হকার ও হিজরায় অতিষ্ঠ চন্দ্রিমা উদ্যানের দর্শনার্থীরা

চন্দ্রিমা উদ্যান (পূর্বে জিয়া উদ্যান) রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি এখানে অবস্থিত। সমাধিকে কেন্দ্র করে এখানে মাজার কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এ মাজার দেখতে আসেন। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি উত্তম স্থান। ঢাকা শহরের উদ্যানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। কর্মব্যস্ত দিন শেষে একটু ফুরসত পেলেই রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলসহ রাজধানীর বাইরে থেকে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসে উদ্যানে। ঘুরতে আসা অনেকেই হয়রানির শিকার হন উদ্যানে ভাসমান হকার ও হিজরাদের দ্বারা। দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের সামনে হয়রানির শিকার হলেও তারা নিশ্চুপ। সরেজমিনে দেখা যায়, একটি সঙ্গবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি দর্শনার্থীরা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, হয়রানির ঘটনা ঘটে অহরহ।জোরকরেই দর্শনার্থীদের কোমল পানীয়ের বোতল দেন হকাররা।কেউ নিতে না চাইলে করেন অশ্লীল গালিগালাজ ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি। সাধারন একটি কোমল পানীয়র দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হলেওহকাররা জোরপূর্বক আদায় করেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।মান সম্মানের ভয়ে অনেকই দিয়ে দেন সেই টাকা।মিরপুর থেকে আসা সবুজ মিয়া জানান, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন,নিতে না চাইলে এক হকার জোর করেই তাকে দুটি কোমল পানীয়র ক্যান দেন, বিনিময়ে তাকে দিতে হয় ২০০ টাকা যার আসল মূল্য ৭০ টাকা। শ্যামলী থেকে আসা নব দম্পত্বি জানান তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্গিত ঘটনা । তাদেরও ক্যান দেওয়া হয় জোরপূর্বক।তারা টাকা দিতে না চাইলে হকাররা জোট হয়ে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করে এবং বাধ্য হয়েই তিনি টাকা দেন। পার্কে আসলে হকাররা ক্যান দিবেই এবং কোন হকার বাসায় গিয়ে দেন না বলেও শাষান তাদের।
উদ্যানে নিয়মিত হাটতে আসা মোজাম্মেল হোসেন জানান,এমন ঘটন তিনি প্রায়ই লক্ষ্য করেন। তিনি বলেন,মানুষ প্রাণ খুলে শ্বাস নেবার জন্য , আনন্দ উপভোগের জন্য আসেন উদ্যানে ,কিন্তু অনেকেই হকারদেরদ্বারা নাজেহাল হয়ে ফিরে যান এবং এই ঘটনা গুলো আনসারদের চোখের সামনে ঘটলেও তারা থাকেন নিশ্চুপ, টাকার একটা অংশ আনসার সদস্যরাও পান বলে তিনি দাবী করেন।
অন্যদিকে উদ্যানে হিজরাদের দৌরত্ব আরো চরম পর্যায়ে। এক দুইটি ছোট গোলাপ দিয়ে জোরপূর্বক হাতিয়ে নেন ৫০ থেকে ১০০ টাকা।টাকা না দিতে চাইলে দল বেঁধে শুরু করেন মানসিক নির্যাতন ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি। বাধ্য হয়েই দিতে হয় টাকা। বান্ধবীকে নিয়ে পুরাণ ঢাকা থেকে উদ্যানে ঘুরতে আসা সাগর জানান ১ টি গোলাপ ফুল দিয়ে হিজরারা তার কাছ থেকে জোরপূর্বক নিয়েছে ১০০ টাকা। মান সম্মানের ভয়ে মুখ বুঝে সহ্য করেছেন।আনসার সদস্যদের জানালেও তারা মুচকি হেসে বলেন ওদের ও (হিজরাদের) তো চলতে হবে, ১০ /২০ টাকা দিবেন, ক্ষতি তো নেই।তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী রাব্বি জানান, হকার ও হিজরারা মূলত টার্গেট করে কাপোলদের ,তারা জানে কাপোলরা কোন ঝামেলায় যাবে না ,অনেক সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।আনসার সদস্যরা একটা ভাগ পান হকারদের ও হিজরাদের কাছ থেকে ,তাই তারা সব দেখেও না দেখার ভান করে।এছাড়া পার্কে নিয়মিত আসা কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে কথা বললে তারাও একই কথা জানান।
এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কোন আনসার সদস্য কথা বলতে রাজি হননি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য জানান ,হিজরারা সুবিধাবঞ্চিত, তারা ২/৪ টাকা নেন, তাই তারা কোনবাঁধা দেন না।তারা কোন কমিশন পান কিনা জানতে চাইলে অস্বীকার করেন তিনি।হকারদের বিষয় জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান এবং দ্রুত প্রস্থান করেন।
হকার ও হিজড়া মুক্ত উদ্যান চান উদ্যানে আসা দর্শনার্থীরা। তারা দাবি করেন আনসার সদদের গাফিলাতির জন্যই হকাররা সুযোগ পায় এবং এর জন্যই য়ারা পান আনসার সদস্যরা।অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,এমন চলতে থাকল বাধ্য হয়েই উদ্যানে ঘুরতে আসা ছেড়ে দিতে হবে। তাদের এবং সেই সাথে এই কর্মকান্ডের সুরাহা চান দর্শনার্থীরা।
প্রাচীরের মধ্যে বেড়ে উঠা কঠিন। আমি তরুণ বয়স কম। আজকে আমার কিছুই নেই, তবে হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও সেটা পরের কথা। আমি দেখতে পেলাম অনেককে আমার উপরে বা সাথে নিয়ে দৌঁড়াতে হবে। আমার উন্নতি নির্বর করে তাদের উন্নতির উপর। আমি বেড়ে গেলেও তাদের না বাড়া আমাকে বঞ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। ছোটদের ‘পাকনামি’ বেড়ে যাওয়া বড়দের অসম্মানের ব্যাপারটা শতভাগ যৌক্তিক। ‘পার্থক্যটা দৃশ্যমাণ রেখেই আগানো শ্রেয়’ আপনার করা অনেক বাস্তব গল্প থেকেই জেনেনি।
আমি ২০ পেলে কেউ কেউ ‘অসন্তুষ্ট’। তাদের এটা দিতে হবে। আমি বুঝলাম, নতুনসময়ে আমার ‘উন্নতি’ তাদের উন্নতির উপর নির্বর করে।