পনায় করা এই ইউটার্ণগুলো যে কতটা কাজের তার প্রমাণ পাচ্ছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। সাতরাস্তা থেকে আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত এমন ১২ টি ইউটার্ণ করার কথা ছিল। আক্ষেপের বিষয় তার মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে।

আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ২০১৫ সালের ৬ই মে। ২০১৭ সালের আগষ্টে গুরুতর অসুস্থ হয়ে লন্ডনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় মারা যান। সব মিলিয়ে মেয়র হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র দুই বছর। এ সময়েই নগরবাসীর মধ্যে বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়া রাজধানী নিয়ে বিরাট আশার সঞ্চার করেছিলেন। তার সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি একজন অভিভাবক ছিলেন। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে জনগণ তাকে মনে রাখবে। তিনি অত্যন্ত অন্তরিক ছিলেন।’

যারা তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা জানেন জনগণের কাজে কতটা আন্তরিক ছিলেন আনিসুল হক। উত্তর সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা তার সাথে কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। তিনি টিমওয়ার্ক করতেন। কাজকে ভালো বাসতেন।’

শুধু কি নগরীর মেয়র হিসেবে। আনিসুল হক যেখানে যে দায়িত্বই পেয়েছেন সেখানেই দেখিয়েছেন তার ক্যারিশমা। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যে ক্ষেত্রেই তিনি তার ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই তার অসাধারণ নেতুত্বের স্বাক্ষর পেয়েছি। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি যে দৃষ্টান্তগুলো রেখে গেছেন, বর্তমান মেয়ররা আদর্শ পেয়ে গেছেন। তারা এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন, আরও এগিয়ে যাবেন।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আনিসুল হকের উত্তরসূরি বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম বললেন, কতটা গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আনিসুলের পরিকল্পনা। আনিসুল হক সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনকল্যাণে তিনি যতগুলো প্রজেক্ট নিয়েছেন প্রত্যেকটিকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি মনে করি আমাদের একজন সহকর্মী হিসেবে তিনি যে জনহিতকর কাজগুলো করে গেছেন সেটিকে আমরা মূল্যায়ন করে সেগুলোকে আমরা চালিয়ে যাব।’

আনিসুল হকের জন্ম নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে ১৯৫২ সালে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ নামে দুটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন। আনিসুল হক একজন সফল ব্যবসায়ীও।

১৯৮৬ সালে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজি যাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও তার ব্যবসায়ী গ্রুপের।

২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল এই সময়ে বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএরও সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ৬৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান। অল্প সময়ের কাজেই ঢাকাবাসী একজন ব্যতিক্রমি মেয়র হিসেবে আনিসুল হককে মনে রাখবে বহুদিন।