English Version
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:৪০

বই বিক্রির রেকর্ড গড়ে বইমেলার সমাপ্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বই বিক্রির রেকর্ড গড়ে বইমেলার সমাপ্তি

 

অবশেষে শেষ দিনটি এসেই গেল। লিপ-ইয়ারের কারণে একদিন বেশী চালু  থাকার পর আজ শেষ হলো পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের মেলবন্ধনের অমর একুশে বইমেলা। বইকে ঘিরে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে প্রাণের স্পন্দন মিলবে আবার ১১ মাস পর।

সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করে আয়োজক বাংলা একাডেমি। শেষ দিন সোমবার দুপুর ১টা থেকে শুরু হওয়া মেলা চলে অন্যান্য দিনের মতো রাত ৮টায়। নিরাপত্তায় প্রাধান্য দিয়ে সাজানো বড় পরিসরের মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে কম হলেও বিক্রিতে রেকর্ড হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এবার মেলায় ৬৫১টি ইউনিটে মোট ৪০১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে বইমেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানায় বাংলা একাডেমি। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ১৫টি, চার ইউনিটের স্টল ১৯টি, তিন ইউনিটের স্টল ৩৭টি, দুই ইউনিটের স্টল ১৩৪টি ও এক ইউনিটের স্টল ১৯৬টি। এর বাইরে বহেরা তলায় ছিল লিটল ম্যাগের ৯০টি স্টল। এবারের মেলায় নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৪৪৪টি, যা গতবারের ৩ হাজার ৭০০টির তুলনায় ২৫৬টি কম। তবে বিক্রিতে রেকর্ড হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে একাডেমি কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, স্টলগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ বছর মেলায় মোট বই বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা, যা গতবার ছিল ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং ২০১৪ সালে ১৬ কোটি টাকা।

আগের বছর একজন লেখক ও প্রকাশক হত্যার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তায় প্রাধান্য দিয়ে এবার মেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ থাকলেও এর মধ্যেই মেলার ২২তম দিনে ‘প্লাটফর্ম’ নামক স্টলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়।ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় আগুন দেওয়ার চেষ্টাকারী দুজনের ছবি পাওয়ার কথা পুলিশ জানালেও এখনও কারও ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এর দুদিন পর বৃষ্টি ও ঝড়ের ঝাপটায় মেলা প্রাঙ্গণের অনেকগুলো স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভিজে যায় বহু বই। ওই দিন নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘন্টার মাথায় মেলা শুরু হলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এক ঘন্টার মাথায় বন্ধ ঘোষণা করেন আয়োজকরা। বৃষ্টির ক্ষতি পোষাতে পরদিন মেলার সময়ে কিছুটা পরিবর্তনের ঘোষণা দেয় তারা। ২৬ ও ২৭তম দিনে মেলার ফটক খুলে সকাল সাড়ে ১০টায়, ২৮তম দিনে বেলা ২টায় এবং শেষ দিনে দুপুর ১টায়। তবে মেলা শেষের সময় প্রতিদিনই ছিল রাত ৮টা। তবে শুরুর সময়ে এভাবে সময় বাড়ানোতে কোনো ‘লাভ’ হয়নি অভিযোগ করে তারা শেষ সময়ে অর্থাৎ রাত ৯টা পর‌্যন্ত বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন।

অন্যদিকে, প্রকাশকরা বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আগামী বছর থেকে নিজেরাই মেলা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। বাংলা একাডেমি তাদের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও আগামীবার থেকে মেলা কাদের আয়োজনে থাকছে সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। বই প্রকাশ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে বইমেলায় প্রকাশনা সংস্থা ব-দ্বীপ এর স্টল বন্ধ করে দিয়ে অনেকগুলো বই বাজেয়াপ্ত করা হয়। এরপর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন বইয়ের প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিকসহ তিনজন। রিমান্ডশেষে এখন তারা কারাগারে আছেন। স্টল বন্ধের প্রতিবাদে বইমেলার প্রবেশমুখে মানববন্ধনও হয়েছে।

লেখক-প্রকাশক ও পাঠকের এ মেলার প্রথম দিকে গত বছর উগ্রবাদীদের চাপাতির কোপ প্রাণ হারানো লেখক অভিজিৎ রায় ও প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের স্মরণে কোনো আয়োজন না রাখার সমালোচনা মুখে পড়ে বাংলা একাডেমি।এক পর্যায়ে দীপনের বন্ধুরা তাকে স্মরণ করে এবং বিচারের দাবি জানিয়ে মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন টানায়।২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিও অনেকটা দায়সারাভাবে এক মিনিট নীরবতায় অভিজিৎ রায়কে স্মরণ করে।

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া নো গেলেও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই বিক্রি ছিল শীর্ষে।তার ভাই প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের বই বিক্রির সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া না গেলেও তার বেশির ভাগ বইয়ের প্রকাশক অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন মেলার পুরো সময় ছিল সরগরম।

এছাড়া ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে আসা দেবব্রত মুখোপাধ্যয়ের লেখা ‘মাশরাফি’, প্রথমা থেকে আসা আনিসুল হকের ‘জেনারেল ও নারীরা’, অন্যপ্রকাশ থেকে আসা হরিশংকর জলদাসের ‘একলব্য’, অনন্যা থেকে আসা ইমদাদুল হক মিলনের ‘জিন্দাবাহার’, জার্নিম্যান বুকস থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকার খাল পোল ও নদীর চিত্রকর’, তাম্রলিপি থেকে আসা গুলতেকিন খানের প্রথম কবিতার বই ‘আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম’ বইও ভালো বিক্রি হয়েছে বলে প্রকাশকরা জানান। 

এবারের বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই দ্বিগুণ প্রকাশিত হয়েছে। গতবার যেখানে ৫৩টি মুক্তযুদ্ধের নতুন বই এসেছিল, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়ে ১০১টিতে। কমেছে কম্পিউটার বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বললেও বইমেলায় তার ছোঁয়া পাওয়া যায়নি। এবার কম্পিউটার বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা মাত্র ৯টি।

মেলার শেষদিন সন্ধ্যায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ, একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। মেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জালাল আহমেদ। পুরস্কার বিতরণী শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফরিদা পারভীন।