নতুন রূপে সাজবে রাজধানীর উত্তরা লেক
নিজস্ব প্রতিবেদক
গুলশান-বনানীর পরে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজতে যাচ্ছে রাজধানীর উত্তরা লেকটি। আর এই লেকটি সাজাবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। শিগগিরই এই প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
উত্তরা ৩ ও ৫ নম্বর সেক্টর থেকে শুরু হয়ে সোনারগাঁ জনপথ সড়ক ধরে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের সামনে পর্যন্ত বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার, প্রস্থ গড়ে ১০০ মিটার। এ প্রকল্পে লেক ঘেঁষে গড়ে ওঠা উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের পার্কটিও সংস্কার করা হবে।
লেকটি ৩ নম্বর সেক্টরের সেতুর নিচে, গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ অংশে ও সোনারগাঁ জনপথ অংশে সংকীর্ণ হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় জমে আছে ময়লা–আবর্জনা। পানিও বেশ নোংড়া। কিছু জায়গায় পাড় ভাঙা, তাই পাড় ধরে নির্বিঘ্নে হাঁটা যায় না।
রাজউকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লেকের দুই পাড়েই হবে দৃষ্টিনন্দন পায়ে হাঁটার পথ। ৩ নম্বর সেক্টরের সেতু ও গাউসুল আজম অ্যাভিনিউয়ের সেতু ভেঙে উঁচু সেতু বানানো হবে।
সোনারগাঁ জনপথ অংশে হবে বড় কালভার্ট। এসবের নিচ দিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সি চলার ব্যবস্থা থাকবে। পাড় দিয়ে হাঁটার পাশাপাশি পানিপথেও আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। উঁচু সেতুর কারণে যানবাহনও চলতে পারবে যানজট ছাড়া।
নানা সমস্যার কারণে ২০১৩ সালে লেকটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রাজউক। প্রাথমিকভাবে লেকের এক কিলোমিটার অংশ (৩, ৫ ও ৭ নম্বর সেক্টরের অংশ) খনন, বর্জ্য অপসারণ ও তীর সংরক্ষণের জন্য ২০১৪ সালে একটি প্রকল্প নেয় রাজউক।
প্রায় ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকার এই প্রকল্প ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের কাজই শুরু হয় ২০১৭ সালের শেষ দিকে। এখন প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রকল্প পাস হলেও উত্তরার লেক নিয়ে কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছিল না। ২০১৬-১৭ সালে উত্তরা লেক নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। মাস্টারপ্ল্যান হওয়ার পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে লেকের এক কিলোমিটার অংশের খনন, বর্জ্য অপসারণ ও তীর সংরক্ষণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
লেক সংস্কারের জন্য প্রায় এক একর জায়গা অধিগ্রহণ করতে চাইছে রাজউক। এই জায়গার মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় জমির জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জমি হস্তান্তরের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
লেক খননের সঙ্গে জড়িত এক শ্রমিক বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছিল। তিন মাসের মতো কাজ চলেছে। এরপর বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে আবার কাজ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত মোট কাজের ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এই প্রকল্পের পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, প্রকল্পটির কাজ চলাকালীন মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উত্তরা লেক সংস্কারের জন্য সংশোধিত একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। যাতে সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী পুরো সংস্কারকাজ একবারেই শেষ করা যায়।
তবে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে আরেকটি উন্নয়ন পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেটির কাজ চলছে। শিগগিরই নতুন পরিকল্পনা জমা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, খনন, বর্জ্য অপসারণ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে নতুন প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। প্রক্রিয়াধীন নতুন প্রকল্পটি হবে প্রায় ২০৮ কোটি টাকার।
নতুন এই প্রকল্পের আওতায় লেকের দুই পাশে ৮ ফুট চওড়া হাঁটার পথ, চারটি জায়গায় ঝুলন্ত হাঁটা পথ, একটি পদচারী–সেতু, দুটি বড় সেতু, একটি কালভার্ট, ছয়টি গণশৌচাগার, ২২টি ওয়াটার ডেক (পানির ওপর ঝুলন্ত বসার জায়গা), ১২টি হ্যাংগিং ডেক (আংশিক পানির ওপর ঝুলন্ত বসার জায়গা), দুটি ব্যায়ামের স্থান, চারটি ঝরনা, খাওয়ার পানির ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু কাজ করা হবে।
এ ছাড়া ১৩ নম্বর সেক্টর পার্কের পাশে লেকের ওপর হাতিরঝিলের আদলে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ বানানো হবে। এখানে উত্তরার বাসিন্দারা অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ পাবেন।
প্রপ্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লেকের পানি ধারণক্ষমতা বাড়বে, পানির গুণগত মান বাড়বে, পথচারীরা লেকের পাড়ে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি ওয়াটার ট্যাক্সির মাধ্যমে চলাচলের সুযোগ পাবে।
কাজ শেষ করার পর এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব উত্তরার সেক্টরভিত্তিক কল্যাণ সমিতিকে দেওয়া হবে। যাতে লেক নোংরা না হয় ও ব্যবহারকারীরাই লেকটির সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে পারেন। তবে প্রয়োজন হলে রাজউক সংস্কার করে দেবে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরার চেহারাই পাল্টে যাবে। হাতিরঝিলের মতো শুধু লেক দেখার জন্যও অনেকেই সেখানে ঘুরতে যাবেন।