সিনড্রোম মনো দৈহিক সমস্যা

শরীরের সর্বাঙ্গে যত ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা আছে, তার মধ্যে অন্যতম ফাইব্রোমাইয়ালজিয়া সিনড্রোম। অনেকে টেনডন, বারসা, স্নায়ু বা মাংসপেশির প্রদাহ এ রোগের কারণ বলে মনে করেন। বেশিরভাগ গবেষকই এটি মনো দৈহিক সমস্যা বলে বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু এ প্রদাহ কেন হয়, তা কেউ বলতে পারেননি। সাধারণত ২৫-৪৫ বছর বয়সী নারীদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। তবে পুরুষের যে হবে না, এমন নয়। অনেক শিশুর মধ্যেও এ ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা যায়।
প্রধান উপসর্গ : সারা শরীরে ব্যথা, বিশেষ কিছু স্থানে চাপ দিলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া, ব্যথায় সারা শরীর জমে থাকা, শরীর ভারী লাগা, বিষনতা, ম্যাজম্যাজ করা, বিশেষ করে সকালে রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, কাজে অনীহা, অনিদ্রা বা অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি।
এ রোগের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপসর্গের অস্থায়িত্ব ও ভিন্নতা কখনো ব্যথা আছে কখনো নেই, কখনো এখানে বেশি ব্যথা, তো কখনো ওখানে বেশি ব্যথা। আড্ডা বা কাজে ব্যস্ত থাকার সময় ব্যথা কম অনুভূত হয়। ব্যথা অনেক সময় আবহাওয়া ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। ভেজা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া ও বদ্ধ পরিবেশ, বেশি শব্দে কাজকর্ম, মানসিক চাপ, এমনকি ঋতুস্রাবের আগে ব্যথা বেশি অনুভূত হতে পারে।
হতাশা ও দুশ্চিন্তা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা বা দূরে থাকা, পারিবারিক অশান্তি এ রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
চিকিৎসা : এ রোগের প্রধান উপসর্গ ব্যথা হলেও ব্যথা কমানোর ওষুধ বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধে ব্যথা কমানো যায় না। এ রোগ একেবারে সারিয়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। প্রথমেই রোগীকে বোঝাতে হবে এবং আশ্বস্ত করতে হবে, ফাইব্রোমাইয়াল সিনড্রোম কোনো মারাত্মক ব্যাধি নয়, যদিও ব্যথার দীর্ঘ স্থায়িত্বে অনেকের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হয়। এ রোগে শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। রোগীকে কখনো বলা যাবে না, আপনার কোনো রোগ নেই, সব রিপোর্ট ভালো, আপনি অসুখের ভান করছেন। এটি অবশ্যই একটি রোগ এবং এর চিকিৎসাও আছে।
রোগীকে তার নিকটজনদের কাছ থেকে মানসিক সান্তনা ও সাপোর্ট পেতে হবে। চিকিৎসককেও হতে হবে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। এ রোগের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অ্যারোবিক ব্যায়াম খোলা বাতাসে মুক্ত পরিবেশে হালকা ব্যায়াম। প্রাথমিকভাবে ব্যায়াম করলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, রোগীকে এটি বুঝতে হবে এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ক্রমে অগ্রসর হতে হবে। যেমন প্রথমে হাঁটা, তারপর সাঁতার কাটা, ব্যায়ামের সাইকেল চালানো ইত্যাদি। নির্দিষ্ট মাত্রার কিছু ব্যায়াম করতে হবে। ক্রমে গতি বাড়িয়ে দিতে হবে।
ব্যায়ামের সাইকেল প্রতিদিন ২০ মিনিট চালালেই যথেষ্ট। ব্যায়াম শুরুর আগে হার্ট বা ফুসফুসের কোনো সমস্যা আছে কিনা, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। ব্যায়ামের সময় রোগী নিজেই দেখে নেবেন তার পালস প্রতি মিনিটে কত হয়? এটি বয়সভেদে ভিন্ন হতে পারে। হিসাব করার সহজ নিয়ম হলো ২২০ থেকে বয়স বিয়োগ করে তার আশিভাগ যে কোনো অবস্থায় সর্বোচ্চ পালসের হার হবে। সব রোগীর জন্য সব ধরনের ব্যায়াম উপযোগী নয়। যে রোগীর জন্য যে ব্যায়াম উপযোগী, আরামদায়ক ও গ্রহণযোগ্য তাকে সেটিই গ্রহণ করতে হবে।
কিছু অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট জাতীয় ওষুধ খেলে, ব্যায়াম করলে এবং এর ঝুঁকি বহনকারী উপকরণগুলো জীবন থেকে পৃথক করতে পারলে এ রোগ থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন সম্ভব।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা