কথা ও কাজ দুদিকেই হাত যার

আমাদের সমাজে মানুষের সংখ্যার পরিমান বেশি কিন্তু গুণের পরিমান কম। গুণ অর্জন করে নেয়ার বিষয়। আর তাতে প্রয়োজন হয় পরিশ্রমের। কথায় ও কাজে সে পথের সেতুবন্ধন করে যাচ্ছেন মনোয়ার হোসেন রিভেল।
তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক, সংগঠক, উদ্যোক্তা ও সৃষ্টিশীল পজেটিভ থিঙ্কার। মনোয়ার হোসেন রিভেল বিশ্বাস করেন যে কোনো কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব থাকতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার মেধা, মনন, শ্রম ও সৃজনশীলতা। তবেই কাজে সফলতা আসবে।
মনোয়ার হোসেন রিভেল রংপুরে একটি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী পরিবারে সন্তান। পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা তত্ত্ব বিভাগে, এরপর তিনি সুইজারল্যান্ডের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেছেন। এছাড়াও তিনি আই ভেঞ্চার লিমিটেড ( ইমপ্রেস গ্রুপের একটি কনসার্ন) সহ দেশি-বিদেশি একাধিক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
আজকে এ অবস্থান সস্পর্কে রিভেল বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে আমার বাবা-কস্ট্রাকশন ব্যবসা, চাচাদের ওষুধ, চাল, কীটনাশক ও রেস্ট্রুরেন্ট ব্যবসায় ছিল। ফলে আমাদের পরিবারে প্রধান আয়ের মাধ্যম ব্যবসা। ২৮ বছরের পারিবারিক ব্যবসার ঐতিহ্য আমরা লালন করছি। সেখান থেকেই মূলত নিজে কিছু করার জন্য আমি অনুপ্রেরণা পাই। এ ছাড়া বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের বিজনেস রিপোর্টার হিসেবে কাজের সময়টাতে আমি এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই ও বিভিন্ন বিজনেসের ইভেন্ট কাভার করতাম। তখন আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কথা শুনতাম। বুঝতে পারতাম এই মানুষগুলো অন্য মানুষদের থেকে আলাদা। তারা যে সফল এটি তাদের কথা–বার্তা চাল-চলন ও আত্মবিশ্বাস থেকে বোঝা যেত। তারা যে তাদের ভাগ্য নিজেরাই গড়েছেন এটি শুনে আমি খুবই অনুপ্রাণিত হতাম।
সফলতার জন্য কাদের আইকন হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন?
আমার জীবনে বেস্টওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, একে আজাদ, ডিসিসিআইয়ের সাবেক চেয়ারম্যাস সবুর খান, পিএইচপি চেয়ারম্যাবন সুফি মিজানুর রহমান, ইমপ্রেসের ফরিদুর রেজা সাগর, মেঘনা গ্রুপের আসিফ ইকবাল সাহেবসহ অনেকের কথা ও কাজ অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। বিদেশী সফল মানুষদের মধ্যে ভার্জিন গ্রুপের রিজার্ড ব্রানসন, আলীবাবার জ্যাক মা, ইসভেস্টমেন্ট গুরু ওয়োরেন বাফেট ভারতের ধীরুভাই আম্বানির জীবনী আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমিও ভাবতে শুরু করি মানুষ নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। আমার স্ত্রী আমাকে সবসময় বলতেন তুমি একসময় অনেক বড় বিজনেসম্যান হতে পারবে। কাজের সূত্রে আমার অনেক সেক্টরে যে পরিচিতি বা নেটওয়ার্ক অর্জন হয়েছে তা সৎভাবে কাজে লাগিয়ে আমি নিজেই প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারি এ বিশ্বাস তৈরি করতে আমার স্ত্রী অনেক উৎসাহ দিয়েছে।
বর্তমানে কি কি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন?
আমি ইমপ্রেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আই ভেঞ্চার লিমিটেডের পার্টনার ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে বিপিও বিজনেস করছি। এডিসন ফাউন্ডেশন ও সাফারা ব্রান্ডের আইটি, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটওয়্যার, এগ্রো, সোলার ও পোল্ট্রি সেক্টরে হিসেবে কাজ করছি। আমার নিজের উদ্যোগে কিছু প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে যাচ্ছে যেগুলোর উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমি নিজেই। এর মধ্যে রয়েছে অর্গানিক ফ্রেশ ব্রান্ডের চাল, ডাল ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। রকেট ব্রান্ডের ইলেকট্রোডস রড ও কসমেটিকস। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিপিও সেক্টরের প্রতিষ্ঠানের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বিপিও ও কল সেন্টার শুরু হলে আমি সিএমও হিসেবে কাজ করি। সর্বশেষ ডিরেক্টর ও সিওও হিসেবে একাধিক বিজনেস পরিচালনা করি। এর আগে আমি যাদরো গ্রুপের যাদরো আইপি ও যাদরো বিপিওতে সিওও হিসেবে কাজ করেছি। যাদরো এখন সিসিটিভি ও সিকিউরিটি আইটেমে খুবই শক্তিশালী ব্রান্ড হিসেবে দেশে শক্ত অবস্থান করেছে। এখন আমরা বিদেশে সিসিটিভি রপ্তানি করছি। বর্তমানে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের জন্য একটি বিশেষায়িত পত্রিকা ফার্মাটাইমসের সম্পাদনা করছি আমি। তবে ব্যবসার শুরুতে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বেস্টওয়ে গ্রুপে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টে কাজ শুরু করি।
আইটি সেক্টর নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
বাংলাদেশের আইটি সেক্টর এখন অনেক শক্তিশালী। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান এই দেশকে ১০০ বছর এগিয়ে নিয়েছে। কিন্ত ইন্টারনেট এখন সহজলভ্য নয়, এটি একটি প্রতিবন্ধকতা। দেশের অবকাঠামো নির্মাণে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আইটিতে দক্ষ লোকবল তৈরি হয়েছে এখন প্রয়োজন সমন্বিত ব্রান্ডিং যেন পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশকে মানুষ আইটির জন্য সেরা দেশ হিসেবে মনে করে।
বাংলাদেশে আইটি সেক্টরের ভবিষ্যত কেমন দেখছেন?
আগামীর বাংলাদেশ আসলে আইটি সেক্টরের জন্য স্বর্ণযুগ। তবে এই সেক্টরটি খুবই পরিবর্তনশীল তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, মেশিন লানিং, অ্যাডটেক, ফিনটেক, রোবোটিক্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি ডেটা সায়েন্স, মেকাট্রনিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি সেইসাথে প্রাকটিক্যালিও এসব বিষয়ে কাজের জন্য অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। তাহলেও আমরা বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবো।
আইটি সেক্টরকে আরো দ্রুত উন্নয়নে লক্ষে আপনার পরামর্শ কি?
আরও বেশি দক্ষ জনবল, বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইটি সেক্টরে ব্যাংকিং ফাইন্যান্স। অবকাঠামো উন্নয়ন। ইন্টারনেটকে সহজলভ্য করা সর্বোপরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরী। আর জ্ঞানে বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ মানুষ তৈরি না হলে সমৃদ্ধ জাতি তৈরি হয়না। ইউরোপের মানুষরা উন্নত কারণ তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত। তারা পড়াশোনাতে অভ্যস্ত। সে জায়গায় আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। তাই প্রতিটি বাড়িতে একটি করে লাইব্রেরি থাকা উচিত। বইয়ের স্বাদ যে জাতি পায়না। সে জাতির জন্য উন্নতি অনেক দূরের জিনিস বলে আমার মনে হয়।
আই ভেঞ্চার কি এবং এটা কিভাবে কাদের সঙ্গে কাজ করছে?
আই ভেঞ্চার লিমিটেড ( ইমপ্রেস গ্রুপের একটি কনসার্ন) আমরা ইউকে, সুইজারল্যান্ড ও চেক রিপাকলিকে সফটওয়্যার রপ্তানি শুরু করেছি। এছাড়াও আমাদের বিপিও কোম্পানি ইউএসএ ও অস্ট্রেলিয়ার মার্কেটে কাজ করছে।
তরুণদের প্রতি আপনার কি উপদেশ থাকবে?
পরিশ্রম, সততা এবং একাগ্রতা এতিনটি গুণ যার মধ্যে যত বেশি তার সফলতার প্যারামিটার ততবেশি উন্নত। মনে রাখতে হবে ব্যবসার সবচেয়ে বড় পুঁজি সততা। ব্যবসা করতে গেলে শুধু মুনাফার দিকে খেয়াল রাখলে হবে না। আপনি যে ব্যবসা করেন না কেন সৎ থাকতে হবে।