সাংবাদিকরা যে কোনো শিরোনামে সংবাদ ছাপতে পারেন?

একজন মানুষকে আশ্রয় লাভের সুযোগ করে দেওয়া সেই মানুষটির রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। মানুষটির যদি আশ্রয় থাকতো তবে সে নিশ্চয় রাস্তায় শুয়ে ঘুমাতে যেত না। ঘরের ভেতর নিরাপদ আশ্রয়ে, নরম বিছানায় ঘুমাতো। রাস্তায় শুয়ে ঘুমানো নিশ্চয়ই অনেক আরামের ব্যাপার নয়। অথচ একটি পত্রিকায় দেখলাম একটি ছবির নিচে শিরোনা দেওয়া হয়েছে এরকম “সড়কে নির্বিকার শয্যা” ছবির নিচে লেখা হয়েছে-“ব্যস্ততম প্রধান সড়ক। অনবরত চলছে যানবাহন। অসাবধান হয়ে সড়ক পারাপারে রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকি। তবে এ এলাকায় প্রায়ই সড়কে নির্বিকার শয্যা পাতার দৃশ্য চোখে পড়ে।
কেউ কেউ বলে ওরা মানসিক বিকারগ্রস্ত। অনেক সময় বিপদের কথা মাথায় রেখে তাদের সরিয়ে আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের খেতে হয় হিমশিম। ছবিটি গতকাল বনানী এলাকা থেকে তোলা।”
মাত্র ক’দিন আগে আমাকে কথা প্রসঙ্গে একজন জিজ্ঞাসা করছিলেন, সাংবাদিকরা কি ইচ্ছা করলেই যে কোনো শিরোনামে সংবাদ ছাপতে পারেন? আমার জবাবটা তাকে আজ দিচ্ছি। জবাবটি হলো, “না”। সাংবাদিকরা ইচ্ছা হলেই যা খুশি শিরোনাম দিয়ে সংবাদ ছাপতে পারেন না। যার জ্বলন্ত উদাহরণ এই ছবির শিরোনামটি।
সাংবাদিকরা ইচ্ছা হলেই যা খুশি তা শিরোনাম করতে পারেন না তার কারণ হলো, সাংবাদিক হতে হলে ভালো-মন্দ বোধ এবং বিশেষ করে জনগণের পক্ষে থাকার বোধ ও সর্বোচ্চ আইন তথা সংবিধানের প্রতি বোধ থাকা জরুরী। একবার আইন ও সালিশ কেন্দ্র আয়োজিত সাংবাদিকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে সংবিধানকে ধরে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলাম কথাটি।
বলেছিলাম, সাংবাদিকদের একটি বড় কাজ হলো আইডিয়া জেনারেট করা। আর আইডিয়া জেনারেট করতে গেলে নীতি সম্পর্কে ধারণা থাকাটা জরুরী। নীতির বাইরে কিছু গেলেই সেটা নিউজ হতে পারে। আর ব্যাপারটিতে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি সহায়ক হবে আমাদের সংবিধান।
কারণ, সংবিধান জানা থাকলে খুব সহজে বুঝতে পারা সম্ভব কোনটি নীতিসংগত আর কোনটি নীতি সংগত নয়। তখন সহজেই আইডিয়া জেনারেট করা সম্ভব পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো নিউজের ব্যাপারে।
এবার একটু আসা যাক উপরের ছবি, তার শিরোনাম এবং সাংবাদিকতার নীতি প্রসঙ্গে। ছবিটির শিরোনাম এমনভাবে লেখা হয়েছে তা পড়ে সবার কি মনে হবে জানি না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যেন ফুটপাতে শুয়ে থাকা খুব আরামদায়ক কাজ। আর এ কাজটি দেশের অন্যতম মাদক জাতীয় কিছু। যা গ্রহণ করা থেকে কিছুতেই কিছু মানুষকে থামানো যাচ্ছে না। তাই “তাদের সরিয়ে আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের খেতে হয় হিমশিম”।
আমাদের সংবিধানে ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়: (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা।”
অর্থাৎ একজন মানুষকে আশ্রয় লাভের সুযোগ করে দেওয়া সেই মানুষটির রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। মানুষটির যদি আশ্রয় থাকতো তবে সে নিশ্চয় রাস্তায় শুয়ে ঘুমাতে যেত না। ঘরের ভেতর নিরাপদ আশ্রয়ে, নরম বিছানায় ঘুমাতো। এটা অন্তত এমন শিরোনাম করা সাংবাদিকদের বোঝা উচিত। বিটির শিরোনাম হতে পারতো, “সড়কে অসহায় মানুষের রাত্রিযাপন” ধরনের।