কোমর ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী কিছু টিপস

একটি সাধারণ কিন্তু কষ্টদায়ক রোগ হলো কোমর ব্যাথা। কম-বেশি সবারই কোনো না কোনো সময় কোমরে ব্যাথার সমস্যায় ভূগতে হয়। বিশেষত যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন, এমন মানুষের বেশিরভাগই কোমরের ব্যথায় ভোগেন। পুরুষের তুলনায় মহিলারা একটু বেশি ভোগেন কোমর ব্যথায়।
অনেকে চিকিৎসা করিয়েও এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো উপকার পান না। ব্যথার প্রাথমিক দিকে যদি নির্মূল করতে পারা না যায় পরে রোগীকে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে যন্ত্রণাদায়ক এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কোমর ব্যাথা নিরাময়ের জন্য বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বনও প্রয়োজন:
রোগনির্ণয়: কোমরের কিছু পরীক্ষা রয়েছে। ফরোয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা, ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা। নিউরোলজিক্যাল ডিফিসিয়েন্সি আছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়। কোমরের এক্স-রে এবং এমআরআই করতে হবে। রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা হয়। ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা, ইউরিক এসিডের পরিমাণ, শরীরে বাত আছে কি না,এসব পরীক্ষা করতে হয়। ক্রনিক ব্যাক পেনের ক্ষেত্রে এইচএলএবি, ২৭ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা: কোমরের ব্যথার ধরন ও কারণ দেখে-বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয়। সাধারণত তিন ধরনের চিকিৎসা হয়ে থাকে:
১. মাংসপেশীর সমস্যার জন্য ফিজিক্যাল মেডিসিন। ২. হাঁড়ের সমস্যার জন্য অর্থোপেডিক্স। ৩. স্নায়বিক সমস্যার জন্য নিউরোমেডিসিন।
এক ধরনের সমস্যার জন্য অন্য ধরনের চিকিৎসা করলে ব্যথাতো সারেই না বরং বড় ধরনের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়।
প্রতিদিন শারীরিক কিছু কসরত বা নির্দিষ্ট কিছু ব্যয়াম করলেই কোমরের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এ ধরনের কিছু ব্যায়াম:
১. দেয়ালের কোণে গিয়ে এক পা সামনে এক পা পেছন দিয়ে দাঁড়ান। পেছনের হাঁটু সোজা রেখে সামনে ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে সামনের দুই পাশের দেয়ালে ধাক্কা দিন। এতে পায়ের কাফ মার্সেল টান পড়বে।
২. সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেকোনো এক হাঁটু ভাঁজ করে ওই পায়ের গোড়ালি মাটির সঙ্গে লাগাতে চেষ্টা করুন। এতে ঊরুর সামনের মাংসপেশিতে টান পড়বে।
৩. টুল বা বেঞ্চের ওপর এক পা সোজা করে রেখে পায়ের পাতা এক হাত দিয়ে নিজের দিকে টানতে হবে। এতে ঊরুর পেছনের মাংসপেশিতে টান লাগবে।
৪. ডান হাঁটু ভাঁজ করে বসে বাম পায়ের পাতা সোজাভাবে ফ্লোরে রাখুন। এরপর সামনে ঝুকুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন। এতে হিপের সামনের মাংসপেশি টান হবে।
৫. এক পায়ের সামনে অন্য পা ক্রস করে চাপ দিন। এতে ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ডে টান পড়বে।
৬. প্রথমে সতর্কতার সঙ্গে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার কনুইয়ের ওপর ভর করে বুক ও মাথা খুব ধীরে ধীরে ওপরে ওঠান। প্রতিবেলায় ছয় বার করুন। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ অবস্থা থেকে দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে মাথা ও বুক তুলুন, যেন তলপেট বিছানায় লাগানো থাকে। পাঁচ সেকেন্ড এভাবে থাকুন ব্যায়ামটি ১০ বার করুন।
এসব বিষয়ে সচেতন থাকুন:
১. ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না। ২. ভারী জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন। ৩. পিঠের ওপর ভারী কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করুন। ৪. ১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না। ৫. হাঁটু না-ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। ৬. দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল পরবেন না। ৭. অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন। ৮. দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট ব্যবহার করুন। ৯. গাড়ি চলানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসুন। ১০. আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না। ১১. সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না। ১২. কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন। ১৩. এমনভাবে বসুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে। ১৪. নরম গদি বা সিপ্রং যুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসবেন না। ১৫.উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙা খাট, ফোম বা সিপ্রংয়ের খাটে শোবেন না।
আমাদের দেশে কোমরে ব্যথার একটি বড় ধরন হচ্ছে এরগোনমিক্স সমস্যার জন্য বা স্থানীয়ভাবে আঘাতের ফলে সৃষ্ট মাংসপেশীর ব্যথা। এ ক্ষেত্রে ছোট আঘাত বা অল্প ব্যথার জন্য অবস্থা বুঝে ঠান্ডা-গরম সেক দেওয়া ও সম্পূর্ন বিশ্রাম খুবই ফলপ্রদ, প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্ট-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আর বড় আঘাত বা খুব বেশী ব্যথার ফিজিক্যাল মেডিসিন-এর চিকিৎসকের পরামর্শ জরূরী।