English Version
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০১৮ ০৭:০৬

গরমের শুরুতেই বিদ্যুৎ পানি গ্যাসে অস্বস্তি

অনলাইন ডেস্ক
গরমের শুরুতেই বিদ্যুৎ পানি গ্যাসে অস্বস্তি

যে তিনটি জিনিসের অভাবে নগরজীবন থমকে দাঁড়ায়, সেগুলো হলো বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস- এ তথ্য নগরে বেড়ে ওঠা শিশুটিও জানে, কারণ ভুক্তভোগী সেও। এই তিনটি অবশ্য সেই অর্থে আলাদাও নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পানি সংকটের দায় গিয়ে পড়ে লোডশেডিংয়ের ওপর। আবার লোডশেডিংয়ের দায় পড়ে গ্যাসের অপ্রতুলতার ওপর। কারণ যাই হোক, গরম এলেই নগরবাসীকে কমবেশি এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

এবার গরমের সেই ত্রাহি অবস্থাটা এখনো শুরু হয়নি কিন্তু বড় আকারে না হলেও বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস নিয়ে অস্বস্তি শুরু হয়েছে নগরবাসীর মনে। অসন্তোষ, ক্ষোভ নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এত উন্নতির মধ্যে নগরজীবনের এ তিনটি জরুরি বিষয় নিয়ে সরকার ভাবছে কি?

আসছে লোডশেডিং এবারের গ্রীষ্ম আসছে লোডশেডিংকে সঙ্গী করে। ঢাকাসহ দেশের প্রায় সর্বত্র এরই মধ্যে লোডশেডিংয়ের আলামত দেখা দিতে শুরু করেছে। কারণ সেই পুরনো, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত বছর গ্রীষ্মের লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার এ বছরের গ্রীষ্মের আগেই ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যাদেশ দিয়েছিল। সে অনুযায়ী চলতি মার্চ মাসে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেলচালিত কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। এখন জানা যাচ্ছে, সেগুলো চালু হতে মে মাস এসে যেতে পারে।

এ ছাড়া, ফার্নেস তেলচালিত প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাব্য সময় ছিল আগামী মে-জুনে। কিন্তু সেগুলোর সময়ও পেছাবে। সে কারণে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি নিয়েই মৌসুম শুরু করতে হবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে।

ইতোমধ্যে ঢাকার মিরপুর, লালবাগ, ঝিগাতলা, তেজগাঁওসহ অনেক এলাকায় শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিং। অন্য এলাকায় যে একেবারেই হয়নি তা নয়, মাত্রাটা এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে বলেই উচ্চবাচ্য শুরু হয়নি। ঢাকার বাইরেও লোডশেডিং চলছে বলে জানা গেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সূত্রে।

এবারের গ্রীষ্মে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর বিপরীতে যদিও পিডিবির (বিদ্যুৎ উৎপাদন বোর্ড) আশা, তারা এবার গ্রীষ্মে ১২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ১০ হাজার ৮৪ মেগাওয়াট।

যদি ধরেও নেওয়া হয়, পিডিবির পক্ষে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, তাহলেও গ্রাহকের কাছে পৌঁছাবে সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতেই ব্যবহার করতে হয় উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৫ শতাংশ। তা ছাড়া, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে অন্তত ১০ শতাংশ হয় পদ্ধতিগত লোকসান। এর ফলে ১২ হাজার থেকে প্রক্রিয়াগত কারণেই খরচ হয় প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। তাই শুরু হয়ে যাওয়া হালকা লোডশেডিংটা তীব্র হয়ে এবারের গরমটাও লোডশেডিংয়ের সঙ্গে কাটবে- তা বলাইবাহুল্য।

গ্যাসে একই সঙ্গে সংকট এবং মূল্য বৃদ্ধির আতঙ্ক ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত আল আমিন রোডের বাসিন্দা দীপু খন্দকার। তিনি বলছিলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই গ্যাস চলে যায়। এ চলে যাওয়া সারাদিনের জন্য। ভোরে উঠে রান্না করতে গিয়ে অনেক সময় ভাত হলে তরকারি হয় না আবার অনেক সময় তরকারি হলে ভাত হয় না। এ অবস্থা চলছে অন্তত মাসখানেক ধরেই।’ এমন অভিযোগের কথা ঢাকার অন্য এলাকাতেও শোনা যাচ্ছে।

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো জারি আছে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্ক। কারণ এমনিতেই নানা দিক থেকে দিন দিন নাগরিক জীবন ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এর মধ্যে এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, আগামী এপ্রিলে ব্যয়বহুল এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি শুরুর পর দেশজ গ্যাসের সঙ্গে তা মিশিয়ে বিক্রি শুরু হবে। ওই মাস থেকেই দেশীয় এবং আমদানিকৃত গ্যাসের দাম সমন্বয় করে নতুন এবং বর্ধিত দাম কার্যকর করতে চায় সরকার। তবে এ ব্যাপারে যে আইনি বাধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা কাটিয়ে কীভাবে মূল্যহার সমন্বয় করা যায় সেটি খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১ মার্চ থেকে গ্যাসের বর্ধিত দাম কার্যকর হয়। এ ছাড়াও দ্বিতীয় ধাপে সে বছরের জুন থেকে আরেকবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় তা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিল হাইকোর্ট। এত কিছুর পর এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করাটা সরকারের জন্যও কিছুটা অস্বস্তির। বর্তমানে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা করে দিতে হয়।

পানি নিয়ে দুর্ভোগ পানি নিয়ে সংকট হয়তো নেই কিন্তু দুর্ভোগ আছে। কথাটা স্ববিরোধী মনে হলেও রাজধানীর অনেক এলাকার অবস্থাটা এখন তাই। ট্যাপ ঘোরালেই পানি পড়ছে কিন্তু সেই পানি দিয়ে গোসলই চলছে না, খাওয়া তো অনেক দূরের কথা। পানি ফুটানোর পরও তা খাওয়ার উপযোগী হচ্ছে না, পানি থেকে বেরুচ্ছে উৎকট গন্ধ। ঢাকার মালিবাগ, শান্তিবাগ, গ্রিন রোডসহ অনেক এলাকায় বেশকিছু দিন ধরেই এমন অবস্থা চলছে। এসব এলাকায় এখন অনেকেই জারের পানি কিনে কাজ চালাচ্ছেন, যদিও এসব জারের পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে আগে থেকেই অনেক প্রশ্ন আছে।

ওয়াসার এ দুর্গন্ধযুক্ত পানি চোখে গেলে জ্বালা করে। বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ।

রাজধানীবাসীর জন্য ওয়াসা তাদের সরবরাহের বেশিরভাগটাই গভীর নলকূপ থেকে উত্তোলন করে। বাকি যে পরিমাণ পানি নদী থেকে আসে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য পানিতে ক্লোরিন মেশাতে হয়। এ ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি হলেও পানিতে দুর্গন্ধ হয়।