১৪ ফেব্রুয়ারী ভালবাসা দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে পুলিশি পাহারায় প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ইভেন্টের ডাক দিয়েছিলেন প্রয়াত প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ পূত্র অনন্য আজাদ এবং তার বন্ধু সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী এবং শাহবাগের স্লোগান কন্যা শাম্মী হক। রোববার সকাল ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ ধরনের স্লোগানের উপর ভিত্তি করে প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্যে আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু এই কর্মসূচীতে শেষ পর্যন্ত কাউকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

জার্মান-প্রবাসী অনন্য আর শাম্মীর এই আয়োজনের রুখে দিতে আওয়ামী ওলামা লীগ ও হেফাজতে ইসলাম কঠোর বক্তব্য দিয়েছিল। ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি ইভেন্ট খোলা হয়। এই ইভেন্টে ১১ হাজার আমন্ত্রিত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় আড়াইহাজার উপস্থিত থাকার কথা নিশ্চিত করেন এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার জন এই ইভেন্টে আগ্রহী ছিলেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কোথাও দেখা যায়নি প্রকাশ্যে চুমুর কোন ঘটনা। সেই ইভেন্টটিতে শুধু প্রবাসী শাম্মী আখতার আর অনন্য আজাদের চুমুর ছবি প্রকাশ করা হয়। তবে স্থানটি প্রকাশ্য কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ইভেন্টটির বিরোধীতা করে অসংখ্য ব্যাবহারকারী আজেবাজে ও অশ্লীল মন্তব্য করেন। এমনকি শাম্মী হকের নামে একটি ভূয়া সেক্স ভিডিও আপলোড করেন। যদিও ইভেন্টের এডমিনরা ভিডিওটি মুছে দেয়। এছাড়াও দেয়া হয় নানা হুমকি ধামকি।
প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ইভেন্ট নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক উদীচীকর্মী আরিফ নূর তীব্র ভাষায় তার আইডিতে একটি পোস্ট আপডেট করেন।
তিনি লিখেন, শাম্মী ও অনন্য……… এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন। বাংলাদেশে কি আর কোন সমস্যা আপনারা খুঁজে পেলেন না! প্রকাশ্যে চুমু খেতে না পারাটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা? যে দেশের মানুষ তার মৌলিক অধিকার গুলোই এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। যেখানে রাস্তা-ঘাটে হাজার হাজার শিশু না খেতে পেয়ে মারা যায়। যেখানে মেয়দের শিক্ষার হার ৫০% এর কম। যে দেশের ধর্মান্ধ মানুষ গুলো এখনও সাঈদীর মত রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পায়। যেখানে বই লেখা ও প্রকাশের দায়ে লেখক প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তেমন একটি দেশে আপনারা এমন একটি ইভেন্টের ডাক দিয়েছেন এটা সত্যি হাস্যকর।

শাম্মী-অনন্যর দেশ ত্যাগ করে বিদেশ গমনকেও তীব্র সমালোচনা করে আরিফ নূর লিখেন, তাও যদি নিজেরা এ ইভেন্টে উপস্থিত থাকতে পারতেন তবে ভাবতাম, আপনারা অনেক সাহসী, অনেক বড় দেশ প্রেমিক। দুই একদিন রাস্তায় কে আপনাদের পিছনে হেটেছে আর অমনি লেজ গুটিয়ে জার্মানী চলে গেলেন। ওখানে বসে হয়তো বাঘের মত গর্জন করছেন তা আমাদের কানে আসতে আসতে শেয়ালের হাক হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন এমন অসখ্য ইভেন্ট খুলে বসে থাকা যায় কিন্তু একটা ধর্মান্ধের চাপাতির সামনে দাঁড়িয়ে ওর ছানি পড়া চোখে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকতে বুকে সাহস লাগে। এ দেশ তোর নয় এদেশ আমাদের। চিৎকার করে এ কথা বলতে বুকে দম লাগে যা আপনাদের নেই। পালিয়ে গিয়ে ভাল থাকেন এই কামনাই করি। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যদের হুমকির মূখে ঠেলে দিবেন না দয়া করে।
এদিকে শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য গণমাধ্যমকে জানায়, তারা এ বিষয়ে কোন রকম কার্যক্রমের খবর পাননি। তবে জার্মানি থেকে কয়েকজন ব্লগার এধরনের আহবান জানালে মিডিয়ায় বেশ হৈ চৈ হয়। ওই পর্যন্তই। কোনো প্রেমিক প্রেমিকা প্রকাশ্যে চুমু খেতে হাজির না হলেও অদূরে টিএসটিস চত্বর থেকে শুরু করে শাহবাগ, রমনা পার্কে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে প্রেমিক প্রেমিকারা ফুল বিনিময় করেছে, আলাপচারিতায় মশগুল ছিল। কিন্তু প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বিরোধিতার নামে ইভেন্টে এধরনের অশ্লীল গালাগালি আর শাম্মী-অনন্যকে নিয়ে নোংরামি করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেসবুকের প্রগতিশীল গোষ্ঠী। অনেকে এই গালিবাজ বিকৃতমনাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রকাশ্যে চুমু’র অপর ভেন্যু জাহাঙ্গীর নগরেও ছিল একই অবস্থা। সেখানে ব্যাপক সংখ্যক যুগলের উপস্থিতি থাকলেও, তাদের প্রকাশ্যে চুমু খেতে দেখা যায়নি।