কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে রাজধানীর পশুর হাট

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীতে বসছে মোট ২৩টি পশুর হাট। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ১৪টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) বসছে ৯টি পশুর হাট। এসব হাটজুড়ে থাকবে আইনশৃঙখলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি পশুর হাট: খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া হাট, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধুপখোলার ইস্ট এ্যান্ড ক্লাব মাঠ, গোপীবাগ বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের মরহুম হাজি দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভেতর, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর বালুর মাঠ ও দনিয়া এবং সারুলিয়ায় একটি স্থায়ী হাট।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯টি হাট: খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মধ্যবর্তী সেতু সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ে খালি জায়গা, ভাষানটেক বেনারশি পল্লী মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, বাড্ডা, আশিয়ান সিটি হাউজিং, ভাটারা এবং গাবতলী পশুর হাট।
প্রতিটি হাটেই নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ক্যাম্প এবং ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। থাকবে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও। জালনোট শনাক্তকরণের জন্য থাকবে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন। এছাড়া কেউ যাতে বেশী হাসিল আদায় করতে না পারে সেজন্য হাটের সামনেই থাকবে পশুর হাসিলের নির্ধারিত হারের তালিকা।
হাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও থাকবে স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়া থাকবে জেনারেটরের ব্যবস্থা। হাটের ইজারাদাররা পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা করবেন। হাটের চৌহদ্দি বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হবে। সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ২০ আগস্ট রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিটি হাটে পুলিশ ক্যাম্প থাকবে। নির্দিষ্টস্থানে সিসি ক্যামেরা থাকবে। পশুর হাটে গরুর হাসিলের তালিকার চাট টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে। যাতে করে কেউ বেশী হাসিল আদায় করতে না পারে। কোরবানির পশুর হাটে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন থাকবে। এগুলো সমন্বয় করে সমস্থ হাট-বাজারে বসানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এর ব্যবস্থা নেবে।
২১ আগস্ট সোমবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সবার সমন্বয়ে কোরবানির পশুর হাট বসবে। ঢাকা শহরে অনুমোদিত ২৩টি পশুর হাট থাকবে কঠোর নজরদারির মধ্যে। পশুবাহী ট্রাক যে কোনো হাটে যেতে পারবে। কোনো ধরনের বাঁধা প্রদান করা যাবে না। প্রতিটি ট্রাকের সামনে গন্তব্য স্থানের ব্যানার ঝুলিয়ে দেবেন ব্যবসায়ীরা। এক হাটের পশু অন্য হাটে জোর করে নামানো যাবে না। ঈদে পশুর হাট চলবে তিন দিন। এর আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।
পশুর হাটে হাসিলের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পশুর হাট মনিটরিং করা হবে। পুলিশের মানি স্কট সুবিধা ছাড়া নগদ অর্থ বহন করা যাবে না। ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হকার হাট এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘পশুর হাটের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকে ও পোশাকধারী পুলিশ সদস্য থাকবেন। ইজারার চৌহদ্দির বাইরে কোনো অনুনোমোদিত হাট বসতে দেয়া হবে না। নির্ধারিত সময়ের আগে পশুর হাটে পশু আনতে হবে। প্রতিটি হাটে থাকবে পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। পশুর হাটে ও হাটের আশপাশে জনসচেতনতামূলক ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে প্রচার করতে হবে। জাল টাকা শনাক্তকরণে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে থাকবে মেশিন। হাট এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় মনিটরিং করা হবে।
রাজধানীতে প্রবেশের আগে বিভিন্ন জায়গায় পশুর ট্রাক আটক করে চাঁদাবাজির ঘটনার অভিযোগ আসে প্রতিবছর। সেজন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যতীত কোন পশুবাহী ট্রাক আটক করবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যতীত কোন পশুবাহী ট্রাক আমরা থামাবো না। চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারী, মলমপার্টি সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান চলছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
সড়ক-মহাসড়কে পশুর হাট বসানো যাবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক, পরিবহণ সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ২০ আগস্ট রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে পশুর হাট বসানো যাবে না। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে যেন পশুর হাট এমন স্থানে বসানো না হয় যাতে করে মানুষের চলাচলে সমস্যা হয়।
এদিকে কোরবানী পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। রোববার সচিবালয়ে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর এ দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে ২০ থেকে ২২ টাকা, বকরির চামড়ার দাম সারাদেশে ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘চামড়া ব্যবসায় মন্দা। হাজারিবাগে ১৫৫টি চামড়া শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। সাভারে গেছে এগুলো। এ মাসের মধ্যে ১০০ টি চালু হবে। ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে এবার চামড়ার দাম বাড়ানো হয়নি। আগের দামই রাখা হয়েছে।