English Version
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০১৮ ১৮:০৮

ঢাকা উত্তরে শতভাগ, দক্ষিণে ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা উত্তরে শতভাগ, দক্ষিণে ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ

ঘোষিত ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নগরীর শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসি প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা আজ বিকেল ৩টায় নগর ভবনে কোরবানীর বর্জ্য অপসারণ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ঘোষিত ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নগরীর ৯০ শতাংশ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন করেছে। সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আজ বেলা ২টার পর বর্জ্য অপসারণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

ঢাকা উত্তর : প্যানেল মেয়র বুধবার বেলা ২টায় উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে অস্থায়ী পশুর হাট থেকে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘নগরবাসীর সহযোগিতায় এ বছর কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনার মতো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পূর্ব ঘোষিত ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করতে পেরেছে।’ তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানিতে জনগণের সাড়া ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক। নির্ধারিত স্থানে পশু জবাইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, এ বছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এলাকাসমূহে প্রথমদিনে আনুমানিক ২ লাখ ১৫ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায় ১৮৩টি পশু জবাইর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া সরকারি ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন আবাসিক কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত ৩৬৬টি স্থানসহ মোট ৫৪৯টি স্থানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে।

প্যানেল মেয়র বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এবং প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহ সেবায় নিয়োজিত ভ্যান সার্ভিসের কর্মীরা মানুষের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) এবং কন্টেইনারে জমা করে প্রতিটি ওয়ার্ডকে বর্জ্যমুক্ত করেছে।

তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে ওয়ার্ড নম্বর ৭, ২৭ ও ৩১-এর কাউন্সিলররা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডকে কোরবানি পশুর বর্জ্যমুক্ত ঘোষণা করেছেন। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্যান্য ওয়ার্ডকেও বর্জ্যমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এসটিএস এবং নির্ধারিত স্থানে কন্টেইনারে বর্জ্য জমা হওয়ার পরপরই তা ল্যান্ডফিলে পরিবহনের কাজ শুরু হয়।

প্যানেল মেয়র বলেন, ১ হাজার ৫৪৫টি ট্রিপে ৮ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য ল্যান্ডফিলে পরিবহন করা হয়েছে। এই স্বল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক পরিচ্ছন্নতা কাজে ২৮০টি বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত ছিল। ডিএনসিসি থেকে কোরবানি বর্জ্য অপসারণে নিজস্ব ২ হাজার ৭শ’জন পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ সর্বমোট ৯ হাজার ৫শ’জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিরলস পরিশ্রম করে ঢাকা শহরকে আবর্জনা মুক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, এ বছর কোরবানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়। সেগুলো হলো-জনগণ আগের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, বর্জ্য ব্যাগ এবং ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার বেড়েছে,বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডিএনসিসির সক্ষমতা বেড়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং উদ্ভাবনী পদক্ষেপে জনগণ যত্রতত্র স্থানে কোরবানি করা হতে বিরত থেকেছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য ল্যান্ডফিলে সনাতনী ডাম্পিংয়ের পরিবর্তে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন, তারেকুজ্জমান রাজিব, ডা. জিন্নাত আলী, দেওয়ান আব্দুল মান্নান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা দক্ষিণ : ঈদের দিন বুধবার বেলা ২টা থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়ে নগরীতে কাজ শুরু করে।

মেয়র বলেন, ‘ঘোষণা দিয়েছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করা হবে। সেই কাজ অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় আজ এবং আগামীকালও কোরবানি হবে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বর্জ্য থাকবে ততক্ষণ পরিচ্ছন্ন কর্মীরা মাঠে থাকবে। শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে একটি বর্জ্যমুক্ত নগরী উপহার দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘ডিএসসিসির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ হাজার মেট্রিকটন কোরবানির বর্জ্য হবে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আগামীকাল শূক্রবার ও কোরবানি হবে, তাই কাক্সিক্ষত ২০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে শতভাগ পরিষ্কার করে নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেবো।’

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. শফিকুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দিন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ আহমদ এ সময় বলেন, বর্জ্য অপসারণে সিটি কর্পোরেশন সন্তোষজনক কাজ করেছে। এটি প্রশংসনীয় তবে নাগরিকরা কোরবানীর জন্য নির্ধারিত স্থানে কোরবানী করেননি। আশা করছি আগামীতে তারা এ বিষয়ে সচেতন হবেন।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, চেষ্টা করলে সম্ভব এটা মেয়র সাঈদ খোকন প্রমাণ করেছেন। তিনি গভীর রাত পর্যন্ত নগর ভবনে উপস্থিত থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন। আশা করছি অমীমাংসিত অন্যান্য সমস্যা নিরসনে তিনি তৎপর হবেন।