তুরাগে তীব্র গ্যাস সংকট

মোঃ ইলিয়াছ মোল্লাঃ রাজধানীর তুরাগে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসের দেখা মিলছে না অনেক এলাকায়। তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, শীত এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সার কারখানাগুলো চালু হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু এত সংকট হওয়ার পিছনে রয়েছে অবৈধ সংযোগ। কিছু এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আধাঘণ্টাও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণত সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা, কোনো কোনো এলাকায় বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। আবার কোথাও সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকে না। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জরুরি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে দৈনিক গড়ে ৩০-৪০টি অভিযোগ আসছে।
এদিকে, আবাসিকের পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেক সিএনজি স্টেশন । ধউর, রাজা বাড়ী, কামারপাড়া, নয়ানগর, ডিয়াবাড়ী, নলভোগ, চন্ডাল ভোগ, রানা ভোলা সহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানার উৎপাদনও বিঘ্নিত হচ্ছে গ্যাসের চাপ ঠিক না থাকায়।
ধউর এলাকার বাসিন্দা মোঃ খলিল মিয়া, অভিযোগ করেন দিনে আধা ঘণ্টার মতো গ্যাস পাওয়া যায়। সেটাও পুরোপুরি পাওয়া যায় না। তিনি জানান, আমাদের এলাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ ও সিলিন্ডার দিয়ে রান্নার কাজ করতে হয় আমাদের। আর যাদের এই ব্যবস্থা নেই, তারা মাটির চুলায় রান্না-বান্নার কাজ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নয়ানগর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী লিজা আক্তার বলেন, গ্যাস নিয়ে এখন আমাদের সঙ্গে সরকার তামাশা করছে। রাত জেগে রান্না করে, দিনের বেলায় কেরোসিন তেল দিয়ে স্টোভ জ্বালিয়ে কখনওবা সিলিন্ডারের চুলায় তা গরম করে খেতে হয়। সকাল ৭টার আগেই গ্যাস চলে যায়। ডিয়া বাড়ীর বাসিন্দা তুলি আক্তার জানান, সকালে কোনো রকম গ্যাস থাকলেও বেলা ৬টার পর থেকে কমতে থাকে। তখন চুলা জ্বলে মিটমিট করে। ফলে রান্না-বান্নার কাজ আগেই শেষ করে রাখতে হয়। রানা ভোলা এলাকার গৃহিণী ফাতেমা বলেন, গ্যাসের সমস্যার কথা বলে লাভ নেই। সকালে কোনো রকম রান্না-বান্না করতে পারলেও দুপুরের পর থেকেই করুণ অবস্থা তৈরি হয়। সিএনজি স্টেশনসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানায়ও গ্যাসের সংকট রয়েছে। শিল্প মালিকদের দাবি- আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিল্প-কারখানাই গ্যাসভিত্তিক।
তারা আরো জানান, গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের চলমান শিল্প উৎপাদন ইতিমধ্যে তিন ভাগের একভাগ কমে গেছে। তবে গ্যাসের উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। তাদের মতে, শীতকালে এমনিতেই গ্যাসের পাইপলাইনে প্রেসার কম থাকে। ফলে হঠাৎ করেই গ্যাসের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে গ্যাসের দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে দৈনিক ২ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। বর্তমানে দৈনিক চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৩০০ ঘনফুট। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ।
গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, শীতকালে গ্যাসের কিছু সমস্যা থাকে। অবৈধ লাইনের কারণে বৈধরা ভোগান্তিতে আছেন। তিনি বলেন, পাঁচজনের খাবার দশজনে খাইলে যেটি হয়, তা-ই হচ্ছে । গ্যাস সংকট নিয়ে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর এই প্রতিবেদককে বলেন, শীত আসলেই পুরানো লাইনের উপর তৈরি করা স্টেশনগুলো গ্যাসের সংকটে পড়ে। তিনি জানান, সারাদেশে গ্যাসের যে চাহিদা তার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ গ্যাস তারা ব্যবহার করেন।
এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, রাজধানী এবং আশপাশের এলাকায় তিতাসের প্রায় ২০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে আবাসিক প্রাহকের সংখ্যা বেশি। রাজধনীর এসব গ্রাহকের চাহিদা ২৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১৭০০ ঘনফুট গ্যাস।
তিনি জানান, শীতে একটু গ্যাসের সংকট থাকে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারকারখানাগুলো চালু হওয়ায় এ সমস্যা তীব্র হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।