সন্তানের মানসিক বিকাশে কর্মজীবী মায়ের করণীয়

শিশুর বড় শিক্ষক মা। মায়ের হাত ধরেই শিশুর প্রথম মানসিক বিকাশ ঘটে। মায়ের দৈনন্দিন জীবন-যাপন রীতি দ্বারা প্রভাবিত হয় সন্তান। এক্ষেত্রে কর্মজীবী মা তার সন্তানের মানসিক বিকাশ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা কিভাবে রাখবে, আসুন তা জেনে নিই।
বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন প্রতিটা শিক্ষিত নারীই হয়ে উঠছেন কর্মজীবী। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণে সন্তানের সঠিক পরিচর্যা হচ্ছে না বলে অনেকেই মনে করছেন। এই ধারণা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নয়।
কর্মজীবী মা সন্তানের সঙ্গে কম সময় কাটালেও তার সন্তানের মানসিক বিকাশে তিনি যথারীতি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। এক্ষেত্রে মাকে একটু কৌশলগত দিক অবলম্বন করতে হয়। তাকে যেসব বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে, সেগুলো এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
পরিবারে অন্যদের সচেতন করা- কর্মজীবী মা দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বাইরে থাকায়, এ সময় শিশু পরিবারে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটায়। যাদের সঙ্গে শিশু থাকে তারা শিশুর সঙ্গে কেমন আচরণ করবে তার একটা গ্রুমিং করে রাখতে হবে। পরিবারের সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা খুবই জরুরী।
সন্তানদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা- কর্মজীবী মা দিনের প্রধান সময়টা ব্যস্ত থাকায়, সন্তান নিজের প্রতিদিনের খুঁটিনাটি কাজ যেমন স্কুলে যাওয়া, গোসল করা ইত্যাদি সন্তানকে নিজে থেকেই করে নিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে মায়ের উচিত হবে, তার ভেতর আত্মনির্ভরশীলতার ইতিবাচক মনোভাব জাগিয়ে তোলা। যাতে করে নিজের কাজ নিজে করার সময় সে মায়ের অভাববোধ না করে, বরং নিজের কাজ নিজে করছে ভেবে আত্মতৃপ্তি পায়।
সন্তানকে দায়িত্বশীল করে তোলা- কর্মজীবী মা দিনের বেলা বাইরে থাকেন, তাই সারাদিন বাসায় সময় কাটানোর একটা মোটামুটি গাইডলাইন সন্তানের জন্য তৈরি করে রাখতে হবে। হোমওয়ার্ক শেষ করা, টেলিভিশন দেখা, নিয়মিত খাবার খাওয়া, গেমস খেলা—এগুলো সন্তান যেন একটা নিয়ম মেনে করে।
জেন্ডার-নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি- মা পেশাজীবী হলে অনেক সময় সন্তান মাকে কাজ না করে ঘরে থাকার জন্য আবদার করতে পারে। বন্ধুদের মায়েরা কাজ করে না বলে উদাহরণ টানতে পারে। এক্ষেত্রে মায়ের উচিত সন্তানের মাঝে জেন্ডার-নিরপেক্ষ মনোভাব সৃষ্টি করা। তাদের বোঝানো নারী হোক, পুরুষ হোক, সকলের উচিত স্বাবলম্বী হওয়া।
নিয়মানুবর্তিতার চর্চা- মা বাসায় না থাকলে সন্তান নিজের কাজগুলো নিজে করতে করতে নিয়মানুগত হয়ে ওঠে। এই ধরনের অভ্যাস সন্তানকে সময় সচেতন এবং নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ছোটবেলা থেকে নিয়ম-কানুন মেনে চলার রীতি সন্তানকে পরবর্তী জীবনে সাফল্য পেতে সাহায্য করে।
স্বাধীনচেতা মনোভাব তৈরি- যে পরিবারে মা অফিস-আদালতের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকেন সে পরিবারের সকল সদস্যদেরই স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনচেতা প্রকৃতির হয়ে থাকে।
নিজের সমস্যা নিজে সমাধান- কর্মজীবী মায়ের উচিত হবে সন্তানদের নিজেদের সমস্যা নিজে সমাধান করার ব্যাপারে উৎসাহী করে তোলা। এর ফলে মায়ের অনুপস্থিতিতে কোনো বিপদ আসলে সেটি মোকাবেলা করার জন্য তারা তৈরি থাকবে।
কিছু বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান দান- কর্মজীবী মায়ের উচিত হবে তার সন্তানদের কিছু বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান দিয়ে রাখা। যেমন কোনো কারণে বাসায় আগুন ধরে গেলে কি করতে হবে, গ্যাসের চুলা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম, বৈদ্যুতিক গেজেটে বা খুঁটিনাটি ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ শেখানো কিংবা সেগুলো থেকে একেবারেই দূরে রাখা। স্বাস্থ্যগত কিছু বিষয়েও জ্ঞান দিয়ে রাখতে হবে। হঠাৎ জ্বর আসলে, বমি বমি মনে হলে, মাথা ব্যথা করলে কি ধরনের সেবা নিবে তার একটা আউটলাইন শিশুদের মাঝে থাকা উচিত।
মায়েদের সাবধানতা- কর্মজীবী মায়েদের উচিত হবে পাশের ফ্লাটে এবং বাসার সিকুউরিটি গার্ডকে অবগত রাখা, সন্তান যেন যখন তখন বাইরে না যায়। অপরিচিত কেউ যেন বাসায় ঢুকে না পড়ে। বাসায় কাজের মেয়ে বা ছেলে থাকলে তারা যেন শিশুকে নিয়ে বাইরে বের না হয়। এমন অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনে দিনে কয়েকবার ফোন করে শিশুর আপডেট নিতে হবে।
শিশুকে কর্মক্ষেত্রে না নেয়া- কর্মজীবী মায়ের উচিত হবে শিশুকে তার কর্মক্ষেত্রে না নেওয়া। নিয়মিত বড়দের কর্মক্ষেত্রে শিশুদের নেওয়া হলে তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। তাছাড়া এতে করে মা মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারেন না। অফিসে ঊর্ধ্বতন অফিসারের মনে অসন্তোষ জাগে। এছাড়াও অফিসের পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হতে পারে।