ঢাকার হাটে আসতে শুরু করেছে গরু

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। শর্ত অনুযায়ী, ঈদের তিন দিন আগে হাটে পশু তোলার কথা। কিন্তু ইজারাদাররা তা উপেক্ষা করে আগেভাগেই হাটে পশু তোলা শুরু করেছেন। সড়কের পাশাপাশি নৌপথেও আসছে গরু-ছাগল। ক্রমান্বয়ে ঢাকায় বাড়ছে গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। সড়কপথের পাশাপাশি গতকাল শুক্রবার নদীপথেও আসে গরু-ছাগল। বেশিরভাগই নামছে রাজধানীর গাবতলী হাট, আমিনবাজার ও আশুলিয়া পয়েন্টে। এ ছাড়া পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়েও নৌপথে অনেক গুরু আসতে দেখা যায়। এ ঘাটে ট্রলার থেকে নামিয়ে বেপারিরা গরু নিয়ে আশপাশের হাটে চলে যাচ্ছেন। ফলে রাজধানীর বেড়িবাঁধ, আমিনবাজার ও আশুলিয়া পয়েন্টে বাড়ছে ব্যস্ততা। বাড়ছে যানজটও। নৌপথে মাদারীপুর জেলার শিবচর এলাকার বেপারিরা বেশি গরু নিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।
সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এবার ১৬টি অস্থায়ী হাট ছাড়াও গাবতলীর একটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। পশুর হাটের মধ্যে প্রায় সবগুলোর ইজারা বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে সিটি করপোরেশনের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, ঈদের তিন দিন আগে হাটে পশু তোলার নিয়ম থাকলেও ইজারাদাররা তা উপেক্ষা করে আগেভাগেই হাটে পশু তোলা শুরু করেছেন। ইজাদারদের নিয়োগ করা লোকজন এবং পশুর বেপারিরা ছুটে বেড়াচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু এনে নিজেদের হাটে তোলার জন্য। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাষ্যমতে, ঈদের তিন দিন আগে রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসার কথা। কিন্তু পেশিশক্তি ব্যবহার করে ইজারাদাররা নিয়ম ভঙ্গ করে হাটে পশু তুলছেন। জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটের লাগাম শাসক দল অথবা তাদের ছত্রছায়াপুষ্ট লোকজনের হাতে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এর ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেননি। ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের নেতারা পারেননি প্রত্যক্ষ ইজারা নিতে বা নেপথ্য পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ভূমিকা রাখতে। অনেকটা প্রতিযোগিতাহীন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৭টি হাটের মধ্যে ১৪টির ইজারা পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বা তাদের মদতপুষ্টরা। তিনটি হাট পেয়েছে তিনটি ক্লাব, তবে ওইসব ক্লাবও এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা। এদিকে একাধিক হাটের ইজারাদাররা জানান, দেশে বন্যার কারণে রাজধানীতে আগেভাগেই কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। মূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেপারিরা গরু নিয়ে আসছেন। বিশেষ করে সাতক্ষীরা, যশোর, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারীসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে। এ ছাড়া দেশি গরুর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক ভারতীয় গরুও হাটে আসছে। গাবতলী হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য রাকিব ইমরান আমাদের সময়কে বলেন, এবার ঈদের আগের কয়েকদিনে অন্তত ১৪ লাখ গরু ঢাকায় আসতে পারে। এর মধ্যে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ গরু গাবতলী হাটে ঢুকবে। তিনি বলেন, ভারতীয় গরুর আমদানি বেশি হলে পশুর দাম কমে যাবে। তবে হাটে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরুর চেয়ে দেশি গরুর আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের হাটে যেসব গরু এসেছে তার বেশিরভাগই ১ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকার মধ্যে। পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মাথায় রেখে ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের গরুও বেপারিরা প্রতিদিন হাটে নিয়ে আসছেন। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে সবগুলো হাট গরু-ছাগলে ভরে যাবে, তখন বেচাকেনাও জমে উঠবে বলে তিনি জানান।