আইসিসিবিতে ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল উৎসব

রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক ঘেঁষে বিশ্বরোডের উড়াল সেতু থেকে পূর্বদিকে নেমে কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়বে আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন কেন্দ্র। একটি নয়, চার-চারটি সুবিশাল কেন্দ্র। প্রতিটির স্থাপত্যশৈলীই নান্দনিক। প্রাসাদসম কেন্দ্রগুলোর নামও কাব্যিক—নবরাত্রি, পুষ্পগুচ্ছ, রাজদর্শন ও গুলনকশা। সুদৃশ্য ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই হাতের বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে ‘পুষ্পগুচ্ছ’। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে এই মিলনায়তনে প্রবেশ করতেই দেখা গেল তাক লাগানো দৃশ্য। ৩০ হাজার বর্গফুটের সুপ্রশস্ত মিলনায়তনে সারি সারি সাজানো নানা আকারের স্টল। স্টলগুলোয় শোভা পাচ্ছে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নানা সামগ্রী। কী নেই তাতে? বিখ্যাত ব্র্যান্ডের শাড়ি, থ্রি পিস, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিকস দ্রব্যাদি, প্রসাধনসামগ্রীসহ কেনাকাটার নানা উপকরণ। ঈদের কেনাকাটা করতে যারা বিদেশে যায় এবং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যারা একই উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে পারে না, তাদের জন্য হাতের নাগালেই এবার বিদেশের সেরা ব্র্যান্ডের সব সামগ্রী। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার পুষ্পগুচ্ছ মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ভিন্নধর্মী ঈদ-কেনাকাটার মেলা। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান ফ্যাশন হাউস ও লাইফস্টাইল-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এর আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ইরানের খ্যাতনামা ২৪টি প্রতিষ্ঠান। আয়োজকরা আশা করছেন, এর পর থেকে প্রতিবছরই ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত হবে এই উৎসব। স্টলগুলোর পাশেই রেড কার্পেটের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ। তাতে আলো ছড়ান বসুন্ধরা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জমকালো এই আয়োজনে ১৮ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান। ফিতা কেটে উদ্বোধন শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি উৎসবের সফলতা কামনা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস ও মিডিয়া-বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব হায়দার খান, আইসিসিবির হেড অব অপারেশন এম এম জসিমউদ্দিন প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে অতিথিরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। আন্তর্জাতিক এই উৎসবে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্গানিক হারভেস্ট, পিস কসমেটিকস, এএম ফেব্রিকস, স্টাইল জোন, ভিস্তা, ইমেজ স্কিন কেয়ার, রূপ রেখা, পাকিস্তানি আউটফিট, কাশ্মীর স্মাইল, জেইন অ্যাপিয়ারেল, ফ্যাশনডটকম, এসএ হারবাল, মেহজাবিন, প্রেস কুকার কোং, অ্যালয় অ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই উৎসবের দুটি দিক রয়েছে। আমাদের দেশের অনেকে দেশের বাইরে কেনাকাটা করতে যান। তবে সাধ থাকা সত্ত্বেও যাঁরা যেতে পারেন না তাঁদের জন্য এখানে থাকবে দারুণ সুযোগ। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশের ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে। তাতে উপকৃত হবে দেশের ফ্যাশন অঙ্গন। দেশীয় পোশাকের চাহিদা তৈরি হবে দেশের বাইরেও।’ তিনি আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগেও রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন কেন্দ্রের বড় অভাব ছিল। বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে সেই অভাব আর নেই। বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি আইসিসিবি এখন দেশের আন্তর্জাতিক উৎসবগুলো আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।’ ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আবাসন প্রকল্প দিয়ে শুরু করেছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। তবে আবাসন সংকটের সমাধানই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য নয়। গ্রুপটি দেশ ও মানুষের কল্যাণে নানা নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, বাস্তবায়ন করেছে নতুন নতুন পরিকল্পনা। প্রতিষ্ঠানটি যে উদ্যোগই নিয়েছে, বাংলাদেশের জন্য এক স্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশাল জায়গা নিয়ে চারটি কনভেনশন সেন্টার হবে, এ ধারণা বাংলাদেশে কারো ছিল না। বসুন্ধরা তা করেছে। বসুন্ধরাই বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশের ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল অঙ্গনে যে উৎসবের আয়োজন করেছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়।’ উৎসবের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে এম এম জসিমউদ্দিন উৎসব আয়োজনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই লক্ষ করছিলাম, দেশে আন্তর্জাতিক মানের কোনো ফ্যাশন উৎসব নেই। লাইফস্টাইল-বিষয়ক উৎসব নেই। এ অবস্থায় উৎসব আয়োজনে এগিয়ে এসেছে আইসিসিবি। প্রথম আয়োজনেই দেশ-বিদেশ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করি, আগামী বছর এ উৎসবে পৃথিবীর নানা দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।’ আয়োজকরা জানান, উৎসবে প্রতিদিনই উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের বিখ্যাত মডেল, ফ্যাশন ডিজাইনার, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের খ্যাতিমান তারকরা। এখানে কেনাকাটার পাশাপাশি থাকবে তারকাদের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগও। তারকাদের মধ্যে রয়েছেন তিশা, মিম, মেহজাবীন, নুসরাত ফারিয়া প্রমুখ। উৎসবের প্রথম দিনেই মেলায় এসেছিলেন উত্তরার গৃহিণী সাজিয়া জামান চৌধুরী। ঘুরে ঘুরে তিনি ঈদের কেনাকাটা সারেন। থাইল্যান্ডের একটি ফ্যাশন হাউস থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ কিনতে কিনতে তিনি বলেন, ‘একই জায়গায় এত বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের জিনিসপত্র রয়েছে, সত্যিই অভাবনীয় ব্যাপার।’ উৎসব প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।