English Version
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৭:১৮

উল্টোপথে পুলিশের গাড়ি; সহপাঠীর মৃত্যুতে সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
উল্টোপথে পুলিশের গাড়ি; সহপাঠীর মৃত্যুতে সড়ক অবরোধ

 

উল্টোপথে গাড়ি চালানোর মত এমন অসভ্য অনৈতিক কাজ বাংলাদেশের ঢাকা শহর ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় কিনা সন্দেহ আছে।  কোন সভ্য দেশে উল্টো পথে গাড়ি চলার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। যাদের কাজ জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করা, সেই পুলিশের গাড়িই উল্টো পথে চলে আমাদের দেশে। আর সরকারী মন্ত্রী-এমপি-আমলারা তো এটা প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করেছেন। বেআইনি ও অসভ্য এই কাজটি আমাদের দেশে এতটাই প্রকাশ্যে চলে যে বিষয়টি এখন আমাদের রীতিমতো চোখে স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পুলিশের এই জঘন্য কর্মের বলি হলেন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজউদ্দিন।

গতকাল সোমবার এক বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে কাকলী মোড় থেকে নেভি সদর দপ্তরের দিকে যাওয়ার পথে সোমবার দুর্ঘটনার শিকার হন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজউদ্দিন অপু (২৬)। উল্টো পথে থাকা পুলিশের রিকুইজেশন করা একটি বাসের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। এসময় তার বন্ধুও আহত হন।

রিয়াজউদ্দিন পড়াশোনার পাশাপাশি এক মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। পড়াশোনা আর কাজ একসঙ্গে করে ২৫ বছরের যে যুবকটি নিজেকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমে পড়েছিল, সেই রিয়াজউদ্দিনের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছু বলার আছে কি! এই হত্যাকাণ্ডের দায় নেবে কে? সেই মিনিবাসের চালক নাকি যে বাহিনীর সদস্যরা এই মিনিবাসটি ব্যবহার করছিল সেই পুলিশ? পুলিশকে বহনকারী মিনিবাসটি তো জেনে শুনেই উল্টো পথ ধরেছিল, আর রিয়াজউদ্দিনের মোটরসাইকেল যেদিক দিয়ে আসার কথা সেদিক দিয়েই আসছিল। এটাকে দুর্ঘটনা বলার সুযোগ কই?  এই ঘটনার প্রতিবাদে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শ্যামলীতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু মেলার মাঝামাঝি জায়গায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত বিক্ষাভ করেন। তাদের অবরোধের কারণে আসাদ গেইট থেকে গাবতলীর দিকের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাস-টেম্পো থেকে নেমে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন।

আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ঘটনার সুষ্টু তদন্ত চাই। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক।

বেলা পৌনে ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণের জন্য শনিবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে রাস্তা থেকে সরে যায়। অবশ্য পুলিশের রিকুইজেশন করা ওই বাসের চালককে সোমবারই গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয় বলে বনানী থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন খান নিশ্চিত করেছেন।পরে

ঢাকা শহরে বসবাসরত সবাই জানে যে ক্ষমতাবানদের গাড়িগুলোই সাধারণত উল্টোপথে চলে। সরকারী আমলাদের মত পুলিশও ক্ষমতাবান, তাই তাদের গাড়ি নিয়মিত উল্টো পথে চলে। তারা সরকারের মন্ত্রী বা ভিআইপিদের গাড়িও উল্টো পথে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। আইনের রক্ষকেরা সবার সামনেই নিয়মিত আইন ভেঙে চলেছেন। উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে আইন ভাঙছেন আইন প্রণেতারা, সরকারের বড় বড় কর্মকর্তারা।